নয়াদিল্লি: ভারতের অর্থনীতি নিয়ে বড় ঘোষণা বিশ্ব ব্যাঙ্কের। মাথাপিছু আয়ের নিরিখে আমেরিকার এক চতুর্থাংশ হতে ভারতের আরও ৭৫ বছর সময় লাগবে বলে জানাল তারা। শুধু ভারতই নয়, উচ্চ আয়ের পথে আগামী কয়েক দশক পৃথিবীর ১০০টি দেশের সামনে যথেষ্ট বাধা-বিপত্তি রয়েছে বলে জানাল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। (World Bank Report)
World Development Report 2024: The Middle Income Cap শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মাথাপিছু আয়ের নিরিখে আমেরিকার এক চতুর্থাংশ হতে ১০ বছর সময় লাগবে চিনের। ইন্দোনেশিয়ার সময় লাগবে ৭০ বছর। অর্থাৎ ভারতকে চিন, এমনকি ইন্দোনেশিয়ার থেকেও পিছিয়ে রেখেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। (World Development Report 2024)
গত ৫০ বছরে কোন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কী জায়গায় থেকেছে, সেই নিয়ে রিপোর্টটি তৈরি করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। বলা হয়েছে, ১৯৯০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৩৪টি মাঝারি আয়ের দেশ উচ্চ আয়ের শ্রেণিতে উন্নীত হতে পেরেছে। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ দেশই হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, অথবা নতুন তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়েছে দেশে।
আরও পড়ুন: IDBI Bank Sale: বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এই ব্যাঙ্ক, মালিকানা পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে প্রবাসী ভারতীয় ব্যবসায়ী
২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত পৃথিবীতে মাঝারি আয়ের দেশের সংখ্যা ছিল ১০৮। মাথাপিছু বার্ষিক জিডিপি ১১৩৬ থেকে ১৩,৮৩৫ ডলার ছিল। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ ৬০০ কোটি মানুষের বাস ওই দেশগুলিতে। সেখানে প্রতি তিন জনের মধ্যে দু'জন দারিদ্রের মোকাবিলা করছেন। ওই দেশগুলি থেকে বিশ্ব অর্থনীতির ৪০ শতাংশের বেশি জিডিপি আসে, কিন্তু ওই দেশগুলিতেই ৬০ শতাংশ কার্বন নির্গমন ঘটে।
বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, মাঝারি আয়ের এই দেশগুলি এই ফাঁদ থেকে বেরোতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হবে। কারণ তাদের জনসংখ্যা বুড়িয়ে যাবে, শুল্কের হার বৃদ্ধি পেলে ব্যবসা বাণিজ্যে বাধা আসবে, ধারদেনা বাড়বে ক্রমশ, কার্বন নির্গমন কাবু করে ফেলবে। ফলে পরিবেশের ক্ষতি না করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রাস্তা একপ্রকার বন্ধ হওয়ার জোগাড় হবে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু দেশ এখনও গত শতাব্দীর নিয়ম মেনে চলছে বলে মত বিশ্ব ব্যাঙ্কের। তাদের দাবি, শুধুমাত্র বিনিয়োগের পরিসর বৃদ্ধিতেই নজর দিচ্ছে ওই সব দেশ। খানিকটা ফার্স্ট গিয়ারে জোরে গাড়ি চালানোর চেষ্টা। এর ফলে,- চলতি শতকের মাঝামাঝি সময়েই দ্রুতবর্ধনশীল দেশগুলিও দৌড়ে পিছিয়ে পড়বে বলে মত বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দ্রমিত গিলের।
মাঝারি দেশগুলির পক্ষে বিশ্ব অর্থনীতিতে উপরের দিকে উঠে আসা কঠিন হবে বলে মত বিশ্ব ব্যাঙ্কের। কী উপায়ে এই বিপদ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, তারও উপায় বাতলে দিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তারা জানিয়েছে, উচ্চ আয় সম্পন্ন দেশ হতে গেলে অর্থনৈতিক নীতিতে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। দেশের সর্বত্র উন্নত পৌঁছে দিতে হবে, সমাজে ভারসাম্য আনতে হবে। এ ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ১৯৬০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার মাথাপিছু আয় ছিল ১২০০ ডলার, ২০২৩ সালে যা বেড়ে ৩৩০০০ ডলারে পৌঁছে গিয়েছে।