নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের পর যে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছিল, হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচন তা এক লহমায় ভেঙে দিল। জয়ের স্বপ্নে বিভোর কংগ্রেসকে হারিয়ে তৃতীয় বারের জন্য সেখানে ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। এই ফলাফল প্রদেশ কংগ্রেসকেই শুধুমাত্র আড়াআড়ি ভাগ করে দেয়নি, জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A জোটেও প্রভাব ফেলেছে। বিজেপি-র সঙ্গে মুখোমুখি টক্করে এখনও কংগ্রেস যে হিমশিম খাচ্ছে, তা নিয়ে সরব হতে শুরু করেছে শরিক দলগুলি। আগামী দিনে মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড এবং দিল্লিতে আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে এ নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। (I.N.D.I.A Bloc on Congress)
বুধবার হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। গোড়া থেকে প্রত্যাশা জাগিয়েও, সেখানে ৩৭টি আসনে থেমে যেতে হয়েছে কংগ্রেসকে। বিজেপি ৪৮ আসনে জয়ী হয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও সামনে এসে গিয়েছে। আবার জম্মু ও কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্সের ঘাড়ে ভর করেই কার্যত বৈতরণী পার করেছে তারা। ৩২ আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র ছ'টি আসনে জিতেছে। সেই নিরিখে ন্যাশনাল কনফারেন্স ৫১টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৪২ আসনে জয়ী হয়েছে। (Haryana Assembly Election Results)
আর তাতেই কংগ্রেসকে নিয়ে সন্দিহান শরিকদলগুলি। উদ্ধব ঠাকরে, অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা আর কংগ্রেসের প্রতি সুর নরম রাখবেন না বলেই শোনা যাচ্ছে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা কোনও রাখঢাক না করেই মুখ খুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, "কংগ্রেস এই ফলাফলে নিশ্চয়ই হতাশ হবে। আমি নতুন করে ক্ষতস্থানে আঘাত করব না। কিন্তু হরিয়ানার ফলাফলে সত্যিই স্তম্ভিত। আমি নিশ্চিত, কংগ্রেস ভুলত্রুটি পর্যালোচনা করে দেখবে মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে সেই মতো পদক্ষেপ করবে। উপত্যকায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ার ক্ষেত্রে আসন কোনও ব্যাপাক ছিল না। কংগ্রেস না থাকলেও, একটি আসন বাদ দিয়ে আমরাই জয়ী হতাম।।"
আপাতত জম্মু ও কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে যৌথ ভাবে ক্ষমতায় আসছে কংগ্রেস। নভেম্বর মাসে ঝাড়খণ্ডেও বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সঙ্গে কংগ্রেসের জোট রয়েছে। মহারাষ্ট্রে আবার শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (শরদ পওয়ার)-এর সঙ্গে তাদের জোট রয়েছে। দিল্লিতে আম আদমি পার্টি কংগ্রেসের জোট শরিক। হরিয়ানা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের ফলাফলের পর আসন সমঝোতায় কংগ্রেসের দরাদরির কোনও সুযোগ আর থাকল না বলে মনে করা হচ্ছে।
শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী তাই স্পষ্ট বলেন, "রণকৌশল নিয়ে ভাবতে হবে কংগ্রেসকে। সরাসরি বিজেপি-র সঙ্গে লড়াইয়ে কংগ্রেস দুর্বল হয়ে পড়ে। কেন হয় এমন?" শিবসেনার মুখপত্র 'সামনা'য় হরিয়ানায় কংগ্রেসের পরাজয়ের জন্য 'অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস' এবং 'অহঙ্কার'কে দায়ী করা হয়। অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, "হরিয়ানার ফলাফল খতিয়ে দেখতে হবে। নির্বাচন নিয়ে যে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া উচিত নয়, এ থেকে শিক্ষা হওয়া উচিত।"
I.N.D.I.A শিবিরে কংগ্রেসের নেতৃত্বদানের যোগ্যতা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলে এসেছে তৃণমূল। বিভিন্ন রাজ্যে, আঞ্চলিক দলগুলিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলে এসেছে তারা। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের জেরে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতাও ভেস্তে যায় তাদের। হরিয়ানার ফলাফল সামনে আসার পর দলের সাংসদ সাকেত গোখেল সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'এই ধরনের আচরণই নির্বাচনে ডোবায়। আমরাই জিতছি বলে যদি ধরে নিই, আঞ্চলিক দলগুলিকে যদি গুরুত্ব না দিই... অথচ আশা করব, যেখানে আমরা দুর্বল, আঞ্চলিক দলগুলি আমাদের জায়গা ছেড়ে দেবে'।'
হরিয়ানার ফলাফল নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। ভোটগণনা প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি, ভোটযন্ত্রে বিকৃতি ঘটনার অভিযোগও তুলেছে তারা। পাশাপাশি, দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে দ্বন্দ্বের খবরও সামনে এসেছে। হরিয়ানার এই ফলাফল নিয়ে রাহুল গাঁধী জানিয়েছেন, কেন এমন ফলাফল হল, তা পর্যালোচনা করে দেখছেন তাঁরা। নির্বাচন কমিশনের কাছে অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগ তুলে ধরা হবে বলেও জানিয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের জয়ের শ্রেয় I.N.D.I.A শিবিরকেই দিয়েছেন তিনি। উপত্যকায় সংবিধান, গণতন্ত্র এবং আত্মসম্মানের জয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তবে হরিয়ানায় পরাজয়ের জন্য রাহুলের দিকেও আঙুল উঠছে। সেখানে প্রচারে তিনি সেভাবে জোর দেননি বলে উঠছে অভিযোগ।