মস্কো: যাত্রীভর্তি ট্রেনের উপর ভেঙে পড়ল সেতু। ভয়ঙ্কর বিপর্যয় রাশিয়ার ব্রায়ানস্কে। এখনও পর্যন্ত সাত জনের মৃত্যুর খবর মিলছে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি অন্তত ৩০ জন। রাশিয়া ও ইউক্রেন সীমান্ত এলাকায়, শনিবার রাতে এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধারকার্য শুরু হয়েছে সেখানে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ছবি ও ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে রাত কেটে ভোর হওয়ার আগেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, সেতুর নীচ দিয়ে ট্রেনটি ছুটে যাচ্ছিল। সেই সময় সেতুর একটি অংশ ট্রেনের উপর ভেঙে পড়ে, যার দরুণ লাইনচ্যুত হয় ট্রেনটির ইঞ্জিন এবং কিছু কামরা। সেতুর উপর দিয়ে ছুটে যাওয়া একটি ট্রাকও ট্রেনের উপর আছড়ে পড়ে। যদিও রাশিয়ার রেল কর্তৃপক্ষ টেলিগ্রামে জানিয়েছেন, 'রেল পরিষেবায় বেআইনি হস্তক্ষেপ করা হয়'। তাহলে কি দুর্ঘটনার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব তুলে ধরা হচ্ছে? রুশ-রেলের বিবৃতি ঘিরে উঠছে প্রশ্ন।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটি মস্কো থেকে ক্লিমভ যাচ্ছিল ট্রেনটি। পথে ভিগনিচস্কি জেলায় ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। তার উপর ভেঙে পড়ে সেতু। সেখানকার গভর্নর আলেকজান্ডার বোগোমাজ জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাদের। একটি শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আলেকজান্ডার জানিয়েছেন, উদ্ধারকার্য শুরু হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে পরিষেবা দিচ্ছে এলাকার হাসপাতালগুলি।

রাশিয়ার দুই সরকারি সংবাদ সংস্থা RIA এবং TASS জানিয়েছে, ট্রেনের চালক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। রাশিয়ার কিছু বেসরকারি টেলিগ্রাম চ্যানেল যেমন, Baza এবং SHOT দাবি করেছে, সেতুটি ভেঙে পড়েনি। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেটিকে। রাশিয়ার রেল কর্তৃপক্ষ 'বেআইনি হস্তক্ষেপে'র উল্লেখ করলেও,  বিশদে কিছু জানাননি। ইউক্রেন সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ইউক্রেনের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

রুশ সরকারের তরফে যে ছবি ও ভিডিও তুলে ধরা হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে ট্রেনের কামরা কার্যত ভেঙে দুমড়ে গিয়েছে। সেতুর ধ্বংসাবশেষও চোখে পড়ছে। জানা যাচ্ছে, দুর্ঘটনার সময় সেতুর উপর দিয়ে গাড়িও যাচ্ছিল। একটুর জন্য সেই গাড়ি ট্রেনের উপর ভেঙে পড়েনি। তত ক্ষণে সেতু পেরিয়ে যায় সেটি।

গত তিন বছর ধরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যে ব্রায়ানস্কে ট্রেন সমেত সেতু ভেঙে পড়েছে, সেই অঞ্চলও যুদ্ধে বিধ্বস্ত। বারংবার সেখানে ড্রোন হামলা চালানো হয় বলে খবর। সীমান্তের ওপার থেকে লাগাতার গোলাগুলি বর্ষণও হয় বলে জানা যাচ্ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেনকে যুদ্ধ থেকে সরে আসার আর্জি জানিয়েছেন। সেই নিয়ে আগামী সপ্তাহে ইস্তানবুলে বৈঠকও রয়েছে দুই দেশের আধিকারিকদের। কিন্তু তার মধ্যেই এই ট্রেনের উপর সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটল, যা নিয়ে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব উঠে আসছে। এই ঘটনা যুদ্ধবিরতির আলোচনার উপরও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।