ঢাকা: ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতে তিনি। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনাকে ঘিরে এই মুহূর্তে থমথমে ঢাকা। মানবতাবিরোধী মামলায় সোমবার হাসিনাকে নিয়ে রায় শোনাবে আদালত। তার আগে দেশ জুড়ে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হাসিনার দল আওয়ামি লিগ। আর তাতেই থমথমে পরিবেশ চোখে পড়ছে ঢাকা-সহ একাধিক জায়গায়। সেই আবহে আজ দুপুরেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূস। (Bangladesh Awami League's Lockdown)
ইউনূস নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমান সরকার আওয়ামি লিগ এবং তাদের যাবতীয় কর্মসূচি নিষিদ্ধ করেছে আগেই। তার পরও হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী মামলায় রায় আসার আগে, দেশ জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে তারা। তাতে স্কুল, কলেজের পঠনপাঠন যেমন ব্যহত হয়েছে, তেমনই গণপরিবহণও থমকে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় পথ অবরোধ করেছেন আওয়ামি লিগের কর্মীরা। আবার ঢাকায় আওয়ামি লিগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও এদিন দুপুরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনের তীব্রতা কমে এলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় দ্বিতীয় বার। (Bangladesh News)
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ঢাকা-সহ বড় শহরের স্কুলগুলি অনলাইন ক্লাস বেছে নিয়েছে। পরীক্ষাও হচ্ছে অনলাইন। বৃহস্পতিবার রাস্তায় গাড়ি-বাসও কম বেরিয়েছে। ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও বিশেষ ভাবে তৎপর। দেশের সর্বত্র নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। অন্য দিকে, আওয়ামি লিগের তরফে সমর্থক ও কর্মীদের দলে দলে রাস্তায় নামতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
আওয়ামি লিগের কর্মসূচিতে ফরিদপুরে মহাসড়কের অন্তত পাঁচটি জায়গা অবরোধ করা হয়। গাছের গুঁড়ি, টায়ার জ্বালানো হয় সেখানে। বেশ কয়েক জনের হাতে লাঠিসোঁটা এমনকি রামদাও দেখা গিয়েছে বলে খবর। ভোর ৬টা থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের একাধিক এলাকাতেও অবরোধ চলে। একাধিক জায়গায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও সেনাকে নামতে হয়। ফরিদপুর বাসমালিক কর্তৃপক্ষ জানান, আজ সকাল থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, লোকজন তেমন বেরোচ্ছেন না, তাই যাত্রীও নেই বলে জানা যাচ্ছে।
হাসিনাকে নিয়ে আদালত রায় ঘোষণার বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই থমথমে পরিবেশ ঢাকা-সহ বিভিন্ন শহরে। গত তিন দিনে সেখানে বোমা বিস্ফোরণ থেকে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সামনে এসেছে। বুধবার সন্ধেয় একটি ট্রেন ও বাসেও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে জানা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে দু’টি ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বেশ কয়েক জন আহত হন তাতে। বৃহস্পতিবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত ফাঁকা। বাতিল হয়েছে কয়েকটি বিভাগের মিডটার্ম পরীক্ষা।
ঢাকার যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাসিনা, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের প্রাক্তন IGP চৌধুরী আবদুল্লা আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবে, বৃহস্পতিবার সকালে সেই ট্রাইব্যুনালের সামনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। চৌধুরী আবদুল্লা এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন। অর্থাৎ হাসিনার বিরুদ্ধে বয়ান দিয়েছেন তিনি। আওয়ামি লিগ যদিও হাসিনার বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে। গোটা বিচারপ্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে তারা।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকাকে কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, সরকারি ভবন, প্রবেশপথে নিরাপত্তা বাড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, সেনা, পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী এবং BGB-কে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যৌথ বাহিনী টহল দিচ্ছে। মোতায়েন রয়েছে সাঁজোয়া গাড়িও। সবমিলিয়ে প্রায় ১৭ হাজার পুলিশই রয়েছে বলে খবর।
গত বছর জুলাই মাসে সংরক্ষণ বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলন বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। পরিস্থিতি এমন হয় যে প্রাণে বাঁচতে ভারতে পালিয়ে আসেন হাসিনা। সেই থেকে তিনি ও তাঁর বোন রেহানা ভারতেই রয়েছেন বলে খবর। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে মরিয়া ইউনূস সরকার। হাসিনা যদিও দেশে ফেরার কোনও ইঙ্গিত দেননি এখনও পর্যন্ত। সেই আবহেই হাসিনা, তাঁর পরিবার ও দলের নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা। অভিযোগ, ১) গত বছর ১৪ জুলাই গণভবন থেকে উস্কানিমূলক ভাষণ দেন হাসিনা, ২) হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নিকেশ করতে নির্দেশ দেন তিনি, ৩) রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সইদকে গুলি করে হত্যা করা হয়, ৪) রাজধানীতে ছয় আন্দোলনকে গুলি করে এবং আশুলিয়ায় ছ’জনকে পোড়ানো হয়। সরকারি কৌঁসুলি আগেই হাসিনার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে গণঅভ্য়ুত্থানে প্রায় ১৪০০ মানুষ মারা যান। হিংসার শিকার হন তাঁরা। ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি, ৮০০ মানুষ মারা যান সেই সময়। আহত হন ১৪০০০।