সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহাগঞ্জ(হুগলি) : ফোন কলে প্রতারণা গুরুগ্রামে। 'প্রতারকের' খোঁজে হুগলির সাহাগঞ্জে সাবির আলি দফাদারের বাড়িতে এল হরিয়ানা পুলিশ। সাবির আলির আধার কার্ড দিয়ে সিম তোলা হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই নম্বর থেকে ফোন করে প্রতারণার ঘটনা ঘটে। সাবির আলি বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী। কিন্তু, কীভাবে তাঁর আধার দিয়ে সিম কার্ড তোলা হল তার বিন্দু বিসর্গ তিনি জানেন না বলে দাবি সাবিরের। এদিকে ঘটনার জেরে রীতিমতো আতঙ্কে তাঁর পরিবার।


গুরুগ্রাম লক্ষ্মী বিহার গঞ্জ-২ এর বাসিদা সত্যেন্দ্র সিং মানের কাছে গত বছর ২ জুলাই একটি ফোন কল যায়। তাঁকে বলা হয়, লাকি ড্র-তে তিনি ১৪,৮০,০০০ টাকা জিতেছেন। প্রথমে বিষয়টিতে আগ্রহ দেখাননি তিনি। পরে আবার ফোন করা হয় তাঁকে। লোভে পড়ে সেই টাকা পাওয়ার চেষ্টা করেন সত্যন্দ্র। আর তাতেই কখনো রেজিস্ট্রেশনের নাম করে, কখনো আরবিআই এর নাম করে টাকা চাওয়া হয়। ৯,৫৪,৫৫০ টাকা দিয়ে দেন তিনি। সব শেষে ব্যাঙ্কের চেকের ছবি পাঠিয়ে আরও দেড় লক্ষ টাকা দাবি করে প্রতারকরা। ততক্ষণে ১৪ লক্ষ পাওয়ার আশায় প্রায় দশ লক্ষ টাকা চলে গেছে। 


সত্যেন্দ্র বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে গুরুগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রতারিত। পুলিশ তদন্তে নেমে ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা সঞ্জয় সিং, পশ্চিমবঙ্গ বীরভূমের বাসিন্দা অভিষেক মণ্ডল ও উত্তপ্রদেশের আমেঠির বাসিন্দা অলোক সিংয়ের নাম জানতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করে পুলিশ। এই ঘটনায় যে ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছিল সেই নম্বর হুগলির সাহাগঞ্জের বাসিন্দা সাবির আলি দফাদারের নামে রেজিস্ট্রেশন করা বলে পুলিশের দাবি। ব্যান্ডেলের একটি মোবাইলের দোকান থেকে সিম কার্ড তোলা হয়েছিল বলে সাবির আলিকে জানায় পুলিশ।


শনিবার হরিয়ানা পুলিশ সাবিরের বাড়িতে হাজির হয়। সেই সময় সাবির অফিসে ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সাবিরকে ডেকে পাঠায় পুলিশ। তাঁকে প্রতারণার কথা জানানো হয়। এফআইআর-এর কপিও দেওয়া হয়। যেহেতু প্রতারকের ফোন নম্বর তাঁর পরিচয়পত্রে সংযুক্ত, তাই তদন্তের স্বার্থে তাঁকে গুরুগ্রামে যেতে হবে এক মাসের মধ্যে, জানিয়ে দেয় হরিয়ানা পুলিশ। সাবির আলি গুরুগ্রামে যাবেন এই মর্মে একটি কাগজে সই করিয়ে নেয় পুলিশ। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে হরিয়ানা পুলিশ টাকা দিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে নেওয়ার কথাও বলে, দাবি সাবিরের। তারা চলে যাওয়ার পর ফোন করে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।


নানা কাজে আধার কার্ড দিতে হয়। কী করে তাঁর আধার দিয়ে সিম কার্ড তোলা হল, আর সেই সিম ব্যবহার করে প্রতারণা করা হল তা বুঝে উঠতে পারছেন না সাবির ও তাঁর পরিবার। সাবির বলেন, আমি একজন সরকারি কর্মী। আমাকে কোনওভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। এই প্রতারণার সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই। অথচ আমাকেই দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। 


বাড়িতে পুলিশ আসার পর দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হবেন বলে ঠিক করেছেন সাবির।