নয়াদিল্লি: পূর্ব লাদাখে শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইলেও, ভারত যে যুদ্ধের জন্য়ও প্রস্তুত, তা চিনকে বুঝিয়ে দিতে গালওয়ানে ভারী রণ-সরঞ্জাম ও অস্ত্রবহর বাড়াল সেনা।


মঙ্গলবার, লাদাখের চুশুলে মিলিত হচ্ছেন ভারত ও চিনের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডাররা। লক্ষ্য হবে, আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সীমান্ত সমস্যার নিরসন করা। তবে, একইসঙ্গে ভারত এটাও বুঝিয়ে দিয়েছে, শান্তি চাইলেও, তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। সেক্ষেত্রে, যদি শান্তি আলোচনায় ভেস্তে যায় বা কোনও সমাধান না হয় এবং পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে, তাহলে ভারত তার মোকাবিলা করতেও প্রস্তুত।


আর সেই প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে ভারত লাদাখে সামরিক শক্তি অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে। সম্প্রতি, লাদাখ সীমান্তে চিনা বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানের আনাগোনা বেড়েছে। সেখানে সামরিক কপ্টার পাঠিয়েছে বেজিং। তারওপর, গত সপ্তাহে সামরিক আইএল-৭৬ সামরিক পণ্যবাহী বিমানকে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে অবতরণ করিয়েছে চিন।


আকাশপথের পাশাপাশি, ভূমিতেও সামরাস্ত্র মোতায়েন করেছে চিন, এমন খবর দিয়েছে ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা সূত্রে। জানা গিয়েছে, চিনা এয়ারফোর্সের বেশিরভাগ যুদ্ধবিমান প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ২৪০ কিলোমিটার ভেতরে তাকলামাকান মরু অঞ্চলে অবস্থিত হোতান বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে অপারেট করছে। পাশাপাশি, ভারতীয় যুদ্ধবিমান আটকাতে রাখা হয়েছে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র।


এখন তার মোকাবিলা করতে, কোমর বেঁধেছে ভারতও। আগেই লাদাখ সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান স্তম্ভ সুখোই-৩০এমকেআই। মোতায়েন করা হয়েছে কুইক রিয়্যাকশন ভূমি থেকে আকাশ (কিউআরস্যাম) "আকাশ" ক্ষেপণাস্ত্র।


এখন সেনা সূত্রে খবর, ভারতীয় সেনা লাদাখে টি-৯০ "ভীষ্ম" ট্যাঙ্কের ২টি রেজিমেন্টকে মোতায়েন করেছে। মূল লক্ষ্য হল, যুদ্ধ বাঁধলে গালওয়ান নদীপাড়ে ঘাঁটি গেড়ে থাকা চিনা পদাতিক সেনা ও সাঁজোয়া গাড়িগুলিকে ধ্বংস করা। টি-৯০ ট্যাঙ্কের পাশাপাশি, ভারত সেখানে ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী বাজুকা মোতায়েন করেছে ভারত।


ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, পূর্ব লাদাখের ১৫৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে এখন ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকল (সাঁজোয়া) গাড়ি মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে আর্টিলারিও। চিনুক কপ্টারে করে সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা "এম৭৭৭" ১৫৫ এমএম আল্ট্রা লাইট হাউইৎজার কামান।


এখানেই শেষ নয়। কেন্দ্রীয় সূত্রে খবর, লাদাখ সীমান্তে ইজরায়েল থেকে প্রাপ্ত "স্পাইডার" এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে মোতায়েন করেছে ভারত। সম্প্রতি, এই বিশেষ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বন্ধু রাষ্ট্র থেকে ভারতে এসেছে। আরও জানা গিয়েছে, শীঘ্রই ইজরায়েলের আরেকটি ঘাতক "বারাক-৮" ভূমি থেকে আকাশ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রকেও মোতায়েন করতে চলেছে ভারত। এর জন্য আপৎকালীন ভিত্তিতে ইজরায়েলের থেকে এই মারণ ক্ষেপণাস্ত্র ধার নিয়েছে ভারত।


সাধারণত, বারাক-৮ হল অত্যাধুনিক দূরপাল্লার নৌসেনা জন্য তৈরি করা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (এলআরস্যাম)। এটি যৌথভাবে তৈরি করেছে ভারতের ডিআরডিও ও ইজরায়েলের এরোস্পেস ইন্ডাট্রিজের অধিনস্থ সংস্থা এলটা ও রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেম।


ভারতীয় নৌসেনায় এই ক্ষেপণাস্ত্র ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির রণতরীতে মোতায়েন রয়েছে। তবে স্থল ও বায়ুসেনার জন্য এই ক্ষেপণাস্ত্রের মাঝারি পাল্লার সংস্করণটি এখন পরীক্ষাস্তরে রয়েছে। তাই আপৎকালীন পরস্থিতিতে ইজরায়েল এই ক্ষেপণাস্ত্র থেকে ধার নিচ্ছে ভারত।


ভারত চিনকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সুচাগ্রমেদিনী..। চিনকে যে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না তা ভারতীয় সেনার মনোভাবেই স্পষ্ট।