হাথরস: উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়েছেন বহু মানুষ। শিশু, মহিলা-সহ প্রায় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কিতেই এত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানা যাচ্ছে। আর সেই নিয়ে ওই 'সৎসঙ্গ'-এর হোতা, 'ভোলেবাবা' বলে পরিচিত স্বঘোষিত ধর্মগুরু নারায়ণ সাকার হরি ওরফে সাকার বিশ্ব হরি-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। (Hathras Satsang Stampede) তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।


মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের হাথরসের একটি গ্রামে ওই 'সৎসঙ্গ'-এর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের মুখ্য আকর্ষণই ছিলেন নারায়ণ। জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জের পটিয়ালি তেহসিলের অন্তর্গত বাহাদুর গ্রামে জন্ম তাঁর। জন্মসূত্রে নাম ছিল সূর্য পাল। ভারত সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরোতে একসময় কর্মরত ছিলেন বলে দাবি করেন নারায়ণ। (Bhole Baba Satsang)


নারায়ণ তাঁর অনুগামীদের জানিয়েছেন, আধ্যাত্মিকতার প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করতে ২৬ বছর আগেই ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। তখন থেকেই ঘুরে ঘুরে মানুষকে ধর্মশিক্ষা দিতে শুরু করেন। বর্তমানে দেশে লক্ষ লক্ষ অনুগামী রয়েছেন তাঁর। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান এবং দিল্লিতে প্রায়শই 'সৎসঙ্গ'-এর আয়োজন করেন অনুগামীদের জন্য। 


অনুগামীদের মতে, নারায়ণের কোনও গুরু নেই। চাকরি ছাড়ার পর ঈশ্বরের দর্শন পান তিনি. এর পরই ধর্মচর্চায় নিয়োজিত করেন নিজেকে. গত সপ্তাহে উত্তরপ্রদেশের মইনপুরিতেও 'সৎসঙ্গ' ছিল নারায়ণের।


আরও পড়ুন: Hathras Satsang Stampede: হাথরসে 'সৎসঙ্গ' চলাকালীন হুলস্থুল, পদপিষ্ট হয়ে শিশু-সহ শতাধিক পুণ্যার্থীর মৃত্যুর আশঙ্কা


আর পাঁচজন ধর্মগুরুর মতো সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করেননি নারায়ণ। গেরুয়া বা সাদা বসন না পরে তিনি স্যুট-বুট, টাই পরেই ধর্মসভা করেন। সহযোগীরা পরেন কুর্তা-পাজামা। অনুদানবাবদ যে টাকা জমা পড়ে, সেই টাকায় হাত দেন না, বরং অনুগামীদের উপরই সব বিলিয়ে দেন বলেও একাধিক বার দাবি করেছেন নারায়ণ। 


নারায়ণ নিজেকে 'হরি'র শিষ্য বলেও দাবি করেন। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম অঞ্চলে তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও অ্যাকাউন্ট নেই তাঁর। একেবারে তৃণমূলস্তরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তাঁর। নারায়ণের সহযোগীরা তাঁর হয়ে ধর্মপ্রচারের কাজ করেন বলেও জানা গিয়েছে। প্রত্যেক মঙ্গলবার আলিগড়ে 'সৎসঙ্গ'-এর আয়োজন করেন তাঁরা। হাজার হাজার মানুষ সেখানে ভিড় করেন। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও থাকে সেখানে। 


মঙ্গলবার হাথরসে তেমনই 'সৎসঙ্গ'-এর আয়োজন করেছিলেন নারায়ণ। বহু মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন সেখানে। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার মুখে সেখানে হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়, তাতে পদপিষ্ট হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। মৃতদের মধ্যে মহিলা এবং শিশুর সংখ্যাই বেশি বলে জানা গিয়েছে। ১০০-র বেশি মানুষ আহতও হয়েছেন। প্রচণ্ড গরমে পুণ্যার্থীদের আটকে প্রথমে নারায়ণ এবং তাঁর সহযোগীদের বেরনোর রাস্তা তৈরি করা হয়। এর পর বেরনোর অনুমতি দিলে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট চেয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। হাথরসে ওই 'সৎসঙ্গ'-এর আয়োজনের জন্য আগে থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, সেই নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।


এর আগেও খবরের শিরোনামে উঠে আসেন নারায়ণ। করোনা কালে বিধিনিষেধ এড়িয়ে হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে এভাবেই 'সৎসঙ্গ'-এর আয়োজন করেন তিনি। ৫০ জনকে নিয়ে ফারুখাবাদে 'সৎসঙ্গ' হবে বলে সরকারের অনুমতি জোগাড় করেছিলেন। বাস্তবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ভিড় করেন। সেই নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।