মুম্বই: মহারাষ্ট্রে মরাঠাওয়াডা অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি, বন্যা ও বজ্রপাতে বিপর্যয়। বিভিন্ন ঘটনায় কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এনডিআরএফের দল ৫৬০ জনের বেশি মানুষকে নিরাপদে উদ্ধার করেছে। সরকারি আধিকারিকরা মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, রবিবার ও সোমবারের প্রবল বর্ষণে দুশোরও বেশি গবাদি পশু ভেসে গিয়েছে। প্রচুর ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


 মুম্বইতেও মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টি হয়। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মরাঠাওয়াড়া, মুম্বই  সহ মহারাষ্ট্রের উপকূলবর্তী এলাকাগুলি আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। মধ্য মহারাষ্ট্রের মরাঠাওয়াড়া অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এখানকার ঔরঙ্গাবাদ, লাতুর, উসমানাবাদ, পরভানি, নান্দেদ, বিড়, জালনা ও হিঙ্গোলিতে বৃষ্টির ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গিয়েছে।


রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ইয়াভতমাল জেলায় মঙ্গলবার প্রবল বৃষ্টির মধ্যে বন্যার জলে রাজ্য পরিবহণ বিভাগের একটি বাস সেতু পেরোনোর সময় ডুবে যায়। এই ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। আরও তিনজন নিখোঁজ।  আধিকারিক সূত্রে খবর, এই ঘটনা উমরখেড় তহশিলের দহাগাওঁ পুলে সকাল আটটা নাগাদ ঘটে। ওই সময় মহারাষ্ট্র রাজ্য সড়ক পরিবহণ নিগমের সেমি লাক্সারি বাস নাগপুর থেকে নান্দেড় যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।


মাঞ্জারা বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টির কারণে জলস্তর বৃদ্ধির পর আধিকারিকরা মঙ্গলবাল নিকাশির জন্য বাঁধের ১৮ টি গেটই খুলে দেয়। এর ফলে বিড় জেলার কয়েকটি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।


সরকারি সূত্রে খবর, স্থানীয় প্রশাসন মঙ্গলবার মঞ্জারা বাঁধের সব কটি গেট ও মজলগাঁও বাঁধের ১১ টি গেট খুলে দেয়। ওই দুটি বাঁধ থেকে যথাক্রমে ৭৮,৩৮৯ ও ৮০,৫৩৪ কিউসেক জল ছাড়া হয়। মৌসম ভবন, আগামী দুদিনে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকাতেই বৃষ্টির আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।


সরকারি সূত্রে খবর, মরাঠাওয়াড়ার আট জেলার ১৮০ সার্কেলে ৬৫ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির ফলে জল বের করে গিয়ে কয়েকটি বাঁধের গেট খুলে দেওয়ায় বিড় ও লাতুর জেলার মাঞ্জরা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে,  গত ৪৮ ঘণ্টায় এই অঞ্চলের ছয় জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিড়ে তিন, উসমানাবাদ ও পরভানি জেলায় দুজন করে, নান্দেড় ও লাতুরে একজন করে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।


সরকারি সূত্রে খবর, দুদিনের টানা বৃষ্টির কারণে দুশোর বেশি পশুর মৃত্যু হয়েছে। ২৮ টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি ও বন্যার কারণে আট জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বেশ কয়েক হেক্টর জমির ফলস নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের জলসেচ মন্ত্রী জয়ন্ত পাতিল বিড় জেলায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি যথাসম্ভব এড়ানোর চেষ্টা চলছে।


লাতুরে প্রবল বৃষ্টিতে নদী তীরে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারের জন্য এনডিআরএফের একটি দল, হেলিকপ্টার ও নৌকা মোতায়েন করা হয়। সরকারি সূত্রে খবর, সরসা গাঁওয়ের মাঞ্জরা নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে আটক ৪০ জনের মধ্যে ২৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ১৫ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। রেনাপুর তেহশিল থেকেই আটরে পড়া তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে।