গৌতম মুখোপাধ্যায়, বালেশ্বর:ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। কোনওমতে প্রাণে বেঁচেছেন কলকাতার বাসিন্দা গৌতম মুখোপাধ্যায়। পরিবারের সঙ্গে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন,  'A1 কোচে ছিলাম।  সবাই প্রায় ঘুমোচ্ছিল। হঠাৎ প্রচন্ড ঝাঁকুনি। যাঁরা শুয়েছিলেন সবাই নীচে পড়ে যান। অনেকেই জখম হয়েছেন। কারও মাথা ফেটেছে। কারও পায়ে খুব লেগেছে। ভয়ঙ্কর অবস্থা। আমরা কোনওমতে বাইরে বেরোতে যাই। দেখতে পাই পাশের বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে, তার ঢুকে গিয়েছে কামরার মধ্যে। দুটি বগি পাশের খালে পড়ে গিয়েছে।' ওই বগিদুটি অধিকাংশ যাত্রী মারা গিয়েছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।


 'ভয়াবহ ঘটনা। আশেপাশে বহু যাত্রী পড়ে রয়েছে। চারিদিক অন্ধকার। কোথাও দেখা যাচ্ছে না। উদ্ধারকাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আরও উদ্ধারকর্মী দরকার। ট্রেনের বগি পাশের খালে, ভয়াবহ ঘটনা।' যেখানে হয়েছে সেটা একটা লোকাল স্টেশন। অনেকে এসেছেন, কিন্তু আরও লোক লাগবে। ৪০ শতাংশ যাত্রীই হয়তো মারা গিয়েচেন, আশঙ্কা দুর্ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জয়দীপ ঘোষ।


শালিমার থেকে চেন্নাই যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। কীভাবে ঘটল এই ঘটনা? সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন ওই ট্রেনেরই যাত্রী রূপম বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার ভয়বহতার বর্ণনা করতে গিয়ে ওই ট্রেনের যাত্রী রূপম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'বিকট আওয়াজের সঙ্গে হঠাৎ ঝাঁকুনি। কতটা হেলে আছে বুঝতে পারছি না।' তিনি আরও বলেন, 'যতবার দাঁড়াবার চেষ্টা করছি। ততবারই পড়়ে যাচ্ছি। কোনদিকে বগি হেলে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। কিছু বুঝতে পারছি না। কীভাবে বেরিয়েছি নিজেও জানি না। যতদূর চোখ যাচ্ছে ততদূর হেলে পড়ে রয়েছে বগিগুলি।'


ক্ষতিপূরণ ঘোষণা:
ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহত ও জখমদের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। যাঁরা দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, গুরুতর জখমদের জন্য ২ লক্ষ টাকা এবং সামান্য জখমদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী।


যে কজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং যাত্রীরা দুর্ঘটনার পরে কথা বলতে পেরেছেন। তাঁরা সকলেই জানিয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রথমে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বালেশ্বরের বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার কাছাকাছিই রয়েছে লোকালয়। ফলে দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রাই ঝাঁপিয়ে পড়েন উদ্ধারকাজে। প্রত্যক্ষদর্শী, যাত্রীদের কয়েকজন জানাচ্ছেন, স্থানীয় বাসিন্দারাই টর্চ হাতে এসে পৌঁছন ঘটনাস্থলে। তখন চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছিল না। লাইন উপড়ে এদিক ওদিক ছড়িয়ে রয়েছে পরপর বগি। মালগাড়ির উপর উঠে গিয়েছে করমন্ডল এক্সপ্রেসের কামরা। পাল্টি খেয়ে পড়ে রয়েছিল একাধিক কামরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ভিতর থেকে অনেকেই চিৎকার করছিলেন। 


তখনই উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্ধকারের মধ্যে হাতে টর্চ নিয়ে শুরু করা হয় উদ্ধারকাজ। তাঁরাই অনেককে ট্রেন থেকে বের করেন। যতটা পারেন সাহায্য করেন। টর্চ সম্বল করেই উদ্ধারকাজ চলেছে। জখমদের উদ্ধার করে চিকিৎসার চেষ্টা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, 'দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয়রা ছুটে এসেছেন বলে জানান তিনি। তাঁরাই তাঁদের বের করে, রেললাইন ধরে হাঁটিয়ে কিছুটা দূরে নিয়ে এসেছেন।'


আরও পড়ুন: ঘটনাস্থলে যাচ্ছে রাজ্যের টিম, ট্রেন দুর্ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ট্যুইট মুখ্যমন্ত্রীর