মুম্বই: ক্যাম্পাসে ব্যঙ্গধর্মী 'রামায়ণ' মঞ্চস্থ করার অভিযোগ। আট পড়ুয়াকে জরিমানা করল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউশন অফ টেকনোলজি বম্বে। মাথাপিছু ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে চার পড়ুয়াকে, যা এক সেমেস্টারের ফি-র সমান। মাথাপিছু ৪০ হাজার করে জরিমানা করা হয়েছে আরও চার পড়ুয়াকে। পাশাপাশি কিছু বিধিনিষেধও চাপানো হয়েছে। (IIT Bombay Raahovan)


গত ৩১ মার্চ IIT Bombay-র পারফর্মিং আর্টস ফেস্টিভ্যাল ছিল। সেখানে 'Raahovan' নামের একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। অভিযোগ, নাটকটি আসলে 'রামায়ণে'র ব্যঙ্গাত্মক রূপান্তর। নাটকে হিন্দু ধর্ম, হিন্দু সংস্কৃতির অবমাননা হয়েছে বলে অভিযোগ। 'রামায়ণে'র মুখ্য চরিত্র সীতাকে নারীবাদী হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে রামকে অপমান করা হয়েছে, রাবণের গুণকীর্তণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ সামনে আসে। (IIT Bombay Ramayana Row)


এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগে বলা হয়েছে, নাটকে রাম, সীতা এবং লক্ষ্মণের মধ্য়ে অশ্লীল ভাষায় কথোপকথন তুলে ধরা হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে ওই নাটকের বেশ কিছু দৃশ্য উঠে এসেছে, যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।



আরও পড়ুন: Tamil Nadu Hooch Tragedy: তামিলনাড়ুতে বিষ মদে মৃত কমপক্ষে ১৩, কড়া পদক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনের


অভিযোগে বলা হয়েছে, নাটকে রাম ও সীতার মধ্যে ঝগড়া দেখানো হয় এক জায়গায়, যেখানে সীতাকে রাম এই বলে অপমান করছেন যে, নিজের ইচ্ছেতেই রাবণের সঙ্গে ঘর ছেড়েছিলেন সীতা। রাবণের হাতে ব্যবহৃত সীতার জায়গা নেই তাঁর রাজত্বে। এর প্রত্যুত্তরে সীতা জানান, পৌরুষ জাহির করতে গিয়ে মনুষ্যত্বই ভুলে গিয়েছেন রাম। সীতার কাছে তিনি পৌরুষ শিখবেন না বলে ঘোষণা করেন রাম। এর উত্তরে সীতা জানান, বাইরের দুনিয়া অনেক আলাদা অঘোরা (রাবণ) তাঁকে সেখানে নিয়ে গিয়ে ভালই করেছিলেন।


রাম ও সীতার মধ্যে যে কথোপকথন তুলে ধরা হয় নাটকে, তাতে সীতাকে বলতে শোনা যায়, "ওখানে নারীর যথেষ্ট সম্মান রয়েছে। উনি জানিয়ে দেন, আমার সম্মতি ছাড়া আমাকে স্পর্শই করবেন না উনি। ওঁর মধ্যে এমন পুরুষকে দেখেছি, যা এই জাতের মধ্যে দেখিনি। তোমরা রাক্ষস হত্যায় উল্লাস করছিলে বটে, কিন্তু আসল রাক্ষসকে হত্যা করতে পারোনি।"


গোটা ঘটনায় নাটকে অংশগ্রহণকারী আট পড়ুয়াকে জরিমানা করেছেন IIT Bombay কর্তৃপক্ষ। নাটকে মূল চরিত্রে ছিলেন যাঁরা, তাঁদের ১ লক্ষ ২০ হাজার এবং পার্শ্বচরিত্রে থাকা বাকিদের ৪০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। স্নাতকস্তরের পড়ুয়াদের উপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞাও চাপানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের জিমখানা পুরস্কারে তাঁদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে। জুনিয়র পড়ুয়াদের হস্টেল পরিষেবা থেকে বাদ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।


২০ জুলাইয়ের মধ্যে জরিমানা মেটাতে বলা হয়েছে পড়ুয়াদের। জরিমানা না মেটালে আরও কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় IIT B for Bharat নামের একটি গোষ্ঠী প্রথমে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়। মহাকাব্য এবং হিন্দু ধর্মের অবমাননা হয়েছে বলে অভিযোগ তেলে তারা। শিক্ষার অধিকারের অপব্যবহার করে হিন্দু দেব-দেবীদের অপান করা হয়েছে বলে দাবি করে তারা। IIT Bombay-র তরফে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে, তাতে স্বাগত জানিয়েছে ওই গোষ্ঠী।


কিন্তু এই পদক্ষেপ বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী হলেও দাবি উঠতে শুরু করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা যদি না থাকে, তাহলে দেশ মোটেই নিরাপদ নয় বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ। কোনও ধর্ম বা ধর্মীয় ভাবনাকে আঘাত করা অভিযোগে এভাবে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা আদৌ সমীচীন কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি IIT Bombay কর্তৃপক্ষ। 


এর আগে, এপ্রিল মাসে পুদুচ্চেরী ইউনিভার্সিটির অনুষ্ঠান ঘিরে একই রকমের অভিযোগ সামনে আসে। এর প্রতিবাদে একদল হ্যাকার বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ওয়েবসাইটই হ্যাক করে। উইকিপিডিয়া থেকে ইউনিভার্সিটির ডেটা মুছে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।