নয়াদিল্লি: দীপাবলির আগে ছানা, পনির, মিষ্টিতে ভেজালের অভিযোগ সামনে এসেছিল। জায়গায় জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে নকল পনির উদ্ধারের ভিডিও-য় ছেয়ে যায় নেট দুনিয়া। এবার ডিমে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর উপাদান থাকার অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় চারিদিকে। প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি সংস্থা Eggoz-এর বিরুদ্ধে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর উপাদান মিশ্রিত ডিম বিক্রির অভিযোগ উঠল। (Eggoz Controversy)

Continues below advertisement

Trustified নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল খাবারের গুণমান যাচাইয়ের জন্য পরিচিত। সম্প্রতি Eggoz-এর ডিম নিয়ে মারাত্মক অভিযোগ তোলে তারা। একটি ভিডিও-য় দাবি করা হয়, গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে Eggoz-এর ডিমে নাইট্রোফুরান থেকে প্রাপ্ত যৌগ  AOZ রয়েছে, যার সঙ্গে ক্যান্সারের সংযোগ খুঁজে পেয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও। (Does Egg Cause Cancer)

Continues below advertisement

ওই ইউটিউব চ্যানেলের অভিযোগ, Eggoz-এর যে ডিম পরীক্ষা করে দেখে তারা, তাতে প্রতি কেজিতে ০.৭৪ মাইক্রোগ্রাম AOZ পাওয়া গিয়েছে। ভক্ষণযোগ্য পশুর উপর AOZ প্রয়োগ নিষিদ্ধ একাধিক দেশে। কারণ এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে, ক্ষতি হয় DNA-র। বেআইনি পোলট্রি ফার্মে সাএই ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়, যাতে মুরগিদের ব্যাকটিরিয়া থেকে রক্ষা করা যায় এবং তারা বেশি পরিমাণ ডিম পাড়তে পারে।  

Eggoz-এর ডিমে ওই ক্ষতিকর উপাদান থাকার অভিযোগ উঠতেই শোরগোল পড়ে যায়। কারণ Eggoz-এর ব্যবসার মন্ত্রই হল অ্যান্টিবায়োটিক মুক্ত, সব ধরনের রাসায়নিক মুক্ত, উচ্চমানের খাদ্য পৌঁছে দেওয়া সকলের কাছে। তাই বেশি দাম দিয়ে Eggoz-এর ডিম কিনতেও পিছপা হন না কেউ। ফলে ইউটিউ চ্য়ানেল Trustified-এর ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। ভারতে খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের ভূমিকা নিয়ে আগে থেকেই ক্ষোভ জমে রয়েছে সকলের মনে। ফলে ক্ষোভ উগরে দিতে দেরি করেননি কেউ। FSSAI-এর কাছে কড়া পদক্ষেপের দাবিও জানান অনেকে। 

বিতর্ক শুরু হতে Eggoz-এর সপক্ষে পাল্টা যুক্তিও উঠে আসে। ভারতে প্রতি কেজিতে ১ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত AOZ ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে বলে দাবি করা হয়। Eggoz জানায়, AOZ থাকার অর্থই অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্য়বহার নয়। মাটি বা কাঁচামালের দরুণও এটা ঘটতে পারে। ইচ্ছাকৃত ভাবে মুরগিকে তেমন কিছু খাওয়ানো হয় না। কিন্তু তাতেও ক্ষোভ স্তিমিত হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। কত পরিমাণ AOZ রয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং Eggoz গ্রাহকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।

এমন পরিস্থিতিতে সোশ্য়াল মিডিয়ায় মুখ খোলেন মুম্বইয়ের চিকিৎসক মনন ভোরা। তিনি জানান, Eggoz-এর ডিমে যে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গিয়েছে, তা genotoxic, অর্থাৎ জিনের গঠন বদলে দিতে পারে, ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। মনন জানিয়েছেন, তিনি নিজেও ওই ডিম খান। কিন্তু সরকার, খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ কেন বিষয়টি ধরতে পারল না, প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও মত তাঁর। Eggoz-এর ডিমে ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে বলেই, সব ডিম ক্ষতিকর এমন মনে করার কোন কারণ নেই বলে মত মননের। কিন্তু FSSAI-এর বিরুদ্ধে ঢিলেমির অভিযোগ তোলেন তিনি। 

এমন পরিস্থিতিতে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত সংস্থার ডিম কেনারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। শুধুমাত্র ঝাঁ চকচকে প্যাকেজ দেখে ডিম কিনতে নিষেধ করছেন সকলে। যে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গিয়েছে Eggoz-এর ডিমে, ভাল করে রান্না করলেই তা একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে না। তবে ভাল করে রান্না করলে ঝুঁকি কমবে অনেকটাই।