গুয়াহাটি: যুবভারতী বিপর্যয়ে এবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির দাবি তুললেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা একেবারে ভেঙে পড়েছে। ভিআইপি সংস্কৃতিই বড় হয়ে উঠেছে। এর দায় নিয়ে সরে যাওয়া উচিত মমতার। (Himanta Biswa Sarma)

Continues below advertisement

ফুটবলের ‘মহামানব’ লিওনেল মেসির ‘GOAT Tour 2025’-কে ঘিরে শনিবার কলঙ্কিত হয়েছে কলকাতা। মন্ত্রী এবং শাসকদলঘনিষ্ঠ লোকজন মেসিকে ঘিরে রাখায়, মহার্ঘ্য টিকিট কেটে যুবভারতীতে ঢোকা সাধারণ মানুষ প্রিয় তারকাকে দেখতেই পাননি বলে অভিযোগ। এতেই বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে যুবভারতীতে। দেদার ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুঠ চলে সেখানে। (Mamata Banerjee)

যুবভারতীর পরিস্থিতি তেতে ওঠার  পর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমাপ্রার্থনা করেন মমতা। মেসি এবং তাঁর অনুরাগীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। যদিও বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য দাবি করেন, ‘মায়াকান্না কাঁদছেন মমতা’। আর তার পরই মমতার বিরুদ্ধে সুর চড়ান হিমন্ত। 

Continues below advertisement

মমতাকে নিয়ে হিমন্তর বক্তব্য, “রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি মুখ্যমন্ত্রীও, এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে গ্রেফতার করা উচিত ছিল।” মেসিকে যিনি কলকাতায় নিয়ে আসেন, সেই আয়োজক শতদ্রু দত্ত ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন। শতদ্রুর গ্রেফতারির বিরোধিতা করছেন না হিমন্ত। তবে তাঁর বক্তব্য, “সবার আগে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ কমিশনারের উপরই দায় বর্তায়।”

ভিড় সামলাতে, এত বড় অনুষ্ঠান সামলাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মত হিমন্তর। তিনি বলেন, “জুবিন গর্গের মৃত্যুর পর গুয়াহাটির রাস্তায় তিন দিন ধরে ১০ লক্ষ মানুষ ছিলেন। কোনও অঘটন ঘটেনি। পোস্ট ম্যালোনের অনুষ্ঠানে ৫০ হাজার মানুষ ভিড় করেছিলেন। সেখানেও কোনওো ঘটনা ঘটেনি। মুম্বইয়ে মহিলাদের বিশ্বকাপ শান্তিপূর্ণ ভাবেই অনুষ্ঠিত হল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এমন একটি রাজ্য, যেখানে কিছুই আঁচ করা যায় না। ওখানে ভিআইপি সংস্কৃতি একেবারে চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি গোটা দেশের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে।”

মেসিকে ঘিরে যে ঘটনা ঘটল যুবভারতীতে, তাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আত্মসমীক্ষা করা উচিত বলেও মত হিমন্তর। তাঁর কথায়, “মেসি গোটা পৃথিবীর কাছে আদর্শ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মসমীক্ষা করা উচিত। পশ্চিমবঙ্গে নিরীহ মানুষরা প্রতিনিয়ত নৃশংসতার শিকার হচ্ছেন। যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। আর জি কর হোক বা মেসিকে ঘিরে বিশৃঙ্খলা, কিছু হয়নি বলে অস্বীকার করলেই হল না। রাজ্য কোথায় যাচ্ছে ভাবতে হবে।”

হিমন্ত আরও বলেন, "মমতাদি চিরকার বেঁচে থাকবেন না, আমিও থাকব না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গকে উনি যেদিকে নিয়ে যাচ্ছেন, ইতিহাস ওঁকে ক্ষমা করবে না। আজ ভোটের ব্যালট, ইভিএম-এ যা-ই হোক, আমাদের দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জনবিন্যাসকে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। আমার মনে হয়, ইতিহাস দিদির প্রতি সদয় হবে না। চিরকার ওঁর সমালোচনা হবে, পশ্চিমবঙ্গকে ধ্বংস করার জন্য মনে রাখা হবে ওঁকে।"

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে লিওনেল মেসির অনুষ্ঠানে বেনজির বিশৃঙ্খলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দু’টি পৃথক স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে পুলিশ। চূড়ান্ত অব্যবস্থার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়েছে আয়োজকদের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় এখনও পর্যন্ত একজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি হলেন মূল উদ্যোক্তা শতদ্রু। আজ তাঁকে বিধাননগর মহকুমা আদালতে তোলা হবে। পুলিশ ও RAF-এর কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে বিধাননগর আদালত চত্বর। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসি-ভক্তদের তাণ্ডবের ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়দের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী গুরুতর আঘাত, সরকারি কাজে বাধাদান, পুলিশকে মারধর-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারার সঙ্গে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর এবং এমপিও অ্যাক্টের মতো বিশেষ আইনের ধারাও প্রয়োগ করা হয়েছে। অন্য দিকে, শনিবার যুবভারতীতে তাণ্ডব চলাকালীন গেরুয়া পতাকা হাতে একটি গোষ্ঠীকে মাঠে নেমে অশান্তি করতেও দেখা যায়। 'জয় শ্রীরাম' স্লোগানও তোলে তারা। সেই নিয়ে বিজেপি-র দিকে আঙুল তুলছে তৃণমূল। গোটা ঘটনার নেপথ্যে চক্রান্ত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলছে তারা।