কলকাতা: বেশিরভাগ লোকই ছোট গাড়ি বা হ্যাচব্যাক কেনেন লিটার পিছু কিলোমিটার দেখে, ঘণ্টা পিছু কিলোমিটার দেখে নয়। অর্থাৎ মাইলেজ, স্পেস আর সত্যিকারের সুযোগসুবিধে অনেক বেশি গুরুত্ব পায় পারফরম্যান্সের থেকে। কিন্তু একই গাড়ি পকেট সাধ্য আবার পারফর্ম্যান্সও দুর্দান্ত এমন যদি হয়? টার্বো পেট্রোল ইঞ্জিনে কিন্তু এই সবই পাচ্ছেন এক সঙ্গে। সাইজে ছোট ঠিকই কিন্তু টার্বো থাকার জন্য পারফর্ম্যান্স একেবারে চোখ ধাঁধানো।

টার্বো পেট্রোল ইঞ্জিনের দাম বেশি, অর্থাৎ বহু ছোট গাড়িতে এই সুবিধে নেই। প্রথম এই ইঞ্জিন আনে ফক্সভাগেন, তাদের পোলো টিএসআই-তে। এখন অনেক কম দামে হুন্ডাইও তাদের গ্র্যান্ড আই১০ নিওস গাড়িতে সেই একই ১.০ টার্বো পেট্রোল এনেছে যা আরও বড় ভেন্যু এসইউভি বা ভার্না-য় পাওয়া যায়। নিওস-এ ইঞ্জিনে ১০০ বিএইচপি ও ১৭২এনএম আর স্ট্যান্ডার্ড ১.২ লিটার বিএইচপি আর ১১৪ এনএম মিলছে। তাই ছোট এই কমপ্যাক্ট গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা পুরোপুরি আলাদা হবে এখন থেকে।

এই টার্বো মসৃণ আর টার্বো ল্যাগ বলে কিছু নেই। গাড়ি স্টার্ট দিন, ৫-স্পিড ম্যানুয়াল আর হালকা ক্লাচের অসাধারণ অনুভূতি হবে। নিওস আকারে ছোট তাই ফাঁকফোকরে অনায়াসে ঢুকে পড়তে পারে, পার্ক করাও সহজ। তবে ২,০০০ আরপিএম পেরিয়ে গেলে টার্বোর শক্তি যখন কাজ করবে, তখন আপনাকে আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে। অতিরিক্ত শক্তি আর টর্ক নিওসকে আক্ষরিকভাবেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে, আপনি শুধু স্টিয়ারিং ধরে থাকবেন। নিওস কার্বোর গতি যে কী দুর্দান্ত, নিজেই বুঝতে পারবেন। তাই গতি আর অ্যাক্সিলারেশনের সঙ্গে অভ্যস্ত হন, যাতে স্পিড লিমিটের ব্যাপারটা মাথায় থাকে।

দ্রুততম তো বটেই, ৫-স্পিড ম্যানুয়ালের নিওস হল কুইকেস্ট হ্যাচব্যাক। স্বয়ংক্রিয় নিওস টার্বো বলে কিছু নেই ঠিকই কিন্তু এত টর্ক থাকায় তার দরকারও নেই, গোটা দিন থার্ড গিয়ারে গাড়ি চালাবেন, অসুবিধেটা বুঝতে পারবেন না।

আর অতিরিক্ত শক্তি থাকলেও নিওস কিন্তু থেমে যায় ঝপ করে। কিন্তু স্টিয়ারিং ঠিক স্পোর্টি কারের মত নয়, এই একটা অসুবিধে। কিন্তু ওই এক্সট্রা পাওয়ারের জন্য কোনও সমস্যা বুঝতে পারবেন না। রোজকার ব্যবহারের জন্য এই গাড়ি দারুণ, গতি দারুণ হলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ওই অতিরিক্ত শক্তির জন্য শহরের যানজটেও সহজে অন্য গাড়িকে টপকানো যাবে। টর্ক আর লাইট কন্ট্রোলের জন্য ড্রাইভ করাও সোজা। তবে টায়ার আরও মোটা হলে আর স্পোর্টিয়ার সাসপেনশন সেট আপ থাকলে আরও ভাল হত। যাই হোক, নিওস-এর স্পেশাল ব্যাজিং আর স্পোর্টিয়ার ইন্টিরিয়র রয়েছে, কালো সিট সঙ্গে লাল ডিটেইলিং। কেবিনও স্পোর্টিয়ার, আপনার পছন্দমত সবরকম ফিচার রয়েছে। তা সত্ত্বেও টপ-এন্ড নিওস বলতে যা বোঝায়, এটা তা নয়।





৭.৬ লাখ টাকা থেকে এই গাড়ির দাম শুরু। নিওস টার্বো অবশ্যই দামী, অন্যান্য ১.২ লিটার পেট্রোল গাড়ির থেকে দাম ১ লাখেরও বেশি। ইকুইপমেন্টের দিক থেকে দেখলেও নিওস টার্বো-য় সেই ফিচারগুলো নেই, যা টপ-এন্ড নিওস১.২ লিটারে থাকে, যেমন পুশ বাটন স্টার্ট/স্টপ! কিন্তু ওই যে অতিরিক্ত টাকাটা দিচ্ছেন, তার ফলে অন্যতম দ্রুত গতির ছোট আর শক্তিশালী গাড়িটা আপনার গ্যারাজে ঢুকে যাচ্ছে। এই দামে এর থেকে বেশি শক্তিশালী গাড়ি ১.২০ লিটারে আপনি আর পাবেন না, তাও আবার ২০ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজে! এই মুহূর্তে এর কোনও প্রতিযোগীই নেই, কারণ পোলোর দাম আরও অনেক বেশি। তাই নিওস টার্বো তাঁদের জন্য যাঁরা তাঁদের ছোট গাড়িতে মাইলেজ ছাড়া আরও বেশি কিছু চান। তবে হ্যাঁ, মোটা টায়ার, স্পোর্টিয়ার স্টিয়ারিং প্যাকেজটা আরও দারুণ করে তুলতে পারত। শুধু গতির জন্য এতগুলো অতিরিক্ত টাকা দেওয়া অবশ্যই প্রশ্ন তুলছে। যাই হোক, আপনি দেশের সব থেকে গতিসম্পন্ন হ্যাচব্যাকের মালিক হতে চলেছেন, আর পারফর্ম্যান্সের দিক থেকে দেখলে এর সমকক্ষ কোনও গাড়ি এখন আর বাজারে নেই।



ভাল লেগেছে- পারফর্ম্যান্স, মসৃণতা, সহজসাধ্য ড্রাইভিং, চেহারা, ইঞ্জিন

ভাল লাগেনি- দাম, কিছু ফিচারের অভাব, স্পোর্টিয়ার সাসপেনশন জরুরি