নয়াদিল্লি: ইরানের কাছ থেকে তেল কিনলে ভাল হবে না বলে মাস খানেক আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে ইরানের কাছ থেকে পেট্রোপণ্য কিনলে ভারতের উপরও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হতে পারে বলে সতর্ক করেছিল তাঁর সরকার। কিন্তু ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার একদিন পরই কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন ট্রাম্প। ইরানের থেকে তেল কেনায় চিনকে ছাড়পত্র দিলেন তিনি। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এমনিতেই মানত না চিন। তবে ট্রাম্প জানালেন, চিন ইরানের কাছ তেল কিনলে, আর আপত্তি নেই তাঁদের। (Donald Trump)
১২ দিন ব্যাপী যুদ্ধ পরিস্থিতি কাটিয়ে মঙ্গলবারই ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন ট্রাম্প। আর তার পরই চিনের ইরানের কাছ থেকে তেল কেনায় ছাড়পত্র দেন তিনি। সোশ্য়াল মিডিয়ায় ট্রাম্প লেখেন, ‘এখন চিন ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা চালিয়ে যেতে পারবে। আশাকরি, ওরা আমেরিকার কাছ থেকেও কিনবে। এই কাজ করতে পেরে গর্ব অনুভব করছি’। (US-China Relations)
বলা বাহুল্য, ট্রাম্পের এই ঘোষণায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞরাও হতবাক, হতবাক তাঁর সরকারের আধিকারিকরাও। বহু বছর ধরে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে আসছে আমেরিকা। তেল এবং পেট্রোপণ্য রফতানি করে ইরানের যে আয়, তা আটকাতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখেন ট্রাম্পের পূর্বসূরিরাও। তাহলে কি সেই অবস্থান থেকে সরছেন ট্রাম্প? ইরানের উপর চাপানো নিষেধাজ্ঞা কি শিথিল করতে চলেছেন তিনি? উঠছে প্রশ্ন।
ইরান এবং ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামেও প্রভাব পড়ছিল। সরবরাব বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় পতন ঘটে তেলের দামে। মঙ্গলবার ইরানের কাছ থেকে তেল কেনায় ট্রান্প চিনকে ছাড়পত্র দিলে, আমেরিকার বাজারে তেলের দামে ৬ শতাংশ পতন ঘটে। আমেরিকার ট্রেজারি এবং স্টেট বিভাগ, যারা ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখে, তারাও চ্রাম্পের ঘোষণায় হতবাক। তবে ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার কোনও নির্দেশই আসেনি। বরং আগের মতোই কড়া নজরদারি চলবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।
কিন্তু হঠাৎ চিনকে ইরানের কাছ থেকে তেল কেনায় কেন ছাড়পত্র দিলেন ট্রাম্প? উত্তর খুঁজতে গিয়ে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতিকে সামনে রাখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েনের পর চিনের সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ট্রাম্প। সেই লক্ষ্য়ে নতুন করে বাণিজ্য নীতি সাজাতে চাইছেন। Siebert Financial Corp-এর CIO মার্ক মালেকের মতে, আসলে চিন এবং ইরানকে আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ দিচ্ছেন ট্রাম্প। ইরানের কাছ থেকে তেল কেনায় ছাড় দিয়ে, ট্রাম্প আসলে চিনের আস্থা অর্জন করতে চাইছেন বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
পৃথিবীর মধ্যে চিনই সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে। ইরান থেকেই ১৪ শতাংশ অশোধিত তেল আমদানি করে তারা। তবে বাস্তবে এই হার আরও বেশি বলে মত বাজার বিশেষজ্ঞদের। মালয়েশিয়া থেকেও ঘুরপথে চিন ইরানের তেল কেনে বলে শোনা যায়। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এড়াতে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ওমানের মাধ্যমেও ঘুরপথে চিনে ঢোকে ইরানের তেল। ইরানের উপর আমেরিকার চাপানো নিষেধাজ্ঞা যদিও মানে না চিন।
সবচেয়ে বড় ক্রেতা হওয়ায় তেলের উপর চিনকে প্রচুর ছাড়ও দেয় ইরান। ইরানের তেল চিনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চিনের শিল্পক্ষেত্রের বড় অংশ চিকে তেলের উপর। ট্রাম্পের ঘোষণায় তাই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগের প্রাক্তন আধিকারিক ড্যানিয়েল ট্যানেবমের মতে, ট্রাম্পের এই ঘোষণায় চিন এবং ইরান, দুই দেশই লাভবান হবে। দীর্ঘকালীন স্থিতিশীলতা তৈরি হবে ওই অঞ্চলে।
তবে ইরানের কাছ থেকে তেল কেনার জন্য় চিনকে যেভাবে ছাড়পত্র দিলেন ট্রাম্প, তাতে অনেকেই অখুশি। কারণ গত মাসেও ইরানের কাছ থেকে তেল এবং পেট্রোপণ্য কেনা নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এগিয়ে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গেলে, সেই দেশকেও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। আমেরিকা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে ব্যবসা করবে না বলে জানিয়ে দেন। ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, ইরানের তেল রফতানি ১০ শতাংশেরও নীচে নিয়ে যেতে চান তাঁরা। ইরান থেকে পেট্রোপণ্য বোঝাই করে অন্যত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য শতাধিক ট্য়াঙ্কারকেও নিষিদ্ধ করে আমেরিকা। ভারতের চার সংস্থা---Austinship Management Pvt Ltd, BSM Marine LLP, Cosmos Lines Inc, Flux Maritime LLP-কে নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি চিনের বেশ কিছু সংস্থাকেও নিশানা করে আমেরিকা। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার জেরেই ইরানের থেকে তেল কেনে না ভারত। তাই এখন শুধুমাত্র চিনকে ছাড়পত্র দেওয়ায় অসন্তুষ্ট অনেক দেশ।