নয়াদিল্লি: প্রকৃতির সৃষ্টি নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনী। বিখ্যাত শিল্পীদের সৃষ্টি, বিশিষ্টদের সংগ্রহে থাকা শিল্পকর্ম তুলে ধরা হবে সকলের সামনে। ফ্রান্সের মার্সে মিউজিয়াম অফ ইউরোপিয়ান অ্যান্ড মেডিটেরানিয়ান সিভিলাইজেশন এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। দলে দলে সাধারণ মানুষকে সেখানে আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু নগ্ন হয়ে মিউজিয়ামে প্রদর্শনী দেখতে বলা হয়েছে। শিল্পকর্মের সঙ্গে যাতে নিবিড় ও আত্মিক সংযোগ তৈরি হয়, তার জন্যই এমন অভিনব আবেদন। (Naturism Exhibition)
মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু Naturism. নয় নয় করে ৬০০-র বেশি শিল্পকর্ম তুলে ধরা হবে প্রদর্শনীতে। এই প্রদর্শনীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস, সংস্কৃতি। প্রকৃতির সৃষ্টিকে কুর্নিশ জানাতেই এমন উদ্যোগ। এমনিতে নগ্নতা বরাবরই প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে নগ্নতা বেশি প্রাধান্য পেয়েছে ফ্রান্সেই। তাই নগ্ন হয়ে শিল্পকর্মের প্রদর্শনীতে যাওয়ার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না কেউ। (Art Exhibition to see Naked)
কিন্তু নগ্ন হয়ে প্রদর্শনীতে যাওয়ার এমন আবেদন কেন? এর নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ তত্ত্ব- পৃথিবীতে আবির্ভাবের সময় গায়ে সুতো পর্যন্ত ছিল না। আবার যাবার কালেও কিচ্ছুটি নিয়ে যাওয়া যাবে না। অথচ জীবদ্দশায় দেখনদারিতে খামতি নেই কোনও। দামি ব্র্যান্ডের জামাকাপড়, চাকচিক্য না হলে চলেই না। সংখ্যায় কম হলেও, আজও বিপরীত ভাবনার কিছু মানুষ রয়েছেন পৃথিবীতে। যাঁরা প্রকৃতির সৃষ্টির উপর কোনও কিছুর মোড়ক চান না। ব্যক্তিগত জীবন হোক বা সামাজিক ক্ষেত্রে, নগ্নতাই তাঁদের কাছে স্বাভাবিক। যৌনতার ছিটেফোঁটা থাকবে না, নগ্নতাকে স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণ করবেন সকলে, এমন সমাজ চান তাঁরা। এহেন মতবাদ Naturism হিসেবে পরিচিত পশ্চিমি দেশগুলিতে। এই Naturism নিয়েই যেহেতু প্রদর্শনী, তাই নগ্ন হয়ে মিউজিয়ামে ঢোকার আবেদন জানানো হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ফ্রান্সে পর্যটকদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে নগ্নতাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেন যাঁরা, তাঁদের প্রথম পছন্দ ফ্রান্স। ফ্রান্সের জলবায়ু, তিন সাগরের উপস্থিতি সেই আকর্ষণে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। এখানে নগ্নতা নিয়ে কোনও ছুঁৎমার্গ নেই। আজকাল প্রকৃতির মাঝে নগ্ন হওয়ার ঝোঁক বেড়েছে যদিও। মানুষজন প্রকৃতির মাঝে ধ্যান করেন, যোগব্যায়াম করেন, প্রাণভরে শ্বাস নেন। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া সবকিছুকে বর্জন করতে চাওয়ার এই যে অভীপ্সা, তাকে বোঝা জরুরি।
এ বছর জুলাই মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ওই মিউজিয়ামে ১ লক্ষের বেশি মানুষের পা পড়েছে। ৬০০টি বিশেষ প্রদর্শনী হয়েছে, যেখানে নগ্ন হয়ে শিল্পকর্ম চাক্ষুষ করেছেন সাধারণ মানুষজন। কারও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল, কারও কারও আবার প্রথম অভিজ্ঞতা। শিল্পীর সৃষ্টির সঙ্গে নিজের শরীরের মধ্যে অদ্ভুত সংযোগ খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। প্রকৃতির সৃষ্টিকে তার মতো করেই গ্রহণ করতে উৎসাহ পেয়েছেন।
নগ্ন হয়ে মিউজিয়ামে প্রবেশের এই রীতি যদিও একেবারেই নতুন নয়। এর আগে, প্যারিস, ভিয়েনা, মন্টরিয়াল, বার্সেলোনা, মিলান এমনকি ইংল্যান্ডেও এমন উদ্যোগ চোখে পড়েছে আগে। তবে এই প্রথম কোনও মিউজিয়াম গোটা একটি প্রদর্শনীই নগ্নতাকে উৎসর্গ করল।