কলকাতা: ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে ফের রাজ্য সরকারকে নিশানা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের। একটি ভিডিও শেয়ার করে রাজ্যপালের ট্যুইট, ‘ভোট পরবর্তী হিংসা মানবতাকে লজ্জা দেবে। পুলিশ কিছুই করছে না। যা হচ্ছে সেটা পুরোটাই বিরোধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য।’
জানা গেছে, রাজ্যপাল আগামীকাল মুখ্যসচিবকে তলব করেছেন। ভোট-পরবর্তী হিংসা ও সামাজিক বয়কটের অভিযোগের প্রসঙ্গ নিয়েই মুখ্যসচিবকে রাজ্যপাল তলব করেছেন বলে জানা গেছে।
রাজ্যপালের এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন রাজ্যপাল। সাংবিধানিক পদের মর্যাদা লঙ্ঘণ করে তিনি রাজভবনকে দিল্লির শাসক দল বিজেপির অ্যাজেন্ডা পূরণের জন্য ব্যবহার করছেন বলেও কুণালের অভিযোগ। তৃণমূল মুখপাত্র বলেছেন, ভোটের আগে রাজ্যে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে নিজের সাংবিধানিক পদে মর্যাদার অবমাননা করেছিলেন রাজ্যপাল। ভোটের ফলাফলে হতাশাগ্রস্ত হয়েই রাজ্যপাল এ সব মন্তব্য করছেন বলে দাবি করেছেন কুণাল। রাজ্যপাল ধনকড়কে বিজেপির দালাল বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। কুণালের অভিযোগ, রাজ্যপাল তাঁর পদের মর্যাদা ভুলে উস্কানি দিয়ে চলেছেন।
উল্লেখ্য, রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত নতুন কিছুই নয়। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত ভোটের পর সেই সংঘাত আরও তুঙ্গে উঠেছে। ভোটের পরই বিজেপি তাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর তৃণমূলের হামলার অভিযোগ নিয়ে সরব হয়। রাজ্যপালও বিষয়টি নিয়ে মুখর হন। বেশ কয়েকবারই তিনি এই বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন। ভোটের পরই ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোন করেন বলে জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল। এরপর একাধিক ট্যুইট করে ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন। এমনকি, ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিনি কোচবিহার ও পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম সফরে গিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, কেশপুরে বিরোধীদের সামাজিক বয়কটের ডাক দিয়ে লিফলেট ঘিরে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন আক্রমণ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীও।
‘খেতে দেওয়া যাবে না চা। দোকানে গেলে বিক্রি করা যাবে না জিনিস!’বিরোধীদের সামাজিক বয়কট করার ডাক দেওয়া এই লিফলেট ঘিরে এখন জোর বিতর্ক।পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের আঁচ পৌঁছেছে দেশের রাজধানীতেও।
ট্যুইট করে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ।ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে পুলিশও।
তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেতা দেবের গ্রাম পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের মহিষদায়, বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের নাম করে সামাজিক বয়কটের ডাক দিয়ে লিফলেট বিলি করা হয়। যাঁদের বয়কট করার ডাক দেওয়া হয়েছে তাঁদের সিংহভাগই বিজেপির সদস্য। রয়েছেন সিপিএম কর্মীরাও।
মহিষদা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের নামে দেওয়া এই লিফলেট ঘিরে সরগরম রাজনীতি।ঘটনায় তৃণমূলের হাত রয়েছে বলে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিজেপি।
এবার এই ইস্যুকে সামনে এনে ট্যুইট করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। তিনি লিখেছেন,স্তম্ভিত করার মতো খবর। বাংলায় যাতে সবাই সুরক্ষিত থাকেন, দেখুন মুখ্যমন্ত্রী। যাতে কেউ একঘরে না হয়ে যান, দেখুন মুখ্যমন্ত্রী। না হলে এটা সত্যির লজ্জার।
এ প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই তৃণমূল সাংসদ দেব জানিয়েছেন, কেশপুরের দলীয় নেতারা তাঁকে নিশ্চিত করেছেন, কোনও বয়কটের নির্দেশ তাঁরা দেননি। দেব আরও জানিয়েছেন, বিষয়টি যে দলেরই হোক না কেন, তিনি কোনওভাবেই সমর্থন করেন না। তৃণমূল সাংসদের আর্জি, দয়া করে দলকে কালিমালিপ্ত করবেন না। আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এটাকে আরও কঠিন করে তুলবেন না। ঐক্য, শান্তি এবং ভালবাসা বজায় থাকুক।
আর কেশপুরে এই বয়কট বিতর্কের মধ্যেই, পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন,বাংলার চল্লিশ লক্ষ শ্রমিক বাংলার বাইরে গাজিয়াবাদ নয়ডায় কাজ করে, সেখান আমরা ইচ্ছা করলে তাদের কাজ বন্ধ করে দিতে পারি। কিন্তু বিজেপি এই রাজনীতি করে না।
পাল্টা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, এগুলো থেকে বোঝা যায় ওদের ভাবনাচিন্তা।
লিফলেট বিতর্কে শনিবার কেশপুর থানায় অভিযোগ করেছে তৃণমূল। দলের তরফে দাবি করা হয়েছে, চক্রান্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।সামাজিক বয়কটের বিষয়টি সামনে আসতেই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে পুলিশও।