নয়া দিল্লি : ভয়াবহ। মর্মান্তিক। পুণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বেঘোরে মারা গেল ১২১ জন। হাথরাসে গডম্যান ভোলেবাবার সৎসঙ্গ নামক সমাবেশে পায়ে পিষে মৃত্যুর ঘটনা নড়িয়ে দিয়েছে সারা দেশকে।  দুর্ঘটনার  তদন্ত শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ  পুলিশ। কিন্তু তারপর সেই ধর্মগুরু যে গেলেন কোথায়, তা কেউ জানে না।  


সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে আসছে এই জনপ্রিয় ভোলেবাবার অন্ধকার কাজ কর্মের ইতিহাস। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নসহ আরও পাঁচটি গুরুতর মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর, দাবি টিভিনাইন হিন্দতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। ধর্মগুরু ভোলে বাবা এর আগেও  জেলে গিয়েছেন। পুলিশের দাবি, ২৪ বছর আগে, ২০০১ সালে নিজের ভাগ্নি মারা যাওয়ার পর তাঁকে বাঁচানোর ভান করেছিলেন সুরজপাল ওরফে ভোলে বাবা। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায় আগ্রা পুলিশ। জেল থেকে বেরিয়ে বাবার উত্থান শুরু হয়। উত্তরপ্রদেশের এটায় বাহাদুরনগরে নিজের গ্রামেই নারায়ণ হরি চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে বড় আশ্রম খুলে ফেলেন সুরজপাল। হয়ে ওঠেন গডম্যান।


ভোলে বাবার বৈভব চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। বাবার কনভয়ে ৩০টিরও বেশি দামি গাড়ি রয়েছে। তাঁকে ঘিরে থাকেন মহিলা নিরাপত্তারক্ষীরা। বাবার বাহিনীতে রয়েছে তাগড়াই চেহারার পুরুষ নিরাপত্তারক্ষীও। স্যুটেড-বুটেড থাকা ভোলে বাবার আলাদা ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করে করেছিল।  


এই ধর্মগুরুর আসল নাম সুরজ পাল সিং। সাধু হওয়ার আগে ভোলে বাবা পুলিশ বিভাগে কনস্টেবল পদে চাকরি করতেন বলে দাবি করতেন। ১৯৯০ সালে তিনি পুলিশের চাকরি ছেড়ে দেন। গুঞ্জন , তখন এই লোকটিকে কোনও কারণে জেল খাটতে হয়। তারপর ছাড়া পেয়ে তিনি নাম পরিচয় বদলে ফেলেন। একেবারে আধ্যাত্মিক গুরু হয়ে ওঠেন। 


স্বঘোষিত ভোলে বাবা আবার বাবা সাকার হরি নামেও পরিচিত। ২৬ বছর ধরে একটু একটু করে পসার জমিয়েছেন সাধু বাবা। এখন তার দাপট এতটাই বেশি যে, সূত্রের খবর বড় বড় নেতারাও তাঁর দরবারে হাজির হন। 


এই ভোলে বাবা সম্পর্কে আবার কোনও কোনও ভক্তের দাবি তিনি ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে  তাঁর নাম পরিবর্তন করেন। ভোলে বাবার অনুসারীরা তাঁকেই ভগবান মনে করে।তাঁদের বিশ্বাস, ভোলেবাবাকে দর্শন মনে  ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ । উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও  হরিয়ানা, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে রয়েছে এই ধর্মগুরুরল লক্ষাধিক ভক্ত। 


বারবার নিয়ম ভাঙার ইতিহাস আছে এই ধর্মগুরুকে ঘিরে। আর পাঁচজন ধর্মগুরুর মতো গেরুয়া নয়,ভোলে বাবা সবসময় সাদা জামা-সাদা প্য়ান্ট কখনও সাদা পাজামা সাদা পাঞ্জাবী আবার কখনও সাদা স্য়ুট পরেন। এর আগে করোনাকালে নিয়মের তোয়াক্কা না করে, করোনা বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিশাল ভক্ত সমাবেশ করেছিলেন এই ভোলেবাবা। দেশের নিয়মকানুন এই ভোলেবাবা তোয়াক্কা করেন না মোটেই। ২০২২ সালে করোনার সময় নিষেধাজ্ঞা ভেঙে তাঁর বিরুদ্ধে সৎসঙ্গের আয়োজনের অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় যেখানে ৫০ জনের বেশি জমায়েত ছিল সারা দেশে নিষিদ্ধ, সেখানে তাঁর সৎসঙ্গে হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ । ফারুখাবাদ জেলায় মাত্র ৫০ জনের উপস্থিতির অনুমতি নিয়ে  ৫০ হাজারেরও বেশি ভক্ত নিয়ে সমাবেশ করেছিলেন সূরজলাল ওরফে ভোলেবাবা। এই নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হয়েছিল।