চেন্নাই : চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের পর উজ্জীবিত ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র বিজ্ঞানী-আধিকারিকরা। পরবর্তী মিশনে সূর্যের দিকে 'চোখ রাখতে' চাইছেন তাঁরা। বুধের সন্ধেতেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর (South Pole) কাছে সফলভাবে ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণের সাফল্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতেছে গোটা দেশ। 


সূর্যের রহস্য ভেদ করার জন্য প্রথম মহাকাশ-ভিত্তিক ভারতীয় অবজার্ভেটরি আদিত্য-L1 মহাকাশযান এই মুহূর্তে শ্রীহরিকোটায় রয়েছে এবং উৎক্ষেপণের জন্য সেটিকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই উপগ্রহটিকে PSLV রকেটে পাঠাবে ISRO। সৌর বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণার লক্ষ্যে পাঠানো হবে এই রকেট। অগাস্টের শেষ বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে। ISRO বলছে, মহাকাশযানটিকে সূর্য-পৃথিবীর সিস্টেমের প্রথম Lagrange পয়েন্ট, L1 এর চারপাশে হ্যালো কক্ষপথে রাখা হবে।


L1 পয়েন্টের চারপাশে থাকা স্যাটেলাইটের প্রধান সুবিধা হচ্ছে- সেটি অবিচ্ছিন্নভাবে সূর্যকে জাদু/গ্রহণ ছাড়াই দেখা যাবে। সূর্যদেবতার নামে নামকরণ করা হয়েছে আদিত্য-L1 উপগ্রহের। যাকে বহন করবে ভারতে তৈরি রকেট পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল বা PSLV। শুধু কি তাই ?


শুক্রেও পাড়ি দেওয়ার লক্ষ্যে রয়েছে ISRO। ২০২৪-এর জন্য মিশন শুক্র। যদিও, এনিয়ে বিস্তারিত আগামীদিনে জানা যাবে।


চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভারতের চন্দ্রযান-


আজ চাঁদের বুকে ইতিহাস গড়ে ফেলল ভারত। একদম ঘড়ি মিলিয়ে চন্দ্রবক্ষে নামে ভারতের তৈরি চন্দ্রযান ৩। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অগম্য স্থানে পৌঁছে যায় ভারত। মহাকাশ বিজ্ঞানে কার্যত নতুন ইতিহাস গড়ল ভারত। যা রাশিয়ার লুনা ২৫ করে দেখাতে পারেনি, তা করে দেখাল ভারতের চন্দ্রযান ৩। কিন্তু বার বার চাঁদের দক্ষিণ মেরুই কেন ? ওই জায়গায় নামার জন্য সব দেশের মধ্য়ে প্রবল প্রতিযোগিতা কেন ? কী আছে, চাঁদের আন্টার্কটিকায় ?


সেখানে একটুও আলো নেই। কারণ, সূর্য স্পর্শই করে না চাঁদের ওই পিঠকে। তাই পদে পদে আছে ‘বিপদ’! সেই বিপদের ঝুঁকি নিয়েই সফল হল ইসরো। চাঁদের মাটিতে লেখা হল তার নাম।  ১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রংরা চাঁদের উত্তর মেরুর একটি অংশে নেমেছিলেন। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত চাঁদে যে ক’টি সফল অভিযান হয়েছে, সবই উত্তর গোলার্ধকে কেন্দ্র করে। এবার দক্ষিণের দুয়ার খুলে ফেললেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।


কী আছে দক্ষিণের দুয়ারে ? বিজ্ঞানীদের দাবি, চাঁদের মাটির গভীর আছে – ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়ম, টাইটেনিয়াম, সিলিকনের অফুরন্ত ভাঁড়ার। এছাড়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের মাটিতে আছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম। আছে আর এক মহার্ঘ জিনিস- হিলিয়াম থ্রি। পৃথিবীতে যার খোঁজ খুব একটা মেলে না। এই হিলিয়াম থ্রি, কোনও বর্জ্য ছাড়াই শক্তি উৎপাদনে সক্ষম। ২ টন হিলিয়াম থ্রি সারা ভারতের এক বছরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে পারে। 


চাঁদের দক্ষিণ মেরু বরফে মোড়া। রয়েছে গভীর খাদ, উঁচু পাহাড়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে খাদের বিস্তার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে লুকিয়ে রয়েছে রহস্যের ভাণ্ডার। তেজস্ক্রিয় মৌলের ভাণ্ডার রয়েছে চন্দ্রপৃষ্ঠের এই রুদ্ধদ্বারে। পৃথিবী সৃষ্টির রহস্যে নাকি সেখানেই লুকিয়ে। যার লোভে আমেরিকা, রাশিয়া, চিন বারে বারেই অভিযান চালানোর চেষ্টা করেছে চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ ভাগে।