পঞ্চকুলা: ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সপরিবারের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় কয়েক মাস আগেই সাড়া পড়ে গিয়েছিল কলকাতায়। এবার হরিয়ানার পঞ্চকুলায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। তবে কলকাতার ট্যাংরার ঘটনায় যেখানে তিনজন প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন, আইনি প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে, হরিয়ানার ক্ষেত্রে কিছুই করা গেল না। একসঙ্গে বিষ খেয়ে পরিবারের সাতজন আত্মঘাতী হলেন। (Panchkula Incident)
হরিয়ানার দেহরাদূণের বাসিন্দা ওই পরিবার সোমবার রাতে পঞ্চকুলায় আত্মঘাতী হয়েছে। গাড়ি ভিতর বিষ খেয়ে মারা যান ছ’জন। গাড়ির বাইরে মারা যান পরিবারের কর্তা, ৪২ বছর বয়সি প্রবীণ মিত্তল। বাগেশ্বর ধামে ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে সকলে আত্মঘাতী হন বলে জানা গিয়েছে। গোটা ঘটনায় শিউরে উঠছেন সকলে। (Panchkula Family Die Together
জানা গিয়েছে, গতকাল রাতে পাড়ায় উত্তরাখণ্ডের নম্বর প্লেট লাগানো একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে যান। গাড়ির কাছে পৌঁছে দেখেন, গাড়ির দরজা বন্ধ থাকলে, নীচ দিয়ে একটি তোয়ালে বেরিয়ে রয়েছে। দরজার কাছে বাইরে বসে রয়েছেন এক ব্যক্তি।
স্থানীয়রা ওই ব্যক্তিকে ঘিরে ধরেন। কথায় কথায় জানা যায়, তিনিই প্রবীণ মিত্তল। তিনি জানান, বাগেশ্বর ধাম থেকে ফিরছিলেন। কিন্তু হোটেল মেলেনি। তাই পরিবারের সকলে মিলে গাড়িতেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে স্থানীয়রা তাঁকে গাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে বলেন। সেই মতো প্রবীণ উঠে গাড়ি সরিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যত হন। তিনি দরজা খুলতেই বিকট গন্ধ নাকে এসে ঠেকে সকলের। আর তাতেই সন্দিহান হয়ে পড়েন সকলে।
এর পর এক ব্যক্তি এগিয়ে গিয়ে গাড়ির ভিতর উঁকি দেন। আর তাতেই শিউরে ওঠেন ওই ব্যক্তি। তিনি জানিয়েছেন, গাড়ির ভিতর ছ’টি দেহ একে অপরের গায়ে হেলে পড়ে রয়েছে। পরস্পরের গায়ে বমিও করেছেন সকলে। তীব্র গন্ধও বেরিয়ে আসছে ভিতর থেকে। এর পর প্রবীণকে চেপে ধরেন স্থানীয়রা, তাতে তিনি জানান, পরিবারের মাথায় প্রচুর দেনা। তাই একসঙ্গে আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সকলে। তিনি নিজেও বিষপান করেছেন। কয়েক মিনিটই আর আয়ু রয়েছে তাঁর।
সব জানতে পেরে এর পর স্থানীয়রাই পুলিশ ও অ্যাম্বুল্যান্সে খবর দেন। কিন্তু হাসপাতালেনিয়ে গেলে সাতজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। স্থানীয়দের দাবি, সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স এসে পৌঁছলে প্রবীণকে বাঁচানো সম্ভব হতো। পঞ্চকুলার ডেপুটি কমিশনার হিমাদ্রি কৌশিক এবং আইন-শৃঙ্খলা বিভাগের ডেপুটি কমিশনার অমিত দহিয়া জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে গাড়িটি থেকে। তবে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে গাড়ির ভিতর থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, বয়স্ক মা-বাবা, স্ত্রী, তিন সন্তান-দুই কন্যা ও এক পুত্রকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন প্রবীণ। প্রবীণের তুতো ভাই জানিয়েছেন, প্রায় ২০ কোটি টাকার দেনা চেপেছিল পরিবারের মাথায়।
পরিবার সূত্রে খবর, কয়েক বছর আগে হিমাচলপ্রদেশের বড্ডিতে একটি কারখানা খুলেছিল মিত্তল পরিবার। কিন্তু ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় ওই কারখানার দখল নেয় ব্যাঙ্ক। তাঁদের দু’টি ফ্ল্যাট এবং গাড়িও বাজেয়াপ্ত হয়। তাতেই পরিবারের সকলে আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা যাচ্ছে।