নয়াদিল্লি: বিবাহের অধিকার থেকে সমলিঙ্গের যুগলদের বঞ্চিত করা যায় না বললেও, সমলিঙ্গের বিবাহের আইন স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোল না সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, সমকামী যুগলদের অধিকার এবং প্রাপ্য নিয়ে কমিটি গড়ুক কেন্দ্র। প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার জন্য আইন তৈরি বা পাল্টানোর অধিকার নেই শীর্ষ আদালতের। তাই কেন্দ্রকেই বিষয়টি নিয়ে এগনোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। (Same Sex Marriage)
গত ১৮ এপ্রিল থেকে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাট, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি পিএস নরসিংহের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি চলছিল। মঙ্গলবার পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ চারটি পৃথক রায় দেয়। কিছু বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেওয়াতেই এমন রায়। (Supreme Court of India)
এদিন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানান, প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার জন্য বিশেষ বিবাহ আইনের বিধি বাতিল করতে পারে না শীর্ষ আদালত। কারণ আইন তৈরির অধিকার সংসদ এবং আইনপ্রণেতাদের হাতেই ন্যস্ত। কেন্দ্রের হয়ে আদালেত উপস্থিত সলিসিটর জেনারেলের বয়ানের উল্লেখ করে, কমিটি গড়ার বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি, যার আওতায় সমলিঙ্গের মিলনের ক্ষেত্রে ওই যুগলদের অধিকার এবং প্রাপ্য ঠিক করা যায়।
আদালতে এদিন প্রধান বিচারপতি জানান, রূপান্তরকামী এবং নারী-পুরুষ সম্পর্ক, বর্তমান আইন এবং ব্যক্তিগত অধিকার আইনের ক্ষেত্রে সব ক্ষেত্রেই বিবাহের অধিকার স্বীকৃত। শুধু তাই নয়, বাকিদের সঙ্গে সমকামী যুগলদেরও যৌথ ভাবে সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সেন্টার অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটির অনুচ্ছেদ ৫(৩)টি সংবিধান বিরুদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। সমলিঙ্গের মিলনকে ভালবাসার মিলন হিসেবে গন্য করার কথাও বলেন তিনি। একই সুর শোনা যায় বিচারপতি কউলের গলায়। তিনি জানান, বিশেষ বিবাহ আইনের আওতায় সমলিঙ্গের বিবাহকে স্বীকৃতিদানের ক্ষেত্রে আদালতের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সংসদকেই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
আদালতে এদিন প্রধান বিচারপতি জানান, রূপান্তরকামী এবং নারী-পুরুষ সম্পর্ক, বর্তমান আইন এবং ব্যক্তিগত অধিকার আইনের ক্ষেত্রে সব ক্ষেত্রেই বিবাহের অধিকার স্বীকৃত। শুধু তাই নয়, বাকিদের সঙ্গে সমকামী যুগলদেরও যৌথ ভাবে সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সেন্টার অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটির অনুচ্ছেদ ৫(৩)টি সংবিধান বিরুদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। সমলিঙ্গের মিলনকে ভালবাসার মিলন হিসেবে গন্য করার কথাও বলেন তিনি। একই সুর শোনা যায় বিচারপতি কউলের গলায়। তিনি জানান, বিশেষ বিবাহ আইনের আওতায় সমলিঙ্গের বিবাহকে স্বীকৃতিদানের ক্ষেত্রে আদালতের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সংসদকেই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
এর পর বিচারপতি ভাট জানান, আইনি বিবাহের বিষয়টি কার্যকরী আইনের মাধ্যমেই ঠিক হওয়া উচিত। তাই উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়েই সমকামী যুগলদের অধিকার এবং প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা ঠিক করা উচিত। যে মামলার নিরিখে এই শুনানি, তা সমলিঙ্গের বিবাহকে আইনি স্বীকৃতিদানের মামলা নয় বলেও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সমকামী ব্যক্তির নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হলে বা তাঁদের অপরাধের আওতায় এনে ফেলার ঘটনায় এর আগে হস্তক্ষেপ করেছে আদালত। কিন্তু বিয়ে যদি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হয়, সেক্ষেত্রে সমাজের যে কেউ একই রকমের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান বা তার থেকে অব্যাহতি চেয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ দাবি করতে পারে কি?
বিচারপতি ভাট আরও জানান, সমকামী যুগলদের জন্য আইন তৈরির অধিকার নেই আদালতের। এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িয়ে রয়েছে, যা একমাত্র আইনপ্রণেতাদের হাতেই রয়েছে। কিন্তু সমকামী যুগলদেরও সম্পর্কের অধিকার রয়েছে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি। বলেন, “নিজের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার আছে সমকামীদের। কিন্তু তা থেকে উদ্ভূত অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য নয় রাষ্ট্র। তিনি বলেন, “এই একটি ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মতভেদ রয়েছে।” সমকামী যুগলদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইএসআই-এর মতো সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখলে, তাতে বৈষম্যই করা হয় বলেও জানান। সমকামী যুগলদের সন্তান দত্তক নেওয়ায় অনুমোদন দেওয়ার বিরোধিতা করেন তিনি। তাতে সমর্থন জানান বিচারপতি কোহলিও।
বিচারপতি নরসিংহ জানান, সামাজিক প্রথা অনুযায়ীই বিবাহে অধিকার ঠিক হয়ে এসেছে এতদিন। তাই বিবাহের মতো অন্য় একটি সামাজিক বন্ধনে অনুমোদন দেওয়া সাংবিধানিক ভাবে ঠিক হবে না। সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে CARA-র যে বিধি রয়েছে, তাকে অসংবিধানিক বলতে সম্মত হননি বিচারপতি নরসিংহ। তবে সমকামী যুগলদের পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটি এবং বিমানর দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা উচিত বলে জানান।
সমকামী যুগল, রূপান্তরকামী ব্যক্তি এবং লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সমাজকর্মীদের তরফে আদালতে ২০টি আবেদন জমা পড়েছিল। ১৯৫৪ সালের বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইন, এবং ১৯৬৯ সালের বিদেশি বিবাহ আইনকে চ্যালেঞ্জ জানান তাঁরা। তাঁদের যুক্ত ছিল, এই তিনটি আইনে, কোথাওই বিপরীত লিঙ্গের মানুষের বিয়েকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ LGBTQIA+-এর প্রতি বৈষ্যম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। মামলাটি গ্রহণ করলেও, শুধুমাত্র বিশেষ বিবাহ আইনটির নিরিখেই মামলার শুনানি করতে রাজি হয় সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলা চলাকালীন, কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, বিবাহের আইনি স্বীকৃত ছাড়াই সমকামী যুগলদের অধিকার এবং প্রাপ্য সুযোগ-সবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টি কমিটি গড়ে পর্যালোচনা করে দেখা হবে, যার আওতায় প্রভিডেন্ট ফান্ড, বিমা, যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সামাজিক নিরাপত্তা এবং সমাজকল্যাণ প্রকল্পগুলির আওতায় আনার মতো বিষয় থাকবে।
আবেদনকারীদের হয়ে আদালতে সওয়াল করছিলেন মুকুল রোহতগি, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, রাজু রামচন্দ্রণ কেভি বিশ্বনাথন, মেনকা গুরুস্বামী, জায়না কোঠারি, সৌরভ কৃপাল, আনন্দ গ্রোভার, গীতা লুথরা, অরুন্ধতী কাটজুস বৃন্দা গ্রোভার, করুণা নন্দী, মনু শ্রীনাথরা। কেন্দ্রের হয়ে আদালতে সওয়াল করছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। মধ্যপ্রদেশ থেকে রাকেশ দ্বিবেদী, কপিল সিবল এবং অরবিন্দ দাতা আবেদনের বিরোধিতা করেন।