হাওড়া: হাসপাতালেই যেন বিয়ের আসর। নবদম্পতির গলায় গোড়ের মালা। মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস পরে, লাজুক মুখে দাঁড়িয়ে বর-বউ।



স্বাস্থ্যবিধি মানতে, মাথায় হাত দিয়ে আর্শীবাদ নয়, রয়েছে থালা। সেখানেই সারা হচ্ছে আশীর্বাদ পর্ব। নবদম্পতির জন্য রয়েছে উপহার। আর তাঁদের ঘিরে গান গাইছেন হাসপাতালের চিকিত্‍সক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা।

উপস্থিত রাজ্যের মন্ত্রী নির্মল মাজি। এ ছবি হাওড়ার উলুবেড়িয়ার সঞ্জীবন হাসপাতালের। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরলেন সদ্য বিবাহিত যুবক। তাঁর জন্যই হাসপাতালের পক্ষ থেকে এই আয়োজন।

হাওড়ার মশাটের বাসিন্দা সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়। পেশায় দাসনগর থানার সিভিক ভলান্টিয়ার। পরিবার সূত্রে খবর, লকডাউন শুরু হওয়ার ঠিক আগে, এক বিয়েবাড়িতে সুপ্রিয়র সঙ্গে আলাপ হয় হাওড়ার বাসিন্দা পিয়ালি নামে এক তরুণীর।

দু’মাসের মধ্যে আলাপ ক্রমে গাঢ় হয়। চলতি মাসের ২ তারিখ বাড়িতে না জানিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন বর-কনে।  সেইমতো, স্থানীয় এক শিবমন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন তাঁরা।

প্রথমে আপত্তি সত্ত্বেও, পরে মেনে নেয় দুই পরিবার। ৪ তারিখ বরের বাড়িতে ঘরোয়া বউভাতের আয়োজন করা হয়। ৩ তারিখ সারাদিন ধরে চলে তার আয়োজন।

কিন্তু সেদিনই নেমে আসে দুঃসংবাদ। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৯টা।  বিয়ের আনন্দে সবাই যখন মশগুল, তখন বাড়িতে আসেন, দাসনগর থানার ওসি। জানান, সুপ্রিয়র করোনা পরীক্ষার রপোর্ট পজিটিভ।

পুলিশ সূত্রে খবর, ৩০ তারিখ সুপ্রিয়র নুমনা পরীক্ষা করা হয়।  বিয়েবাড়িতে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। ৩ তারিখ রাতেই সুপ্রিয়কে ভর্তি করা হয় সঞ্জীবন হাসপাতালে।

পরিবারের সকলকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়।  মাঝে প্রায় দু’সপ্তাহের লড়াই।  মঙ্গলবার সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন সুপ্রিয়।

সদ্য বিবাহিত যুবক জানান, তিনি আবার কাজে ফিরতে চান। নববধূ পিয়ালি বলেন, খুব টেনশনে ছিলাম। দুমাসের আলাপ। লকডাউনে সময় পেয়েছিলাম। তাই বিয়ে করে নিলাম। আজ খুব আনন্দ হচ্ছে। ও কাজে গেলে আমার কোনও আপত্তি নেই।

ছেলের সুস্থতার খবরে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন তাঁর বাবা। বলেন, আমার প্রথমে আপত্তি ছিল। তারপর মেনে নিলাম। খবর এল করোনা হয়েছে, এখন সুস্থ। আমি খুশি।

উলুবেড়িয়া সঞ্জীবন হাসপাতালের সুপার শুভাশিস মিত্র বলেন, করোনার বিরুদ্ধে বড় লড়াইয়ের জয়। নবদম্পতির চারহাত এক করে বাড়ি যাচ্ছে।

অ্যাম্বুল্যান্সে বসে বর-বউ। যখন এসেছিলেন একরাশ উত্‍কণ্ঠা নিয়ে। এখন মনে হচ্ছে স্বস্তি। সকলেই মনে করছে, এটা করোনার বিরুদ্ধে বড় জয়।