কলকাতা: ১১১ বছর আগে ঠিক কোথায় ডুবেছিল টাইটানিক (Titanic)? ইচ্ছা ছিল সেটাই স্বচক্ষে দেখে আসবেন। কিন্তু হল না। ধ্বংসস্তূপ দেখতে গিয়ে নিজেই ধ্বংস হয়ে গেল সাবমার্সিবল ডুবোজাহাজ 'টাইটান' (Titan)। প্রাথমিক ভাবে ধারণা, ধ্বংসাত্মক 'ইমপ্লোশন'-এ (Explosive Implosion) শেষ হয়ে গিয়েছে ওই ডুবোজাহাজ। বিষয়টি ঠিক কী? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সমুদ্রস্তরের গভীরতার (Ocean Pressure) সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে চাপ। অঙ্কটা জটিল, আর তারই পরিণতিতে হতে পারে এই ধরনের ঘটনা।


সমুদ্রস্তরের গভীরতা ও চাপ...
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আটলান্টিকের ১৩ হাজার ফুট বা প্রায় ৪ হাজার মিটারে গভীরে পড়ে রয়েছে দৈত্যাকার টাইটানিকের ভগ্নস্তূপ। শতাব্দী-প্রাচীন ময়লার আস্তরণ সত্ত্বেও ভেঙে পড়া ডেকের সামনের অংশটি দেখে তাকে এখনও চেনা যায়। আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ কেভ ডাইভার্সের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং ডিরেক্টর রিকার মার্কার এক মার্কিন দৈনিককে জানিয়েছেন, ওই গভীরতায় প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৫ হাজার ৬০০ পাউন্ড সমান চাপ অনুভূত হয় যা কিনা সমুদ্রপৃষ্ঠের তুলনায় কয়েকশো গুণ বেশি। প্রাথমিক ভাবে যা জানা গিয়েছে, তাতে টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপের কাছাকাছি পৌঁছনোর অভিযানে নেমে মহাসাগরের গর্ভে প্রায় পৌনে দু'ঘণ্টা কাটানোর পর যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছিল ডুবোজাহাজ টাইটান। সেই সময় আটলান্টিকের অন্তত প্রায় ১০ হাজার ফুট গভীরে ছিল সে, এমনই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। এমন পরিস্থিতিতে তীব্র চাপে ধ্বংসাত্মক 'ইমপ্লোশন'-র আশঙ্কাই জোরদার, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

কেন?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে থাকার সময় আশপাশের বায়ুমণ্ডল আমাদের দেহের উপর প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১৪.৭ পাউন্ডের মতো চাপ তৈরি করে। কিন্তু সেটি আমরা টের পাই না কারণ আমাদের দেহের অন্দরের ফ্লুইড-ও সমান চাপ ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু সমুদ্রগর্ভে কয়েক ফুট নামলেই ছবিটা বদলাতে থাকে। প্রথম কানের পর্দার উপর চাপ পড়ে। সমুদ্রের যত গভীরে কেউ যান, ততই এই চাপ বাড়তে থাকে। অঙ্ক বলছে, সমুদ্রের গভীরে প্রতি ৩৩ ফুট গেলে ১ অ্যাটমসফেয়ার ইউনিট চাপ বাড়ে। অ্যাটমসফেয়ার ইউনিট একটি একক। বিজ্ঞানের পরিভাষায়, সমুদ্রপৃষ্ঠে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গড়ে বায়ুমণ্ডলের যে চাপ থাকে, তার পরিমাপ ১ অ্যাটমসফেয়ার ইউনিট। সমুদ্রগর্ভে ৩৩ ফুট গেলে এই এককেই বাড়তে থাকে চাপ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বহু সামুদ্রিক প্রাণীর এই চাপে বেঁচে থাকতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে ছবিটা মর্মান্তিক হতে পারে। টাইটানের ক্ষেত্রে সেরকমই কিছু হয়েছিল আশঙ্কা, অনেকের। ডুবোজাহাজটি ঘটনার সময় যে গভীরতায় ছিল, তাতে ওই তুমুল চাপেই ধ্বংসাত্মক 'ইমপ্লোশন' ঘটে থাকবে, ধারণা বিশেষজ্ঞদের। 

তবে মর্মান্তিক পরিণতির মধ্যে আশার কথা একটাই। মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত সম্ভবত কিছু টের পাননি অভিযাত্রীরা। অফার কেটার নামে এক ডুবোজাহাজ বিশেষজ্ঞ মার্কিন দৈনিককে বলেছেন, 'ন্যানোসেকেন্ড না হলেও ইমপ্লোশান সাধারণত মিলিসেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যায়। ...সম্ভবত ওঁদের মস্তিষ্কও এই বিপদসঙ্কেত বুঝে ওঠার সময় পায়নি। তার আগেই সব শেষ।' আপাতত এটুকুতেই স্বস্তি খুঁজছেন মৃতের আত্মীয়রা। টাইটানিকের মতো তিলে তিলে মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখতে হয়নি, এটুকুই যা সান্ত্বনা তাঁদের।


(তথ্যসূত্র:oceanservice.noaa.gov)


আরও পড়ুন:প্রতিদিন নিয়মিত মধু সেবনে কী কী উপকার হতে পারে আমাদের স্বাস্থ্যের?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial