নয়া দিল্লি: দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা উদ্ধারের অভিযোগে তোলপাড় গোটা দেশ। আর এই ঘটনাই এবার চাঞ্চল্যকর মোড় নিল। গোটা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। 


নজিরবিহীনভাবে দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচাপতির দেওয়া সেই রিপোর্ট এবার সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হল। বিচারপতি বর্মার বাংলোর যে স্টোর রুম থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই স্টোর রুমের ছবি ও ভিডিও সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়ছে। 


ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দমকল বিভাগের কর্মীরা আগুন নেভানোর পর স্টোর রুমের বিভিন্ন অংশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন । আর তাতেই দেখা যাচ্ছে প্রচুর সংখ্য়ক নোটের মতো দেখতে পোড়া সামগ্রী মেঝেতে পড়ে রয়েছে। সেগুলো সরিয়ে দেখছেন দমকলের কর্মীরা। 


এই ছবি ও ভিডিও ১৪ তারিখ অর্থাৎ দোলের দিনের। বিচারপতি বর্মার বাড়িতে যখন আগুন লাগে, খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছয় দমকল। তারা আগুন নেভায়। এটি সেই সময়কারই ছবি। ১৫ তারিখ এগুলি দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায়কে পাঠান দিল্লির পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় অরোরা। দেশের প্রধান বিচারপতিকে দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন, তাতে তিনি লিখেছেন, প্রাথমিকভাবে তদন্তের ভিত্তিতে আমার মনে হচ্ছে, যাঁরা এই বাংলোতে (বিচারপতি বর্মার বাংলো) থাকেন তারা, বাড়ির পরিচারক, বাগানের মালি এবং CPWD-র কর্মচারীরা ছাড়া ওই স্টোর রুমে অন্য় কারও পক্ষে ঢোকা সম্ভব নয়। তাই আরও গভীরে গিয়ে এই ঘটনায় তদন্ত করা উচিত। 


আগুন নেভানোর পর বিচারপতি বর্মার বাংলোর যে স্টোর রুমের ছবি ও ভিডিও সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে চাঞ্চল্যকর। দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির তদন্ত রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বিচারপতি যশবন্ত বর্মা দাবি করেছেন, তাঁর বাংলোর আউটহাউসের স্টোর রুমে তিনি বা তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য় কখনই কোনও টাকা রাখেননি। এই সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। টাকা তাঁর বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বিচারপতি বর্মার আরও দাবি, তাঁকে বদনাম করার লক্ষ্যে এটা একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। 


তদন্ত রিপোর্টে দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, বিচারপতি যশবন্ত বর্মা তাঁকে বলেছেন ১৪ তারিখ যখন আগুন লাগে তখন তিনি ভোপালে ছিলেন। মেয়ের কাছ থেকে আগুন লাগার খবর পান। যখন দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বর্মাকে আগুনে পুড়ে যাওয়া স্টোর রুমের ছবি দেখান, তখন বিচারপতি বর্মা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। 


বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা উদ্ধারের যে অভিযোগ উঠেছে তার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ৩ সদস্যয়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। সেই তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শীল নাগু, হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জি এস সান্ধাওয়ালিয়া এবং কর্ণাটক হাইকোর্টের বিচারপতি অনু শিবরমণ। বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে আপাতত বিচার সংক্রান্ত কোনও কাজ না দেওয়ার জন্য দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি।