আগরতলা: সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। সেই আবহেই বাংলাদেশে হামলার শিকার হলেন ত্রিপুরার খ্রিস্টান সম্প্রদায়। বড়দিনের আগের রাতে সেখানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ১৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বান্দরবানে লামা উপজেলায় সরই ইউনিয়নের তংঝিরি ত্রিপুরা পাড়ায় পর পর বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই এলাকায় কোনও গির্জা না থাকায় অন্য পাড়ায় বড়দিন উদযাপন করতে গিয়েছিলেন বাসিন্দারা। অগ্নিসংযোগের সময় বাড়িতে ছিলেন না। তাই প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। (Tripura Christians Attacked in Bangladesh)
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম 'দ্য ডেলি স্টার' বিষয়টি তুলে ধরেছে। বড়দিনে বেশ কয়েকটি পরিবার গৃহহীন এবং সর্বস্বান্ত হল বলে জানিয়েছে তারা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর ঘরছাড়া থাকার পর নতুন করে সংসার পেতেছিলেন। এই ঘটনার পর ফের শূন্য থেকে শুরু করতে হবে তাঁদের। এখনও পর্যন্ত যা খবর, সেই অনুযায়ী, ১৯টির মধ্যে ১৭টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে সবকিছু। কিছুইউ অবশিষ্ট নেই আর। (Bangladesh Situation)
ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তিন-চার বছর আগেও তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়। প্রাক্তন পুলিশকর্তা বেনজির আহমেদের স্ত্রীর নামে ওই পাড়ার জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন একদল লোক। বাধ্য করা হয় বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে। চলতি বছরের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে বাসিন্দারা এলাকায় ফিরে আসেন। কোনও রকমে আস্তানা বানিয়ে আবার বাস করতে শুরু করেন। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সব শেষ হয়ে গেল।
সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ায় এক কাপড়েই কার্যত রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বড়দিনের আগের রাতের এই ঘটনায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিষয়টি সামনে আসতে লামা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। আপাতত ১৭টি পরিবারকে কম্বল এবং চাল দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সেই মতো পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লামা থানার পুলিশ জানিয়েছে, ৫ অগাস্টের পর থেকে জমি দখল এবং পাল্টা দখলের বহু অভিযোগ রয়েছে। এখনও পর্যন্ত অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কারও গ্রেফতারির খবর মেলেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তংঝিরি এলাকায় দীর্ঘকাল ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বাস ছিল। তিন-চার পুরুষ ধরে থাকছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু গায়ের জোরে তাঁদের উচ্ছেদ করা হয় বলে অভিযোগ। মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যেভাবে লাগাতার সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক মহলও।