অভিষেক উপাধ্যায়, সুমন ঘরাই, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: ভোটের মুখে গুজরাতে ভয়াবহ ব্রিজ বিপর্যয়ে মৃত্যু হল ১৩৪ জনের। আহত শতাধিক। সূত্রের খবর, প্রায় সাত মাস ধরে মেরামতির পর কোনও ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই খুলে দেওয়া হয়েছিল ব্রিটিশ আমলের এই সেতু। ভয়ঙ্কর এই বিপর্যয়ের দায় কার? উঠছে প্রশ্ন।


মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই যেন সাক্ষাত্‍ নেমে এল মৃত্যু। পুরুষ-মহিলা-শিশুর থিকথিকে ভিড় নিয়েই, তার ছিঁড়ে নীচে পড়ে গেল ঝুলন্ত সেতু। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আমোদ বদলে গেল বিষাদে, হাহাকারে। ভোটের মুখে গুজরাতে ভয়ঙ্কর সেতু বিপর্যয়। 



গুজরাতের মোরবিতে মাচ্ছু নদীর ওপর ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে তিন থেকে ১২ বছরের ৫৬জন শিশু রয়েছে। আহতর সংখ্যা শতাধিক। এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ১৭৭ জনকে। রবিবার সন্ধে সাড়ে ছটা, মোরবির ঝুলন্ত সেতুতে তখন থিকথিক করছে ভিড়। ঠিক তখনই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সেতুটি। আর এর পর থেকেই উঠতে শুরু করেছে একাধিক প্রশ্ন। কার গাফিলতিতে এতবড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল? পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারি কোথায় ছিল? এতগুলো মানুষের মৃত্যুর দায় কার? 


আরও পড়ুন, 'ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি', পোস্তার ব্রিজ প্রসঙ্গ তুলে মোদিকে খোঁচা ফিরহাদের


মোরবির এই ঝুলন্ত সেতু ১৪০ বছরের পুরনো। কিন্তু, গত ৭ মাস ধরে সেতুটির সংস্কার করা হয়। ওরেভা নামে একটি বেসরকারি কোম্পানিকে দেওয়া হয় সেই দায়িত্ব। সংস্কারের জন্য খরচ হয় মোট ৮ কোটি টাকা। গত ২৬ অক্টোবর, গুজরাতি নববর্ষের দিনই ঝুলন্ত সেতুটি খুলে দেওয়া হয়। উত্‍সবের মরশুম থাকায় থিকথিকে ভিড় হচ্ছিল এই ঝুলন্ত সেতুতে।


প্রথম ৩ দিনে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ টিকিট কেটে ব্রিজটিতে উঠেছিলেন। আর এখানেই উঠছে, মারাত্মক অভিযোগ। সূত্রের দাবি, সেতুটি সংস্কারের পর বিজেপি শাসিত মোরবি পুরসভার তরফে কোনও ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই কেন খুলে দেওয়া হল সেতু? 


গুজরাতে ২৭ বছর ধরে ক্ষমতায় বিজেপি। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, ভোটের আগে সস্তা জনপ্রিয়তার জন্যই কি তাড়াহুড়ো করে খোলা হয়েছিল সেতু? কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, "কোন মন্ত্রী আর আধিকারিক, এমন এক কোম্পানিকে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের, শতাব্দী প্রাচীন সেতু, যাদের বাল্ব বানায়, মশা মারার ওষুধ বানায়, যাদের কোনও অভিজ্ঞতাই নেই, সেতুর ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল? অডিট রিপোর্ট ছিল? কতটা ভারবহন করতে পারে, তার সমীক্ষা হয়েছিল? নির্বাচনের চাপ আছে। সমস্ত প্রকল্পকে তাড়াহুড়ো করে খুলে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। তাই দেখলেন না যে সেতুতে নিরাপদে মানুষ যাতায়াত করতে পারেন কি না।" 


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, "আমি অবশ্যই এখানে উপস্থিত আছি, তবে আমার মন রয়েছে মোরবিতে, আমার সহমর্মিতা রয়েছে সেই লোকদের সঙ্গে। খুব কম এমন হয়েছে যেখানে এরকম ব্যথা অনুভব করেছি। দুর্ঘটনার পর থেকে গুজরাত সরকার লাগাতার উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। কেন্দ্র থেকেও সবরকম সাহায্য করা হচ্ছে।" 


কাদের গাফিলতিতে শতাধিক মানুষের প্রাণ গেল? তারা কি কোনওদিন শাস্তি পাবে?