নয়াদিল্লি: এ যেন চিরদিনের বন্ধন। সেই বন্ধনকে ভেঙে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন তার রক্ষক তথা প্রশিক্ষক। বারান্দায় সাদা কাপড়ে মোড়া দেহ। আশেপাশে কান্নার রোল। আর নিজের মাহুত দামোদরণ নায়ারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এগিয়ে এল ২৫ বছরের সঙ্গী ব্রহ্মদাঁতন।
কেরলের পালার বাসিন্দা দামোদরণ নায়ার। ২৫ বছর ধরে ব্রহ্মদাঁতন ছিল তাঁর সঙ্গী। গত কয়েক বছর ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত দামোদরণ। মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করেও শেষরক্ষা হল না। ৩ জুন প্রয়াত হন তিনি। দামোদরণের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী এদিন মৃত্যুর পর ব্রহ্মদাঁতনকে তাঁর দেহের সামনে নিয়ে যান আত্মীয় এবং অন্য মাহুতরা।
বিশালাকার শুঁড়। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে ব্রহ্মদাঁতন। বারান্দায় সাদা কাপড়ে মোড়া রয়েছে দামোদরণের দেহ। আশপাশ থেকে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। দেহের সামনে এসে শুঁড় উঁচিয়ে যেন শেষবারের জন্য শ্রদ্ধা জানাল সে। ওই শুঁড় দিয়ে শেষবারের জন্য ছুঁয়ে দিল দেহ। ২৫ বছরের সম্পর্কচ্ছেদে এই মুহুর্ত দেখে ব্রহ্মদাঁতনকে জড়িয়ে ধরলেন দামোদরণ ছেলে রাজেশ। সদ্য পিতৃ-হারা সন্তানের একমাত্র সহমর্মী যেন সে। আর এই দৃশ্য দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরাও। গোটা ঘটনার ভিডিও ট্যুইট করেছেন আইএফএস অফিসার প্রবীণ কাসওয়ান। ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে সেই ভিডিও।
৬০ বছর বয়সী দামোদরণ বংশ পরম্পরায় মাহুত ছিলেন। একইসঙ্গে ছিলেন প্রশিক্ষকও। কোথাও রেস হোক বা পুজো, দামোদরণ-ব্রহ্মদাঁতন জুটি হাজির হত সেখানে। পরবর্তীকালে ব্রহ্মদাঁতনের মালিক হন ওই অঞ্চলেক বাসিন্দা রাজেশ পালাট্টু। সংবাদ সংস্থা আইএএনএস-কে তিনি বলেন, ব্রহ্মদাঁতন শুঁড় দিয়ে দামোদরণের নিথর দেহ ছোঁয়ে। শুঁড় উঁচিয়ে শ্রদ্ধাও জানায় সে। এই দৃশ্য দেহে দামোদরণের স্ত্রী ভেঙে পড়েন। ব্রহ্মদাঁতনের এই ভূমিকা দেখে আমরাও অবাক। কান্না চেপে রাখতে পারছিলাম না। এই দৃশ্য সাক্ষী থাকা সত্যিই খুব কঠিন।
রাজেশ সহ কোট্টায়াম এবং আশেপাশের অঞ্চলের অন্যান্য হস্তি প্রেমীরা জানিয়েছেন, দামোদরণ নায়ার এবং ব্রহ্মদাঁতনের জুটিকে মাঝেমধ্যেই একসঙ্গে দেখা যেত। প্রাক্তন মাহুত হলেও তাঁদের আলাদা করা কার্যত অসম্ভব ছিল। দুজনের মধ্যে বন্ধন এবং স্নেহ দেখার এবং অনুসরণ করার মতো। নিজের ছেলের মতোই তাকে ভালবাসতেন দামোদরণ। তাই ক্যান্সার আক্রান্ত মাহুতের শেষ ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর যেন একবার তাঁর দেহের কাছে নিয়ে আসা হয় ব্রহ্মদাঁতনকে।