নয়াদিল্লি: জলের নীচে সবচেয়ে বেশিদিন কাটিয়ে রেকর্ড গড়লেন জার্মানির বাসিন্দা। একদিন, দু’দিন, এক সপ্তাহ বা একমাস নয়। ১২০ দিন জলের নীচে কাটিয়ে সাড়া ফেললেন তিনি। এর আগে জলের নীচে ১০০ দিন কাটানোর রেকর্ড ছিল। সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন জার্মান নাগরিক রুডিগার কচ। (German Man Living Underwater)
পেশায় এ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার রুডিগার। জলের নীচে দীর্ঘতম সময় ধরে বাস করে শুক্রবার নয়া রেকর্ড গড়েছেন তিনি। পানামা উপকূলে জলের নীচে ১২০ দিন কাটিয়ে ফেলেছেন রুডিগার। জলের নীচে একটি ক্যাপসুলেই সংসার পেতেছিলেন তিনি। (Guinness World Records)
জলের নীচে দীর্ঘদিন সময় থাকতে গেলে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। জলের চাপ কমাতে, জল এবং গ্যাসের পৃথকীরণে ডিপ্রেসারাইজেশন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় এমনিতে। কিন্তু সেসব ছাড়াই জলের নীচে ১২০ দিন কাটিয়ে ফেলেছেন রুডিগার।
৫৯ বছর বয়সি রুডিগার জলের নীচে ৩২০ স্কোয়্যার ফুচ আয়তনের একটি ক্যাপসুলে সংসার পেতেছিলেন। ওই ক্যাপসুলের মধ্যে ১২০ দিন কাটিয়ে শুক্রবার স্থলভাগে উঠে আসেন তিনি। আর তাতেই জলের নীচে দীর্ঘতম সময় কাটানোর জন্য গিনেস ওয়র্ল্ড রেকর্ডসে নাম উঠে গিয়েছে তাঁর। এর আগে আমেরিকার জোসেফ দিতুরি ১০০ দিন জলের নীচে কাটিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন। সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন রুডিগার।
জল থেকে উঠে এসে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন রুডিগার। তিনি বলেন, “দারুণ রোমাঞ্চকর অনুভূতি। উঠে আসার পর আসলে আফশোসই হচ্ছে। বেশ ভালই ছিলাম। বিশেষ করে অন্ধকার নেমে আসে যখন, সমুদ্র আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। অদ্ভুত শান্তি বিরাজ করে চারিদিকে। ভাষায় বলে বোঝানো সম্ভব নয়। অভিজ্ঞতা অর্জন করলে বোঝা সম্ভব।”
জল থেকে উঠে এসে উদযাপনে মাতেন রুডিগার। শ্যাম্পেন খোলেন, সুখটান দেন সিগারে। একটি নৌকা জল থেকে তুলে তাঁকে স্থলভাগে ফিরিয়ে আনে। জলের নীচে তিনি যে মন্দ ছিলেন না, তা বার বার বুঝিয়ে গিয়েছেন রুডিগার। জলের নীচে যে ক্যাপসুলে সংসার পেতেছিলেন তিনি, সেখানে একটি খাট, শৌচাগার, টিভি ছিল। ছিল কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ এবং শরীরচর্চার সামগ্রহীও।
উত্তর পানামা উপকূল থেকে ১৫ মিনিট দূরে জলের নীচে বাস করছিলেন রুডিগার। তাঁর ক্যাপসুলটি একটি কাঠামোর সঙ্গে বাঁধা ছিল, যার কিছুটা অংশ জলের উপরে রয়েছে। ওই কাঠামোর সিঁড়ির ব্যবস্থা ছিল, যাতে প্রয়োজনে চিকিৎসকরা রুডিগারের কাছে পৌঁছতে পারেন, পাশাপাশি, নিত্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া যায় তাঁর কাছে। সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল। ছিল জেনারেটরও। শুধু স্নান করার ব্যবস্থা ছিল না। ক্যামেরায় ২৪ ঘণ্টা তাঁর সব গতিবিধি রেকর্ড হতো। একবারও রুডিগার উপরে উঠে আসেন বলে একবারও চোখে পড়েনি ফুটেজে। রুডিগারের মতে, উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকলে, হেসেখেলে সমুদ্রের নীচেও থাকতে পারে মানুষ।
রুডিগার জানিয়েছেন, তিনি জুল ভার্নের সাহিত্যের অনুরাগী। বিশেষ করে ‘টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’-র ক্যাপ্টেন নিমো তাঁর সবচেয়ে পছন্দের। জলের নীচে সেই বই সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।