নয়া দিল্লি: কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে ড্রপ আউট থেকে টাটা, বিড়লা এমনকী, আম্বানিদেরও টপকে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী! ব্য়বসায় গৌতম আদানির এই চমকপ্রদ উত্থানের অনেকটাই, নরেন্দ্র মোদি গুজরাতের মুখ্য়মন্ত্রী এবং তারপর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর। কিন্তু, মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশের পর, সেই আদানির সাম্রাজ্য়ই টলোমলো। হুড়মুড়িয়ে ধস নেমেছে শেয়ারে।


হঠাৎই রকেট গতিতে বিশ্বের তৃতীয় ধনী! তাও আবার মুকেশ আম্বানিকে ছাড়িয়ে। দেশের প্রায় সর্বশক্তিমান ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা। আর এখন মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট সামনে আসার পরই সেই আদানির ব্যবসা কার্যত টলমল। এই গৌতম আদানিকে নিয়ে এখন উত্তাল গোটা দেশ। নরেন্দ্র মোদি গুজরাতে ক্ষমতায় আসার আগে অবধি, গৌতম আদানির নাম ভারতীয় শিল্পমহলের প্রথম সারিতে কার্যত শোনাই যেত না।


২০০১ সালে নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন বিশ্বের ধনীর তালিকা তো দূরের কথা, আদানি গোষ্ঠীর একমাত্র লিস্টেড সংস্থা, আদানি এন্টারপ্রাইসেস লিমিটেডের বাজারদর মুকেশ আম্বানির সংস্থার ৫০০ ভাগের একভাগ ছিল। অন্য়দিকে, ২০০২ সালে গুজরাত হিংসার পর, শিল্পপতিদের একাংশের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 


২০০৩ সালে CII'এর একটি সভায় সরাসরি নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেছিলেন শিল্পপতি রাহুল বাজাজ। কিন্তু, সেদিন নরেন্দ্র মোদির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন উঠতি শিল্পপতি গৌতম আদানি। গুজরাতের আরও কয়েকজন শিল্পপতিকে নিয়ে তিনি রিসার্জেন্ট গুজরাত গ্রুপ তৈরি করে CII'কে কার্যত তুলোধনা করেন। যার জেরে CII ক্ষমা চাইত বাধ্য হয়। 


বিশেষজ্ঞরা বলেন, এরপর থেকেই শুরু হয় মোদি-আদান গভীর সম্পর্ক। আর সেইসঙ্গে আদানির ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। ২০০০ সালে আদানি গোষ্ঠীর ব্য়বসার অঙ্ক ছিল ৩ হাজার ৩০০ কোটির। কিন্তু, ২০১৩ সালে হঠাৎই সেটা বেড়ে হয় ৪৭ হাজার কোটি। 


বিরোধীদের দাবি, আদানির বিমানে চড়েই লোকসভা ভোটের প্রচার সেরেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি যে বিমানে গুজরাত থেকে দিল্লি এসেছিলেন, সেটিও আদানিরই ছিল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে গৌতম আদানিকে। আর সেখানে একের পর এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে লাফিয়ে বেড়েছে তাঁর সম্পত্তি। এরকমই এক সফরে আদানির সংস্থাকে ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দিয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। 


আরও পড়ুন, ‘জিন্দেগী কে সাথ ভি, জিন্দেগী কে বাদ ভি’, শ্রুতিকথা হয়ে যাবে না তো! সর্বস্ব হারানোর আশঙ্কায় কোটি কোটি মানুষ


২০১৩ সালে গৌতম আদানির সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-এ সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লক্ষ ২৭ হাজার কোটি টাকা।  অর্থনীতিবিদ সৈকত সিংহ রায় বলেন, "আদানির সঙ্গে মোদিরর গুজরাত থেকে আলাপ। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই সুযোগে সম্পর্ক দৃঢ়। কলেজ ড্রপ আউট। বাঁকা পথ ভাল বোঝে।" 


গোটা বিশ্বচে চমকে দিয়ে সবাইকে টপকে বিশ্বের তৃতীয়, এমনকী কিছুদিনের জন্য দ্বিতীয় ধনীর জায়গাও নিয়ে নেন তিনি। কিন্তু, হিন্ডেনবার্গের চাঞ্চল্য়কর রিপোর্ট সামনে আসার পরই আদানির সংস্থার শেয়ারে ধস নেমেছে। ১৭ জানুয়ারি আদানি গোষ্ঠীর মোট সম্পত্তি ছিল ১০ লক্ষ কোটি। বিশ্বের ধনীদের তালিকায় গৌতম আদানির স্থান ছিল তৃতীয়। কিন্তু, হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের পর ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি নেমে এসেছেন ২১ নম্বরে। আর সম্পত্তির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ লক্ষ ৪ হাজার কোটি টাকা। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের পর থেকে শেয়ার বাজারে প্রায় ১০ লক্ষ কোটি টাকা খুইয়েছে আদানি গ্রুপ। 


সেইসঙ্গে মার্কিন বাজারের ডাও জোন্স সূচক থেকে আদানি এন্টারপ্রাইজের নথিভুক্তি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। শোনা যায়, ১৯৯৭ সালে বন্দুক ঠেকিয়ে, আদানিকে অপহরণ করেছিল 
দুষ্কৃতীরা। কিন্তু তারপরও সাহসে ভর করে রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। এবার কি শেয়ার বাজারের এই বিপর্যয় থেকে সংস্থাকে রক্ষা করতে পারবেন তিনি? সেই উত্তর দেবে সময়।