ওয়াশিংটন: মহাশক্তিধর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দফার শেষটা ভাল হয়নি। তাই পরিবার-পরিজনকে নিয়ে কার্যত নিভৃতবাসে চলে গিয়েছিলেন। বিতর্ক যদিও পিছু ছাড়েনি তাঁর। আর্থিক তছরুপ থেকে ব্যক্তিগত কেলেঙ্কারি, গত চার বছরে খবরের শিরোনামে বার বার উঠে এসেছে তাঁর নাম। এই মুহূর্তেও পৃথিবীর সর্বত্র খবরের শিরোনামে ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে বিতর্ক বা কেলেঙ্কারির জেরে নয়, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রত্যাবর্তনের দরুণ। কিন্তু চার বছর পর আমেরিকার মসনদে আবারও ডোনাল্ড ট্রাম্পই যে ফিরছেন, তা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল কয়েক মাস আগেই। (Donald Trump)


মাত্র একদফা প্রেসিডেন্ট থাকার পর, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন ট্রাম্প। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর হোয়াইট হাউস ছাড়েন তিনি। কিন্তু সসম্মানে বিদায় নেওয়া হয়ে ওঠেনি তত দিনে দু'-দু'বার ইমপিচ করা হয়ে গিয়েছে তাঁকে। ক্যাপিটল হিল হিংসায় উস্কানি জোগানোর অভিযোগ উঠেছে। তাঁর অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে মাইক্রোব্লগিং সাইট X (সাবেক Twitter). এর পর যত সময় এগোয়, একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ সামনে আসে। আর্থিক তছরুপ থেকে গোপন তথ্য হাতবদল হওয়ার। পাশাপাশি, ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এমনকি পর্ন তারকার মুখ বন্ধ রাখতে টাকা দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্তও করে আদালত। (US Presidential Elections 2024)


এতকিছুর পর ট্রাম্প ফের নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রবেশের সাহস করবেন না বলেই মনে করেছিলেন সকলে। কিন্তু ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাম লিখিয়ে সকলকে চমকে দেন ট্রাম্প। বাইডেনের কাছে পরাজয় মেনে নিতে না পেরেই ট্রাম্প ফের নির্বাচনে নামতে চাইছেন বলে গোড়ার দিকে শোনা যায়। এমনকি যে দলের সদস্য তিনি, সেই রিপাবলিকানদের মধ্যেও তাঁকে নিয়ে মতভেদ ছিল। কিন্তু যত সময় এগোতে থাকে, পাল্লা ভারী হতে থাকে ট্রাম্পের। শারীরিক অসুস্থতার দরুণ বাইডেন মাস তিনেক আগে নির্বাচন থেকে নাম তুলে নেন। এর পর ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মঞ্চে অবতীর্ণ হন কমলা হ্যারিস। একে মহিলা, তার উপর ভারতীয়-আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। তাই কমলার সঙ্গে ট্রাম্প পেরে উঠবেন না বলেই ধরে নিয়েছিলেন সকলে। 


কিন্তু একটি ঘটনাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। চলতি বছরের ১৩ জুলাই পেনসিলভ্যানিয়ার বাটলারে প্রচারে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেখানে বক্তৃতা চলাকালীনই গুলি চলে ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে। বক্তৃতার সময় ঘাড় ঘোরানোর দরুণ কোনও রকমে বেঁচে যান ট্রাম্প। তাঁর কান ছুঁয়ে বেরিয়ে যায় গুলি। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে, রক্তাক্ত অবস্থাতেই বজ্রমুষ্টি ছুড়ে দেন আকাশের দিকে। আর ওই মুহূর্তেই হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের ভবিষ্যদ্বাণী হয়ে যায়। একসময় বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিন্টনকে সমর্থন করতেন যে ইলন মাস্ক, তিনিও ট্রাম্পের প্রতি পূর্ণ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আসেন। 


সেখান থেকে বাকি রাস্তা মসৃণ ছিল ট্রাম্পের জন্য। এমনিতে ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রচার থেকে দূরে থাকলেও, সেপ্টেম্বর মাসে স্বামীর উপর হামলা নিয়ে মুখ খোলেন মেলানিয়া ট্রাম্প। বলেন, "আমার স্বামীকে খুনের চেষ্টা ভয়ঙ্কর। এখন ওই ঘটনার কথা উঠলে অদ্ভুত নীরবতা নেমে আসে চারিদিকে, যা বেশ ভারী বলে বোধ হয়। আমার মনে প্রশ্ন ভিড় করে, আততায়ীকে কেন বক্তৃতার শুরুতেই গ্রেফতার করা হল না? এর নেপথ্যে আরও অনেক কিছু থাকতে পারে। আসল সত্য তুলে ধরা জরুরি।" বুধবার যখন হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ফেরা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে, সেই সময় মেলানিয়াকে পাশে নিয়েই ওই হামলা নিয়ে মুখ খোলেন ট্রাম্প।  বলেন, "ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়েছেন, কোনও কোনও কারণেই নিশ্চয়ই বাঁচিয়েছেন। দেশকে বাঁচাতে, আমেরিকাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আমাকে বাঁচিয়েছেন ঈশ্বর। একসঙ্গে সেই লক্ষ্যপূরণ করব আমরা। কাজ সহজ হবে না নিশ্চিত, কিন্তু শরীরের শেষ শক্তি থাকা পর্যন্ত লড়ে যাব। আমাকে ভরসা করে যে দায়িত্ব দিয়েছেন আপনারা, তাতে মনপ্রাণ সঁপে দেব।" বিজয়ী ভাষণেও ট্রাম্প যেভাবে ওই ঘটনার উল্লেখ করেছেন, তাতে তিনি নিজেও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।