নয়াদিল্লি : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধুত্ব সর্বজনবিদিত। স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন মসনদে ট্রাম্পের কামব্যাকে একরাশ আশা জাগতে পারে ভারতবাসীর মনে। কিন্তু, আদৌ কি ভারতের কিছু লাভ আছে ?


এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় ইনিংসের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখবে ভারত। কারণ, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর নীতি নির্ধারণ করবে আগামী দিনে ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক কোন পথে এগোবে। বিশেষ করে- H-1B ভিসা নিয়ে আইন, বাণিজ্য ও স্টক মার্কেটের মতো বিষয়গুলি। তবে অনেকেই আশাপ্রকাশ করছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পর ভারত-আমেরিকার সম্পর্কে নতুন দিক খুলে যাবে। কিন্তু, সেই আশা কতটা সমীচিন ?


ট্রাম্পের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনে কোন কোন ক্ষেত্রে টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে ?


ব্যবসা-বাণিজ্য


ট্রাম্পের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের অর্থ, আমেরিকার নতুন এই প্রশাসন আরও বেশি আমেরিকা-কেন্দ্রিক বাণিজ্য-নীতি তৈরির চেষ্টা করবে। ভারতের উপর বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ কমানোর জন্য চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করবে। শুল্ক-বিষয়েও থাকবে ট্রাম্প প্রশাসনের নজর। এর ফলে ভারতের মূল যে ক্ষেত্রগুলি অর্থাৎ- তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ ও বস্ত্র-ব্যবসার উপর প্রভাব পড়বে। আমেরিকার বাজারে এইসব সামগ্রী বিশাল পরিমাণে রফতানি করে ভারত। তাই, ট্রাম্প প্রশাসন চাইবে, এবিষয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার। ট্রাম্পের পদক্ষেপ ভারতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ওয়াকিবহাল মহল। ভারতকে বাণিজ্য-কৌশল নতুন করে ভাবতে হতে পারে। যদিও ভারত সবসময় ইতিবাচক সুযোগ-সুবিধার জন্য দরজা খোলা রাখে।


H-1B ভিসা নিয়ম-


ট্রাম্পের প্রথম দফায় দেখা গিয়েছিল,যোগ্যতার মাপকাঠি সংকুচিত করে H-1B ভিসা প্রোগ্রাম সীমিত করার প্রচেষ্টা। পাশাপাশি আবেদন যাচাই করা বাড়ানো। ২০২৫ সালে এ বিষয়ে আরও কড়া পদক্ষেপ করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। তাঁর সরকার লক্ষ্য রাখবে যাতে, আমেরিকান কর্মীদের অবস্থা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সামগ্রিক পদক্ষেপের জেরে, H-1B ভিসার সংখ্যা কমতে পারে। তবে, উচ্চতর ডিগ্রি ও বিশেষজ্ঞের দক্ষতাধারীদের পথ সুগম হতে পারে।


বিদেশ-নীতি


প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সম্প্রতি উন্নতি হয়েছে ভারত-চিন সম্পর্কের। পারস্পরিক চুক্তির ভিত্তিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাহিনী সরিয়ে নিয়েছে দুই দেশই। যদিও ভারত-চিন সম্পর্কের উন্নতি, পারস্পরিক বিশ্বাস গড়ে ওঠার জন্য অনেক পথ চলা বাকি। পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। কাজেই কোনোভাবে এ বিষয়ে নজর ঘোরাতে পারবে না নয়াদিল্লি। এদিকে পূর্বতন জো বাইডেনের থেকে চিনের উপর একটু বেশি কড়া মনোভাব নিয়ে চলেন ট্রাম্প। কাজেই, ভারত-চিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সমর্থন ভারতের দিকে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।


এখন দেখার দ্বিতীয় ইনিংসে ট্রাম্প কোন পথে এগোন।


প্রসঙ্গত, ফের মার্কিন মসনদে বসতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। লড়াই দিয়েও হারতে হল কমলা হ্যারিসকে। ৭টি সুইং স্টেটের মধ্যে ৬টিতেই জয়ী ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ২৭৭টি ইলেক্টোরাল ভোট, কমলা হ্যারিসের পক্ষে ২৬৬টি ইলেক্টোরাল ভোট পড়ে। টেক্সাস, ফ্লোরিডা, পেনসিলভেনিয়া, ওহিও, নর্থ ও সাউথ ক্যারোলিনা দখল রিপাবলিকানদের। হাউস অফ রিপ্রেসেন্টেটিভসের লড়াইয়েও এগিয়ে রিপাবলিকানরা। ডেমোক্র্যাটের দখলে ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক, কানেক্টিকাট, কলোরাডো, ওরেগান ।


ইতিমধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রী লিখেছন, 'আগের বারের মতোই এবারও ভারত-মার্কিন সম্পর্ক মজবুত হবে। জনগণের উন্নতি ও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।'