মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাঁকসা: ঘরে মজুত শিল্পসম্ভার। অথচ তা বিপণনের রাস্তা বন্ধ। করোনায় বাজার হারিয়ে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন কাঁকসার আদিবাসী গ্রামের কুটিরশিল্পীরা। পঞ্চায়েতের আশ্বাস, পরিস্থিতি অনুকূল হলে আদিবাসী শিল্পীদের সরকারি ভাবে সাহায্য করা হবে।


নিত্যদিনের সৃষ্টির অভ্যেসে এখনও নিপুণ ভাবে চলে হাত। করোনা মহামারীর নিস্তরঙ্গ জীবনেও তিলতিল করে গড়ে ওঠে শিল্পসম্ভার। হাতপাখা থেকে শুরু করে কুলো, বেতের মোড়া থেকে বাঁশের ঝুড়ি।  কিন্তু ঘরে তৈরি জিনিস ঘরেই পড়ে থাকে এখন। বাজারের মুখ আর দ্যাখে না। করোনা মহামারীতে ব্যবসায় মন্দা। অসহায় পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার আদিবাসী গ্রামগুলি।


শিল্পী কার্তিক বাদ্যকর বলেন, আমরা কুলো ঝুড়ি এসব বানাই। আগে যে দাম পেতাম, এখন তা পাচ্ছি না। আমরা তো মজুরি পাচ্ছি না। সারাদিন বাড়ি বাড়ি ঘুরছি। আগের মতো বিক্রি নেই। আগে একটা কুলো ১০০ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন ৫০ টাকাতেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে হাতপাখা বিক্রি হতো, এখন তাও হচ্ছে না।


কাঁকসার মলানদিঘি গ্রামপঞ্চায়েতের ৩টি গ্রামে প্রায় ২০০ কুটিরশিল্পী পরিবারের বাস। বাঁশ আর বেতের হাতের কাজ করেই দিন গুজরান করে এই সব পরিবার। নানা জায়গায় মেলা, উৎসবে স্টল দিতেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সেসব এখন অতীত। আরেক শিল্পী উদয় বাদ্যকর, আমাদের সরকারি উদ্যোগে ২০১৩ সালে ট্রেনিং দিয়েছিল কলকাতা থেকে এসে। কুটিরশিল্পের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম প্রায় ৮ জন। এখনও তার কোনও সুযোগ সুবিধা পাইনি। আমাদের দিকে একটু নজর দিলে ভাল হয়। সরকারি সহায়তায় সুবিধা হবে।


কুটিরশিল্পকে পেশা করার তাগিদে ২০১৩ সালে সরকারি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন মলানদিঘির প্রায় ৫০ জন শিল্পী। করোনা আবহে এখন সরকারি সাহায্যের আশায় দিন গুনছেন তাঁরা। মহামারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে হস্তশিল্পীদের রুটিরুজির বন্দোবস্তের চেষ্টা করা হবে। আশ্বাস দিয়েছে পঞ্চায়েত। মলানদিঘি গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান পীযূষ মুখোপাধ্যায়, এখন পরিস্থিতি অনুকূল নয়। সারা দেশ খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে। সরকারি ভাবে সব সময় শিল্পীদের পাশে আছি। এই সময়টা কেটে গেলে শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের কীভাবে সাহায্য করা হয় তা দেখা হবে।


আধুনিক সমাজ জীবনে নিত্য ব্যবহার্য জিনিস হিসেবে এসবের কদর কমলেও, শিল্পসামগ্রী হিসেবে তার দর বেড়েছে বহুদিন। আর তাতেই কিছুটা লাভের মুখ দেখতেন শিল্পীরা। সব ওলটপালট করে দিয়েছে করোনা।