নয়াদিল্লি: নারী নির্যাতনের ভূরি ভূরি ঘটনা উঠে আসছে প্রায় প্রতিদিনই। সেই আবহেই স্ত্রীর উপর স্বামীর অকল্পনীয় অত্যাচারের ঘটনা সামনে এল ফ্রান্সে। অভিযোগ, মাদক খাইয়ে স্ত্রীকে বার বার ধর্ষণ করেছেন স্বামী নিজে। পাশাপাশি, বাইরে থেকে প্রায় ৫০ জন লোক এনে স্ত্রীকে ধর্ষণও করিয়েছেন তিনি, ক্যামেরাবন্দি করেছেন সেই ভিডিও। বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। (Viral News)


৭১ বছরের ডমিনিক পি-র বিরুদ্ধে এই মারাত্মক অভিযোগ এনেছেন তাঁর ৭০ বছরের স্ত্রী। মহিলার দাবি, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁর উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়ে গিয়েছেন স্বামী ডমিনিক।  বাইরে থেকে অচেনা ব্যক্তিদের এনে তাঁকে ধর্ষণ করাতেন। মাদক খাইয়ে অচেতন করে চলত নির্যাতন। এত বেশি ডোজ দেওয়া হতো যে, কিছু বুঝতেই পারেননি ওই মহিলা। একটি মামলার তদন্তে পুলিশই বিষয়টি আবিষ্কার করে। (France News)


অভিযুক্ত ডমিনিক ফ্রান্স সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের প্রাক্তন কর্মী। ৫০ জনের বেশি লোক এনে, স্ত্রীকে তিনি ধর্ষণ করিয়েছেন বলে অভিযোগ। ২০১১ সালে অপরাধের সূচনা। সেই সময় প্যারিসের কাছে থাকতেন ওই দম্পতি। দু'বছর পর মাজাঁয় সরে যান। কিন্তু সেখানেও চলতে থাকে অত্যাচার। জানা গিয়েছে, coco.fr নামের একটি ওয়েবসাইটে অচেনা ব্যক্তিদের সঙ্গ আলাপ করতেন ডমিনিক। স্ত্রীকে ধর্ষণ করার জন্য বাড়িতে ডেকে পাঠাতেন তাঁদের। সেই মতো মাদক খাইয়ে অচেতন করে রাখতেন স্ত্রীকে। সেই অবস্থায় রাতভর চলত অত্যাচার। 


স্ত্রীর ধর্ষকদের কড়া নির্দেশও দিয়ে রেখেছিলেন ডমিনিক। গালে আফটার শেভ লাগিয়ে আসা বারণ ছিল। সিগারেটের গন্ধও চলবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। নির্যাতিতাকে ছোঁয়ার আগে হাত গরম করে নিতে হতো, জামাকাপড় ছেড়ে আসতে হতো রান্নাঘরেই। বাথরুমে কিছু ফেলে রাখা বারণ ছিল। ধর্ষণের সময় ভিডিও রেকর্ডিং চলত। ধর্ষকদের গালিগালাজও করতে হতো অত্যাচারের চলাকালীন। তাঁকে অচৈতন্য করে এতকিছু যে চলছে, তা বুঝতেই পারেননি ওই মহিলা।


২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডমিনিকের উপর প্রথম নজর পড়ে পুলিশের। শপিং সেন্টারে তিন মহিলার স্কার্টের নীচে ক্যামেরা রাখার ঘটনায় আটক হন তিনি। সেই মামলার তদন্তে নেমে ডমিনিকের বাড়ি পৌঁছয় পুলিশ। সেখানে তাঁর কম্পিউটার ঘাঁটতে হাজার হাজার ছবি এবং বেশ কিছু ভিডিও হাতে আসে। দেখা যায়, অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ওই মহিলা। সেই অবস্থায় তাঁর উপর অকথ্য অত্যাচার চলছে। 


ভিডিও দেখে ৭২ জনকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ৯২টি ধর্ষণের মামলায় তাঁদের সংযোগ মিলেছে। ৫১ জন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে ২১ থেকে ৬৮ বছর বয়সিরা রয়েছেন। কেউ পেশায় দমকলল কর্মী, কেই সাংবাদিক, কেউ বাণিজ্যিক সংস্থায় কর্মরত, কেউ ট্রাক ড্রাইভার। ধৃতদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, দু'জনের সম্মতিতেই সব ঘটছে বলে জানতেন তাঁরা। সেই মতোই এগিয়েছিলেন। যদিও ডমিনিকের দাবি, স্ত্রী যে কিছুই জানতেন না, মাদক খাইয়ে তাঁকে অচৈতন্য করে রাখা হয়েছে, তা ধর্ষকরা সকলেই জানতেন। শুধুমাত্র তিন জনই সরে দাঁড়িয়েছিলেন। বাকি সকলেই সেই অবস্থায় তাঁর স্ত্রীর উপর যৌন নির্যাতন চালান। এই গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত আদালতও। ডিসেম্বরের মধ্যে আদালত রায় দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনায় টাকার লেনদেনের কোনও তথ্য এখনও পর্যন্ত সামনে আসেনি।