ওয়াশিংটন: দেখা হল, কথা হল, হল না শুধু মীমাংসা। মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই বৈঠক শেষ হয়ে গেল। ফের যদিও সাক্ষাতের জল্পনা উস্কে দিয়ছেন দুই রাষ্ট্রনেতা, কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ঐক্যমত্য গড়ে ওঠেনি বলেই জানা যাচ্ছে। তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইতিবাচক আলোচনাই হয়েছে বৈঠক। শীঘ্রই ঐক্যমত্যে পৌঁছনো সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তিনি। (US-Russia Relations)
রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধে ইতি টানতে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণে আলাস্কায় আয়োজিত ট্রাম্প এবং পুতিনের এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা বিশ্ব। ভারতের জন্যও এই বৈঠক অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ রাশিয়ার থেকে তেল কেনার জন্যই ভারতের ঘাড়ে ৫০ শতাংশ ‘শুল্ক শাস্তি’ চাপিয়েছে আমেরিকা। তাই দীর্ঘ সাত-আট ঘণ্টা.র বৈঠকে সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসবে বলেই আশা ছিল। কিন্তু সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসা দূর, সাত-আট ঘণ্টার পরিবর্তে মাত্র আড়াই ঘণ্টারমধ্যেই বৈঠক শেষ হয়ে গেল। (Donald Trump-Vladimir Putin Meet)
বৈঠকের পর একসঙ্গে বিবৃতিও দেন ট্রাম্প ও পুতিন। সাংবাদিকদের কাছ থেকে কোনও প্রশ্নই গ্রহণ করেননি তাঁরা। বরং ট্রাম্প বলেন, “চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যমত্যের প্রশ্নই ওঠে না। তবে আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে কথা এগিয়েছে। আমি শীঘ্রই NATO-র সঙ্গে কথা বলব। অনেকের সঙ্গেই কথা বলতে হবে। ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও অবশ্যই ফোন করব। শেষ পর্যন্ত ওঁদের উপরই সবকিছু নির্ভর করছে। আলোচনা সদর্থক হয়েছে, একাধিক বিষয়ে একমত আমরা। লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়নি যদিও, তবে সম্ভাবনা রয়েছে।” বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমে ট্রাম্প বলেন, “প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উপরই সবকিছু নির্ভর করছে এই মুহূর্তে। পুতিন, জেলেনস্কি এবং আমার মধ্যে বৈঠকের ভাবনা চলছে। কতটা কী করা যায় দেখতে হবে।”
যুদ্ধ নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে, তা খোলসা না করলেও, ট্রাম্প জানান, আমেরিকার বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও, রাষ্ট্রদূত স্চিভ উইটকফ এবং তাঁর সরকারের অন্য আধিকারিকের সঙ্গে পুতিনের যে আলোচনা হয়েছে, তাতে ইউক্রেনকেও রাজি হতে হবে। তবেই এগনো সম্ভব। অন্য দিকে, পুতিন বলেন, “দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে পারস্পরিক সম্মান বজায় থেকেছে। সদর্থক আলোচনাই হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।” আলাস্কায় লাল গালিচা পেতে যেভাবে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো হয়, তার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদও জানান তিনি। পরবর্তী আলোচনার জন্য ট্রাম্পকে মস্কোয় আহ্বানও জানান। তবে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক যে মধুর নয়, সেকথা স্বীকার করে নেন পুতিন। তাঁর বক্তব্য, “চার বছরে রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে কোনও বৈঠক হয়নি, একথা সকলেই জানেন, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য শুভ নয়। কোনও রাখঢাক না করে বলাই যায় যে, ঠান্ডা যুদ্ধের পর থেকে সম্পর্কের এত অবনতি হয়নি কখবও। এটা আমাদের দুই দেশের জন্য যেমন শুভ নয়, গোটা পৃথিবীর জন্যও শুভ নয়। দুই দেশের রাষ্ট্রনেতার মধ্যে আরও আগে দেখা হওয়া উচিত ছিল।”
আলাস্কায় পুতিনকে অভ্যর্থনা জানানো হলেও, সেই সময়ই আকাশে যুদ্ধবিমান উড়িয়ে ট্রাম্প আসলে কড়া বার্তা দিয়েছেন বলে যদিও মনে করছেন রিপাবলিকান সমর্থকদের একাংশ। কিন্তু যুদ্ধবিরতিতে পুতিনকে রাজি করাতে না পেরে, ট্রাম্প অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেননি বলেই মত বিরোধীদের। পুতিন যদিও ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জো বাইডেনের পরিবর্তে তিনি ক্ষমতায় থাকলে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ হতে দিতেন না বলে বার বার দাবি করেছেন ট্রাম্প। সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে পুতিন বলেন, “আমিও নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।” পুতিনের বক্তব্য, “২০২২ সালে আমেরিকার তদানীন্তন সতীর্থকে (জো বাইডেন) আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম যে, যেখান থেকে ফেরা সম্ভব নয়, তেমন শত্রুতায় যাওয়া উচিত নয়। ভুল হচ্ছে বলে সরাসরিই জানিয়েছিলাম। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমি বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তুলেছিলাম, ব্যবসায়িক বোঝাপড়া তৈরি হয়েছিল। আমি এখনও মনে করি, এখনও সম্ভাবনা আছে। যত তাড়াতাড়ি হয়, ততই ভাল। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসময় (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়) শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম আমরা। সেই ইতিহাস ভবিষ্যতের পথে আমাদের সহায়ক হতে পারে।”
তবে এত কিছুর পরও যে দুই দেশের মধ্যে ঐক্যমত্য তৈরি হল না, তাতে অশনি সঙ্কেত দেখছে কূটনৈতিক মহল। কূটনীতিকদের একাংশের মতে, পুতিনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে পারেননি ট্রাম্প। একেবারেি মাথা নোয়াননি পুতিন, যা নিয়ে যথেষ্ট বিচলিত ট্রাম্প। কারণ গোড়া থেকেই পুতিন বার বার যুদ্ধের কারণের উপর জোর দেন। বাইরের হস্তক্ষেপ যে বরদাস্ত করবেন না, তা-ও বুঝিয়ে দেন। পুতিন সাফ বলেন, “আশাকরি কিভ এবং ইউরোপিয়ানরা এটিকে গঠনমূলক আলোচনা হিসেবেই নেবেন এবং কোনও বাধা সৃষ্টি করবেন না, কোনও রকম উস্কানি জোগাবেন না।” তাই ট্রাম্প NATO-র সঙ্গে কথা বলবেন বলে যে বার্তা দিয়েছেন, তাতে পুতিন আরোপিত শর্তগুলিই তুলে ধরতে হবে তাঁকে। ফলে এটিকে কোনও ভাবেই আমেরিকার জয় হিসেবে দেখা সম্ভব হবে না। বৈঠক সত্যিই আশাব্যাঞ্জক হলে, মধ্যাহ্নভোজ না করেই ট্রাম্প ও পুতিন আলোচনায় ইতি টানতেন না বলেও মত অনেকের। বৈঠক শেষে আলাস্কায় সোভিয়েত পাইলটদের সমাধিক্ষেত্রে যান পুতিন। ফুলের তোড়া নিবেদন করে সম্মান জানান বিশ্বযুদ্ধের সময় নিজের দেশের নিহত সৈনিকদের।