মাণ্ডি : হড়পা বান ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বাবা-মা ও ঠাকুমাকে। বরাত জোরে প্রাণ বেঁচে যায় ১১ মাসের শিশুর। কিন্তু, পরিবারের আর কেউ তো নেই তাকে লালন-পালন করার ! এই পরিস্থিতিতে ওই খুদেকে বড় করে তোলার জন্য এগিয়ে আসে গোটা গ্রাম। গত ৩০ জুন হিমাচলপ্রদেশের মাণ্ডি জেলার এই ঘটনার পর সামনে এল মানবিক এক ছবি। যেখানে গোটা সম্প্রদায় ওই শিশুর রক্ষাকর্তা হিসাবে এগিয়ে আসে। যদিও এরপরই খবর পেয়ে ওই শিশু নিকিতার অন্য আত্মীয়রা এগিয়ে আসেন। বাবা-মায়ের শেষকৃত্যের পর, সে তার পিসি কীর্ণা দেবীর কাছে থাকবে। এদিকে এহেন মর্মান্তিক ঘটনার কথা জানতে পেরে, একাধিক স্কুলের পক্ষ থেকেও ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা সময় হলে নিকিতাকে বিনামূল্যে স্কুলে ভর্তি করতে চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ১৪ অগাস্ট এক বছর পূর্ণ হবে নিকিতার।
গত ৩০ জুন রাতে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জেরে তৈরি হড়পা বানে বিস্ময়করভাবে বেঁচে যায় নিকিতা। হিমাচলপ্রদেশের মাণ্ডি জেলার গোহর মহকুমার তলওয়ার গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিকিতা যেখানে বেঁচে যায়, সেখানে তার পরিবারে অন্যরা ভেসে যায় হড়পাবানে। তার বাবা, বছর ৩১-এর রমেশ কুমার চেষ্টা করেছিলেন জল যাতে বাড়িতে না ঢোকে। কিন্তু, তা তিনি করতে পারেননি। পরে একটি স্তূপে তাঁর দেহ পাওয়া যায়। নিকিতার মা তথা বছর ২৪-এর রাধা দেবী ও তার ঠাকুমা, বছর ৫৯-এর ঠাকুমা পূর্ণু দেবীকেও ভাসিয়ে নিয়ে যায় জল। যদিও, তাঁদের কোনও হদিশ মেলেনি। পুরো তলওয়ার গ্রাম কার্যত ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়।
এই ঘটনার পর গ্রামবাসী যখন দেখতে বেরোন কে কে বেঁচে আছে, সেই সময় এক বয়স্ক নিকিতার কান্নার আওয়াজ শুনতে পান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের সতর্ক করেন। নিকিতার আত্মীয়দের বিষয়টি জানানো হয়। নিকিতার দুই পিসি তারা দেবী ও কীর্ণ দেবী তাঁরা নিকিতার যত্ন নিতে এগিয়ে আসেন। শুধু তা-ই নয়, গোটা এলাকা এগিয়ে আসে। এনিয়ে খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেক দম্পতি এবং বিদেশ থেকেও কেউ কেউ নিকিতাকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাঁরা নিকিতার আত্মীয়দের ও প্রশাসনের কাছে এই আবেদন জানান।
যদিও পরিবার এক হয়ে নিকিতাকে নিজেদের কাছে রেখে দেওয়ার কথা জানিয়ে দেয়। কীর্ণা দেবী বলেন, "নিকিতা আমাদের রক্ত। ওকে পরিবারের বাইরে কাউকে দিতে পারব না।"