নয়াদিল্লি: ইরানের তিন-তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্র গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের। কিন্তু দেশের গোয়েন্দাদের রিপোর্ট একেবারে অন্য কথা বলছে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ইরানের যে তিনটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়, তাতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির  কোমর ভেঙে দেওয়া যায়নি। বরং যে গতিতে লক্ষ্যে পৌঁছনোর কথা ছিল ইরানের, তাকে কয়েক মাস পিছিয়ে দেওয়া গিয়েছে। ওই রিপোর্ট ঘিরে এই মুহূর্তে অস্বস্তিতে ট্রাম্প সরকার। দেশের অন্দরেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। সেই নিয়ে সাফাই দিতে গিয়ে ট্রাম্প সরকার যদিও গোয়েন্দা রিপোর্ট ফাঁস হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। গোয়েন্দা রিপোর্ট ফাঁস করাকে ‘দেশদ্রোহ’ বলে উল্লেখ করেছে তারা। (US-Iran Conflict)

সপ্তাহান্তে ইরানের যে তিনটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে হামলা চালায় আমেরিকা, তা নিয়ে নিজেদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে দেশের সামরিক বিভাগ পেন্টাগনের গোয়েন্দা সংস্থা Defence Intelligence Agency. আমেরিকার হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত, তা ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, সময়ের সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও ভাল ভাবে বোঝা যাবে। তবে প্রাথমিক ভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মূল উপাদানকে গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়নি। ধ্বংস করা যায়নি ইরানের ইউরেনিয়াম ভাণ্ডার। হামলার আগেই ইরান মজুত রাখা ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায় বলেও দাবি করা হয়েছে। (Iran Nuclear Programme)

Defence Intelligence Agency-র এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে CNN জানিয়েছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে হয়ত কয়েক মাস পিছিয়ে দেওয়া গিয়েছে। গোয়েন্দাদের রিপোর্ট জমা পড়ার কথা মানলেও, হামলায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে যে তথ্য় উঠে আসছে, তা অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোসিন লেভিট বলেন, “ওই রিপোর্ট ভুল। রিপোর্টটি গোপন থাকার কথা, কিন্তু নিম্ন স্তরের কেউ সেটি ফাঁস করে দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। রিপোর্ট ফাঁস করে দেওয়ার আসল উদ্দেশ্য হল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খাটো করা, তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা, যুদ্ধবিমানের বীর পাইলটদের অপমান করা। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিশ্চিহ্ন করে নিতে নিপুণ কাজ করেন তাঁরা। ৩০ হাজার পাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করলে কী হয়, তা সকলেই জানেন।”

গোয়েন্দাদের গোপন রিপোর্ট ফাঁস করাকে ‘দেশদ্রোহ’ বলে উল্লেখ করেছেন পশ্চিম এশিয়ায় ট্রাম্পের বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফও। তাঁর বক্তব্য, “অত্যন্ত জঘন্য বিষয়। এটা দেশদ্রোহ, এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। যে বা যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।” স্টিভের দাবি, তিনি গোয়েন্দাদের রিপোর্ট পড়েছেন। আমেরিকা যে লক্ষ্যে নির্ভুল আঘাত হেনেছে, লক্ষ্যবস্তুকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। একই সুর শোনা গিয়েছে ট্রাম্পের গলায়। তাঁর বক্তব্য, “Fordow-র উপর ১২টি বাঙ্কাসার বাস্টার বোমা ফেলেছি আমরা। সেটি যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই লক্ষ্যপূরণ হয়নি বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা অযৌক্তিক।” এর আগে আমেরিকার সেনাও অভিযান সফল হয়েছে বলে ঘোষণা করে।

ইরান এবং ইজরায়েলের মধ্যে চলা ১২ দিন ব্যাপী যুদ্ধ পরিস্থিতিতে হঠাৎই নিজেকে যুক্ত করে আমেরিকা। ইজরায়েলের তিনটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র— Fordow, Nantanz এবং Isfahan লক্ষ্য করে হামলা চালায় তারা। ওই হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া গিয়েছে বলে গোড়া থেকেই দাবি করে আসছেন ট্রাম্প। যদিও ইরান গোড়াতেই সেই দাবি খারিজ করে দেয়। তাদের দাবি ছিল, ন্যূনতম ক্ষতি হয়েছে। অনেক আগেই ওই তিনটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র খালি করে দেওয়া হয়েছিল। আর সেই আবহেই গোয়েন্দাদের রিপোর্ট নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে আমেরিকার অন্দরেই।