পুরী : পুরীর জগন্নাথ। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে যার ভক্ত ছড়িয়ে। বিভিন্ন সময়ে কৃষ্ণ, নরসিমহা ও বিষ্ণু হিসেবে পূজিত হন। প্রভু জগন্নাথ, তাঁর ভাই বলভদ্র ও বোন সুভদ্রার সবথেকে খ্যাতনামা মন্দির রয়েছে ওড়িশার পুরীতে। ফি বছর পুরীর জগন্নাথের রথযাত্রা পালিত হয় মহাসমারোহে। 


এবার ১২ জুলাই রথযাত্রা। কিন্তু, করোনা অতিমারির কারণে গতবারের মতো এবারও ভক্তদের শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াই রথযাত্রা পালিত হবে। তবে, গোটা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভক্তদের জন্য উৎসবের লাইভ-স্ট্রিম হবে। এছাড়া সম্পূর্ণ টিকাকরণ ও কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট যাঁদের রয়েছে, তাঁদেরই শুধুমাত্র মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্দিরের মুখ্য প্রশাসক কৃষ্ণ কুমার।  


২০২১-এ রথযাত্রার সম্পূর্ণ সূচি : 



  • রথযাত্রার দিন জগন্নাথ ও তাঁর ভাই-বোনদের রথ টানা হয় গ্র্যান্ড রোড ধরে। নিয়ে যাওয়া হয় ৩ কিলোমিটার দূরের গুণ্ডিচা মন্দিরে(মাসির বাড়ি) । সেখানে এক সপ্তাহ রাখা হয়।

  • এবার ১২ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু রথযাত্রা। রথ টানা হবে বিকাল ৪টে থেকে।

  • বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে হবে সোনা বেশ।

  • মূল মন্দিরে জগন্নাথ-বলভদ্র ও সুভদ্রার প্রত্যাবর্তন বা নীলাদ্রি বিজে ২৩ জুলাই। এই উৎসবের শুরু বিকেল ৪টেয় এবং শেষ রাত ১০টায়।

  • এবার এই রীতি পালিত হবে কম সংখ্যক সেবাইতকে নিয়ে।

  • পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রশাসন রয়েছে রাজ্য সরকারের আইন বিভাগ ও শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যডমিনিস্ট্রশনের আওতায়।


 


পুরীর রথযাত্রার কয়েকটি আকর্ষণীয় বিষয় :



  • জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার নিমকাঠের বিশালাকার তিনটি রথ তৈরি করা হয়। 

  • আপনারা কি জানেন যে, জগন্নাথের এই রথ নন্দীঘোষ(গরুড়ধ্বজ  নামেও পরিচিত) প্রায় ৪৪ ফুট উঁচু ? রথের ১৬টি চাকা। লাল ও হলুদ রং ব্যবহার করা হয়। বলভদ্রর রথটিকে বলা হয় তালধ্বজ। যার উচ্চতা ৪৩ ফুট। ১৪টি চাকা রয়েছে। এগুলি সাজাতে লাল এবং নীলচে-সবুজ রং ব্যবহার করা হয়। সুভদ্রার রথে থাকে ১২টি চাকা। রং ব্যবহার হয়- লাল ও কালো। তাঁর রথের নাম দর্পদলন(অর্থাৎ অহংকারকে বধ করা)। উচ্চতা ৪২ ফুট। উল্লেখ্য, জগন্নাথকে কৃষ্ণের আর এক রূপ বলে ধরা হয়। তাই জগন্নাথের রথ মোড়া হয় লাল ও হলুদ কাপড়ে।

  • পুরীর বিশ্বখ্যাত রথযাত্রা উল্লেখ আছে- ব্রহ্মপুরাণ, পদ্ম পুরাণ, কাণ্ড পুরাণ ও কপিল সংহিতায়।

  • জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে মন্দির থেকে বের করে নিজের নিজের রথে স্থাপন করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় পাহাণ্ডি। 

  • পুরীর মন্দির স্থাপন করেছিলেন রাজা ইন্দ্রদুম্ন। তাঁর রানির স্মৃতিতে তৈরি করা হয়েছে গুণ্ডিচা মন্দির। পুরীর মন্দির থেকে বিগ্রহের যাত্রা শুরু হয় এই গুণ্ডিচা মন্দিরের উদ্দেশ্যেই। চতুর্থ দিনে দেবী লক্ষ্মী তাঁর স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গুণ্ডিচা মন্দিরে আসেন। প্রসঙ্গত, বিগ্রহ তিনটি সাতদিন গুণ্ডিচা মন্দিরে থাকন। উল্টোরথের দিন তাঁদের রথে তুলে ফিরিয়ে আনা হয়।

  • রথযাত্রার শেষের অনুষ্ঠানকে বলা হয়, সোনা বেশ। এই উপলক্ষে দেব-দেবীদের সোনার অলংকারে সাজিয়ে তোলা হয়। গত বছর, দেব-দেবীদের ২০০ কিলোর সোনার অলংকার পরানো হয়েছিল। রথে চড়ে তিন বিগ্রহের যাতায়াতকেই রথ ও উল্টোরথ বলা হয়।


ফি বছর রথযাত্রায় শামিল হন হাজার হাজার ভক্ত। দেশের সব জগন্নাথ মন্দিরেও একইভাবে পালিত হয় রথযাত্রা উৎসব। কিন্তু, গত বছর করোনা অতিমারির কারণে শামিল হতে পারেননি ভক্তরা। এবারও সেই পথেই এগোচ্ছে সামগ্রিক বিষয়। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে জগন্নাথের আরাধনা করবেন তাঁরা ? তা নিয়েই উদ্বেগ রয়েছে ভক্তদের। কিন্তু, ভক্তরা বাড়িতেও জগন্নাথের আরাধনা করে পছন্দের আশীর্বাদ চেয়ে নিতে পারেন প্রভুর কাছে। বলা হয়, প্রভু জগন্নাথ ভক্তদের প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন। বাড়িতে ফুল দিয়ে সাজিয়ে ও চন্দন লেপে আপনিও পুজোর ব্যবস্থা করতে পারেন। তারপর সুগন্ধিযুক্ত ধূপ জ্বালিয়ে আরতি করে ভক্তি নিবেদন করুন। সবশেষে চেয়ে নিন জগন্নাথদেবের আশীর্বাদ।