চেন্নাই: বিতর্কের জেরে শেষ মেশ পিছু হটল কেন্দ্র। দইয়ের প্যাকেটে হিন্দি ব্যবহারের নির্দেশ প্রত্যাহার করা হল (Hindi Imposition)। হিন্দিভাষী নয় তামিলনাড়ু। সেখানেই দইয়ের প্য়াকেটে হিন্দিতে লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাতে জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অসন্তোষ প্রকাশ করে তামিলনাড়ু সরকার, দুগ্ধ সমবায় এমনকি পড়শি রাজ্য কর্নাটকও আপত্তি জানায়। তাতেই শেষ মেশ নির্দেশিকা প্রত্যাহার করা হল (Dahi Label Row)।
আঞ্চলিক ভাষার পরিবর্তে হিন্দিতে 'দহি' লেখার নির্দেশ আসে
বিতর্কের সূত্রপাত খাদ্যের নিরাপত্তা এবং গুণমান নির্ধারণকারী সংস্থার (FSSAI) একটি নির্দেশিকা ঘিরে। সম্প্রতি FSSAI-এর তরফে তামিলনাড়ুর দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায়ের উদ্দেশে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, দইয়ের প্যাকেটে ইংরেজিতে 'Curd' বা তামিলে 'থয়ির' লেখার পরিবর্তে হিন্দিতে 'দহি' লিখতে হবে।
FSSAI-এর এই নির্দেশিকা ঘিরেই ফের জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠতে শুরু করে। তামিলনাড়ুর দুগ্ধ সমবায়ের তরফে তা নিয়ে আপত্তি জানানো হয়। পড়শি রাজ্য কর্নাটকও এ নিয়ে আপত্তি জানাতে শুরু করে। সরাসরি FSSAI-কে চিঠি লেখে তারা। দইয়ের প্যাকেটে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারই চালু রাখার অনুমোদন চাওয়া হয় তাতে। কর্নাটকের যুক্তি, Curd একটি সাধারণ শব্দ, যে কোনও ভাষাতেই এর ব্যবহার চলে। কিন্তু 'দহি' একটি নির্দিষ্ট পণ্যকে বোঝায়, স্বাদে-গঠনে Curd-এর চেয়ে অনেকটাই আলাদা।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্য়াণ মন্ত্রকের অধীনে রয়েছে FSSAI. তাদের দইয়ের প্যাকেটে হিন্দি ব্যবহারের নির্দেশিকার তীব্র নিন্দা করেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। এই নির্দেশিকা আসলে জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা এবং দক্ষিণের মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার প্রচেষ্টা বলে দাবি করেন।
ট্যুইটারেও এ নিয়ে সরব হন স্ট্যালিন। তাঁর বক্তব্য ছিল, 'হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার এই নির্লজ্জ প্রচেষ্টা এতদূর গড়িয়েছে যে, দইয়ের প্য়াকেটের উপর হিন্দি লেখার কথা বলা হচ্ছে। তামিল এবং কন্নড় নির্বাসিত হচ্ছে আমাদের নিজের রাজ্যেই। আমাদের মাতৃভাষাকে এমন নির্লজ্জ ভাবে অবহেলা করছেন যাঁরা, দক্ষিণের মাটি থেকে তাঁদের নিষ্কাশন অবধারিত'।
চমকপ্রদ ভাবে এ বিষয়ে তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি কে আন্নামালাইকে পাশে পান স্ট্যালিন। আন্নামালাই জানান, নির্দেশিকা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু FSSAI-এর নির্দেশিকা তার পরিপন্থী। তার পরই নির্দেশিকা তুলে নেওয়া হল।
হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বার বার
আগেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে তামিলনাড়ু। বরাবর হিন্দি চাপানোর বিরোধিতা করে এসেছে এই রাজ্যে। হিন্দির বিরোধিতায় সেই তিনের দশক থেকে সরব তারা। হিন্দি বিরোধী আন্দোলনও হয়ে আসছে সেই থেকে। ছয়ের দশকে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং সেই আন্দোলনে ভর করেই ক্ষমতায় আসে স্ট্যালিনের দল দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাঝগম (DMK)। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তামিলনাড়ুর স্বতন্ত্রতার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। হিন্দিভাষী রাজ্যগুলি ছাড়া, দক্ষিণের অন্য রাজ্যগুলিকে গোটা দেশের সঙ্গে সংযোগ রক্ষায় ইংরেজির ব্যবহারে সায় দেন। তার পরও বিতর্কের অবসান ঘটেনি। কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতিতে তৃতীয় ভাষা হিসেবে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলে, প্রতিবাদে সরব হয় তামিলনাড়ু।