নয়াদিল্লি: সারা দেশে নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোখার লড়াইয়ের সামনে সমস্যার কারণ হয়ে উঠেছেন মার্চের মাঝামাঝি নিজামুদ্দিনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা লোকজন, যাঁদের মধ্যে আছেন একাধিক বিদেশি নাগরিকও। এঁরা দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন বলে অনুমান। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তাই সব রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তবলিগ জামাতে সামিল সব বিদেশিকে খুঁজে বের করে আপাদমস্তক স্ক্রিনিং অর্থাত্ পরীক্ষা করতে হবে। এমন যদি হয় যে, কোনও বিদেশির মধ্যে কোভিড ১৯এর কোনও উপসর্গ নেইও, তবে তাঁকে প্রথম যে বিমান পাওয়া যাবে, তাতেই তুলে ফেরত পাঠিয়ে দিতে হবে। ততদিন এ ধরনের কাউকে পেলে অবশ্যই আটকে কোয়ারেন্টিন করে রাখতে হবে ওই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের। সেইমতো রাজ্যে রাজ্যে এঁদের খুঁজে বের করার জোরদার চেষ্টা চলছে। প্রশাসনের লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
সরকারের অ্যাডভাইসরিতে আরও বলা হয়েছে, জামাতের বিদেশি কিছু টিম দেশের ভিতরে নানা জায়গায় ঘুরছে, এরা করোনাভাইরাসের বাহক হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের তথ্য হল, ভারত থেকে যাওয়া তবলিগ জামাতের লোকজন ২৭ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে হওয়া এক ধর্মীয় সভায় হাজির ছিলেন। তাঁদের বেশ কয়েকজনের কোভিড১৯ টেস্টের ফল পজিটিভ এসেছে বলে খবর। তাই মালয়েশিয়া থেকে আসা সকলের পূর্ণাঙ্গ স্ক্রিনিং হওয়া দরকার। বর্তমানে ৭০টির বেশি দেশ থেকে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে আসা প্রায় ২০০০ বিদেশি তবলিগের কাজে সারা দেশে ছড়িয়ে আছে। তাদের এদেশে থাকার মেয়াদ ৬ মাস। দিল্লির নিজামু্দ্দিনে তবলিগের সদর দপ্তর থেকে বিভিন্ন রাজ্যে থাকা বিদেশি তবলিগ টিমগুলিকে ফিরে আসতে তলব করা হচ্ছে, তাদের স্ব স্ব দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে খবর।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে বলেছে, মারকাজ নিজামুদ্দিনকে এই বলে সাবধান করে দিতে হবে যে, যারা ট্যুরিস্ট ভিসার দৌলতে সমাজসেবামূলক কাজ করছে, তাদের ভিসার শর্ত লঙ্ঘনকারী বলে দেখা হবে, কেননা পর্যটক ভিসায় এসে তবলিগের কাজকর্ম করার অনুমতি নেই।
মন্ত্রকের তথ্য, গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রায় ২১০০ বিদেশি ভারতে এসেছেন যাঁরা দেশের নানা প্রান্তে তবলিগ জামাতের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। এঁদের অনেকে করোনা পজিটিভ হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও বিদেশমন্ত্রককে বলা হয়েছে, তারা যেন বিদেশে ভারতীয় দূতাবাসগুলিকে নির্দেশ দেয়, তবলিগ জামাতের কাজকর্মের জন্য ব্যবহার করতে পারে, এমন লোকজনকে যেন ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া বন্ধ করা হয়।

দিল্লির নিজামুদ্দিনে মারকাজের সভায় যোগ দিতে আসা লোকজনের থেকেই ভারতে ব্যাপক হারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। নানা দেশ থেকে বার্ষিক সমাবেশ, অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লোকজনের আসা শুরু হয়েছিল ফেব্রুয়ারির শেষ, মার্চের গোড়ায়। যেহেতু রবি ও সোমবারের মধ্যে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৪ জনের করোনা সংক্রমণ পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাই আরও অনেকের সংক্রামিত হওয়ার বিপদ রয়েছে। এপর্যন্ত সারা দেশে শতাধিক সংক্রমণের সঙ্গে ওই জামাত সমাবেশের সংযোগ মিলেছে।