দীপক ঘোষ, কলকাতা: পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ইলেকট্রিক স্কুটারে চেপে নবান্নে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কুটার চালান পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। যদিও, এনিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি।


ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে। এক মাসে তিনবার বেড়ে রান্নার গ্যাসের দাম আটশো ছাড়িয়েছে। চড়া এই দামের ছ্যাঁকা লাগছে সাধারণ মানুষের পকেটে। এর প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার গাড়ির বদলে বাড়ি থেকে নবান্নে গেলেন ইলেকট্রিক স্কুটারে চেপে। স্কুটার চালালেন পুরমন্ত্রী।


এদিন সকাল ১১টা ২০ নাগাদ হাজরা থেকে স্কুটারে চেপে রওনা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী ও পুরমন্ত্রী দু’জনের মাথায় ছিল নীল হেলমেট। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম দু’জনের গলাতেই ছিল প্ল্যাকার্ড।


হাজরা থেকে এক্সাইড মোড়, বিদ্যাসাগর সেতু হয়ে তাঁরা নবান্নে যান। এর মধ্যে তিনি যখন হেস্টিংসে, তখনই সেখানে বিজেপির রথ বেরোয়। মুখ্যমন্ত্রী ও ফিরহাদ হাকিমের স্কুটারের আশপাশের বাইকে ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। নবান্নে পৌঁছে পেট্রোল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের সময় এলেই বলে বেড়ান গ্যাস দেব। ওটা সত্যি সত্যি গ্যাস। মানে গ্যাস বেলুনোর মতো। কিন্তু সেই রান্নার গ্যাসের দাম ৮০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এটা ভাঁওতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আম জনতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন?’’


ক্ষমতায় আসার আগে, একবার বাইকে চড়ে নন্দীগ্রামে ঢুকেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জঙ্গলমহলে ছত্রধর মাহাতোর বাইকে চড়েছিলেন তিনি। এদিন ইলেকট্রিক স্কুটারে চড়ার প্রেক্ষাপট অবশ্য ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।


১৯৭৩ সালে ৷ ইন্দিরা গাঁধী যখন প্রধানমন্ত্রী তখন পেট্রোল-কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গরুর গাড়িতে চেপে সংসদে গেছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। আজ সেই বিজেপি দেশের ক্ষমতায়। আর পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ইলেকট্রিক স্কুটারে চেপে নবান্নে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও এতে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘স্টান্টবাজি... এর আগে ছত্রধরের বাইকে চড়ে যা করেছিলেন !’’


এ রাজ্যে পেট্রোল ও ডিজেলে লিটার পিছু এক টাকা করে কর কমিয়েছে তৃণমূল সরকার। তবে এদিক থেকে অন্যান্য অনেক রাজ্য অবশ্য অনেকটা এগিয়ে। কংগ্রেস শাসিত ছত্তীসগঢ় সরকার নিজেদের কর কমানোয়, সেখানে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পেট্রোলের দাম ১২ টাকা কম, ডিজেলের দাম ৪ টাকা কম। রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার পেট্রোপণ্যে ৩৬ থেকে ৩৮ শতাংশ কর কমিয়ে সাধারণ মানুষকে সুরাহা দিয়েছে। বিজেপি শাসিত অসমে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম লিটার পিছু ৫ টাকা করে কর কমানো হয়েছে। মেঘালয় সরকার পেট্রোলের দাম লিটার পিছু ৭ টাকা ৪০ পয়সা এবং ডিজেলের দাম লিটারে ৭ টাকা ১০ পয়সা কমিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাম-কংগ্রেসের প্রশ্ন, পেট্রোপণ্যের ওপর চড়া কর বসিয়ে মোদি সরকার আর মমতা সরকার কেন ফায়দা তুলে যাচ্ছে?


পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মানেই পরিবহণের খরচ বৃদ্ধি। আর পরিবহণের খরচ বাড়লে অবধারিতভাবে দাম বাড়বে নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসপত্রের। তার প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষেরর রোজকার জীবনে।