লাহৌর: পানামা দুর্নীতিকাণ্ডে নাম জড়ানোর পর স্বেচ্ছায় নির্বাসনে গিয়েছিলেন। চার বছর পর ফের দেশে ফিরলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। এই মুহূর্তে তীব্র সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সঙ্কটের সঙ্গে যুঝছে তারা। সেই আবহেই জানুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে চলেছে। তার আগেই দেশে ফিরলেন নওয়াজ। রাজনীতিতে নয়া ইনিংস শুরু করতেও নওয়াজ দেশে ফিরলেন বলে মত সেদেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
নওয়াজের প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত যদিও আগেই মিলেছিল। এবছরের গোড়াতেই দাদাকে প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে চান বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নওয়াজের ভাই শেহবাজ শরিফ, এবছর ১৩ অগাস্ট যাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বে ইতি পড়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরকার ভেঙে দেন শেহবাজ। পরবর্তী নির্বাচনে দাদা যাতে অংশ নিতে পারেন, তার জন্যই শেহবাজ এমন সিদ্ধান্ত নেন বলে শোনা যায়।
ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর যেদিন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন শেহবাজ, সেই দিন থেকেই তিনি নওয়াজকে দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হন বলে শোনা যায়। দলের অভ্যন্তরীণ পরিষদীয় বৈঠকে তা পরিষ্কার ভাবে জানিয়েও দেন শেহবাজ। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "বিদেশ থেকে ফিরে আসবেন নওয়াজ শরিফ। চতুর্থ বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশকে ফের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তিনি।"
এর পর নওয়াজের দেশে ফেরা ছিল সময়ের অপেক্ষা। শনিবার সেই মতো দুবাই থেকে রওনা দেন তিনি। দুপুরে পৌঁছে যান পাকিস্তান। বিগত কিছুদিন ধরে সেখানেই ছিলেন নওয়াজ। পাকিস্তান পৌঁছে প্রথমে ইসলামাবাদ যাবেন তিনি। তার পর যাবেন লাহৌর। সেখানে তাঁর সমর্থকরা জমায়েত করছেন সকাল থেকে। তাঁদের উদ্দেশে নওয়াজ ভাষণ দিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তার আগে দুবাই বিমানবন্দরে নওয়াজ বলেন, "চার বছর পর পাকিস্তানে ফিরছি। যেদিন পাকিস্তান ছেড়ে এসেছিলাম, একবিন্দু খুশি ছিল না মনে। কিন্তু আজ আমি খুশি।"
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন নওয়াজ। তিনি বলেন, "দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে অর্থনৈতিক ভাবে এবং ঐক্যের নিরিখে দেশ ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগে শক্ত হাতে রাশ ধরতে হবে। আমি যে পাকিস্তানকে চিনি, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের টাকাকে বিদায় জানিয়েছিলাম আমরা, বিদ্যুৎ সস্তা ছিল, টাকা স্থিতিশীল ছিল, রোজগারে কমতি ছিল না। দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারত, ওষুধ মিলত সস্তায়।"
আরও একবার রাজীনতিতে প্রবেশ করার লক্ষ্য নিয়েই যে পাকিস্তানে ফিরছেন তিনি, সেকথাও গোপন রাখেননি নওয়াজ। তিনি বলেন, "নির্বাচন কমিশন যে দিন ঠিক করবে, সকলে সেই নির্দেশ মানবেন। নির্বাচন কমিশনের কথাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এখনকার পাক নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ। তারা সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে বলে আশাবাদী আমি। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। কিছু কাজ পড়ে রয়েছে। জনগণনা হয়ে গিয়েছে। এখনও সীমানা পুনর্বিন্যাস বাকি। সেই সব দেখতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।" তাঁর পরিবারের প্রতি সুবিচার হয়নি বলেও দাবি করেন নওয়াজ। বলেন, "১৫০ শুনানির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে। শুধু আমি নই, ক্লিনচিট পাওয়া সত্ত্বেও আমার মেয়েকে হেনস্থা হতে হয়েছে। আমার সরকারে তো ও কোনও পদেই ছিল না।"
২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে স্বাস্থ্যজনিত কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে রয়েছেন নওয়াজ। ২০২৭ সালে পানামা দুর্নীতিতে নাম জড়ায় তাঁর। করফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা বিদেশের বিভিন্ন সংস্থায় বিনিয়োগের অভিযোগ ওঠে। তার জেরে ২০১৮ সালে পাক সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজকে ১০ বছরের সাজা শোনায়। তিনি জীবনে আর কখনও সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হবতে পারবেন না বলে নির্দেশ দেয়। কোনও রাজনৈতিক দলের মাথায় থাকতে পারবেন না বলেও জানানো হয়। এর পর জামিন নিয়ে লন্ডনে চিকিৎসা করাতে যান।
তার পর জামিনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও, আর দেশে ফেরেননি নওয়াজ। সেখানেই স্বেচ্ছা নির্বাসন কাটাচ্ছিলেন এতদিন। কিন্তু শেহবাজ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দাদাকে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। চলতি সপ্তাহেই সেই সংক্রান্ত যাবতীয় বাধা উঠে যায়। কারণ ইসলামাবাদ হাইকোর্ট নওয়াজকে সুরক্ষাজনিত জামিন দিয়েছে, ফলে দেশে ফিরেই গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা নেই নওয়াজের।