নয়াদিল্লি: বিরোধীদের আক্রমণের গতকাল ব্যাকফুটে দেখা গিয়েছিল কেন্দ্রকে। মঙ্গলবার বিরোধী, বিশেষ করে কংগ্রেসকে বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল রাহুল গাঁধীর ভাষণের সময় বার বার সরকারের তরফে যেমন বাধা এসেছিল, একই ভাবে এদিন মোদির ভাষণ চলাকালীন, লাগাতার স্লোগান তুলতে থাকেন বিরোধীরা। সেই আবহেই কংগ্রেসের উদ্দেশে মোদি জানান, ১০০-র মধ্যে ৯৯ পায়নি কংগ্রেস, ৫৪৩ আসনের মধ্যে মোটে ৯৯টি আসন পেয়েছে তারা। (Narendra Modi Speech)


এদিন কংগ্রেসকে পরজীবী বলে কটাক্ষ করেন মোদি। তিনি বলেন, "২০২৪ সাল থেকে কংগ্রেসের নতুন পরিচয় পরজীবী। যার উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে, তাদেরই খায়। কংগ্রেস শরিকদলগুলির ভোট খেয়ে নিচ্ছে। অন্যের ভোট খেয়ে নিজের আসন বাড়াচ্ছে। যেখানে মুখোমুখি বিজেপি-র সঙ্গে লড়াউ করেছে, বা যেখানে ওরা বড় দল, সেখানে কংগ্রেসের স্ট্রাইক রেট ২৬ শতাংশ। আর যেখানে শরিকরা কংগ্রেসকে জায়গা ছেড়ে দিয়েছে, সেখানে ওদের ৫০ শতাংশ স্ট্রাইক রেট। যে ৯৯টি আসন পেয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশই শরিকরা জিতিয়ে দিয়েছে। তাই কংগ্রেসকে পরজীবী বলছি।" (Rahul Gandhi)


মোদি আরও বলেন, "১৯৮৪ সালের পর থেক দেশে ১০টি লোকসভা নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু একটিতেও ২৫০ আসন ছুঁতে পারেনি কংগ্রেস। এবারও কোনও রকমে ৯৯ আসনে গিয়ে আটকে গিয়েছে।" মোদির দাবি, কংগ্রেস ছোট বালকের মতো সকলকে ৯৯ নম্বর দেখিয়ে বেড়াচ্ছে। আসলে যে ১০০-র মধ্যে ৯৯ পায়নি, ৫৪৩-এর মধ্যে ৯৯ পেয়েছে, তা বোঝা উচিত ওঁদের। ১৩ রাজ্যে কংগ্রেস শূন্য পেয়েছে বলেও এদিন মন্তব্য করেন মোদি। মিথ্যে স্বপ্নে বিভোর হয়ে না থেকে কংগ্রেসের আত্মসমীক্ষা করা উচিত বলে মত তাঁর। 



আরও পড়ুন: Hathras Satsang Stampede: হাথরসে 'সৎসঙ্গ' চলাকালীন হুলস্থুল, পদপিষ্ট হয়ে শিশু-সহ শতাধিক পুণ্যার্থীর মৃত্যুর আশঙ্কা


কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে মোদি বলেন, "এই নির্বাচনে জনতা-জনার্দন কংগ্রেসকে বার্তা দিয়েছেন যে, আপনারা বিরোধীর আসনেই বসে থাকবেন। আলোচনা শেষ হলে চিৎকার-চেঁচামেচি করবেন শুধু। কংগ্রেসের ইতিহাস বলছে, এই নিয়ে তৃতীয় বার ১০০ পেরোতে পারল না তারা। ওদের তৃতীয় সবচেয়ে বড় হার হয়েছে। হার স্বীকার বা আত্মসমীক্ষা না করে শীর্ষাসন শুরু করে দিয়েছে। ভাবটা এমন যে আমাদের ওরা হারিয়ে দিয়েছে। আসলে ছেলে ভোলানো হচ্ছে দলের অন্দরে।"


সমবেদনা কুড়োতে কংগ্রেস এখন নাটক করছে বলেও অভিযোগ করেন মোদি। গতকাল রাহুলের ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে মোদি বলেন, "কাল লোকসভায় বালখিল্যপনা দেখলাম আমরা। কত অনুযোগ শুনলাম সকলে। সমবেদনা কুড়োতে নতুন নাটক চলছে এখন। কিন্তু দেশ সত্যটা জানে। হাজার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির মামলায় জামিনে রয়েছেন। ওবিসিদের চোর বলায় সাজা পেয়েছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হয়েছে ওঁকে। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর সাভরকরকে অপমান করার মামলা রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় পার্টির প্রধানকে খুনি বলায় মামলা চলছে ওঁর বিরুদ্ধে। নেতা, কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করেছেন। বালখিল্যতায় না ঠিক করে কথা বলতে জানেন, না আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে। সেই জন্য সংসদেও কারও ঘাড়ে চেপে বসেন। সীমাবদ্ধতা ভুলে যান। সংসদে চোখ টেপেন। গোটা দেশ জানে, তাই বলছে, তোমার দ্বারা হবে না।"


ধর্মের নামে বিজেপি হিংসা, ঘৃণা ছড়াচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে বলে গতকাল সংসদে অভিযোগ করেন রাহুল। গতকালই সেই নিয়ে আক্রমণে নেমে পড়েন মোদি। রাহুল গোটা হিন্দু সমাজকে অপমান করেছেন বলে গতকাল মন্তব্য করেন তিনি। আজ মোদি বলেন, "কাল যা ঘটেছে, দেশের মানুষ কখনও ক্ষমা করবেন না। হিন্দুদের হিংস্র বলা হয়েছে, এই আপনার মূল্যবোধ? এই আপনার চরিত্র? এই দেশের হিন্দুদের কি আপনি ঘৃণা করেন? আগামী কয়েক শতকেও এই অপমান ভোলা যাবে না।" রাহুল যদিও গোড়াতেই জানিয়েছিলেন, তিনি হিন্দুদের হিংস্র বলেননি, মোদি, বিজেপি, RSS-কে হিংস্র বলেছেন। মোদি, বিজেপি এবং RSS-হিন্দু সমাজের ঠিকাদার নয় বলে জানান তিনি। তাই আজ মোদি রাহুলকে আক্রমণ করলে বিরোধীদের তরফে 'ঝুট বোলে কউয়া কাটে' স্লোগান ওঠে।


নরখাদক যেমন রক্তের নেশায় মেতে ওঠে, তেমনই কংগ্রেস মিথ্যের রাজনীতি করছে বলে মন্তব্য করেন মোদি। রাফাল, ইভিএম, এলআইসি, ব্যাঙ্ক নিয়ে কংগ্রেস শুধু মিথ্যে ছড়াচ্ছে, সবাইকে উস্কানি জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। 'অগ্নিবীর' প্রকল্প, কৃষকদের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়েও সংসদে রাহুল মিথ্যা বলেছেন বলে দাবি করেন মোদি। নির্বুদ্ধিতা বলে সংসদে কারও আচরণকে হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না, বরং এর নেপথ্যে বডড অভিসন্ধি রয়েছে, তাই পদক্ষেপ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।