নয়াদিল্লি:  খরচ কমাতে ইন্ডিয়া গেটের (India gate) ঐতিহ্যশালী ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’-কে (Amar Jawan Jyoti) জাতীয় যুদ্ধ স্মারকের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে এ বার সাফাই দিতে এগিয়ে এল কেন্দ্রীয় সরকার (Modi Governmnet)। দিল্লির তরফে জানানো হয়েছে, শহিদ জওয়ানদের স্মৃতিতে অর্পিত ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ নিয়ে ভুল খবর ছড়ানো হচ্ছে। ইন্ডিয়া গেটে রাখা চিরন্তন অগ্নিশিখা (Eternal Flame) নেভানো হচ্ছে না, তা শুধু জাতীয় যুদ্ধ স্মারকে (National War Memorial) রাখা অগ্নিশিখার সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।



প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে শুক্রবার দুপুরে ইন্ডিয়া গেটে রাখা চিরন্তন অগ্নিশিখাকে জাতীয় যুদ্ধ স্মারকে রাখা অগ্নিশিখার সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইতিহাস মুছে ফেলতে শহিদ স্মৃতির ‘মোদিকরণ’ হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। সেই আবহে শুক্রবার দিল্লির তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ‘অমর জওয়ান জ্যোতি নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে। অদ্ভূত বিষয় হল, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে শহিদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুধুমাত্র অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত করা হয়। কোথাও শহিদ জওয়ানদের নামের উল্লেখ নেই।







আরও পড়ুন: Amar Jawan Jyoti: ৫০ বছর পর কেন নিভছে শহিদ স্মৃতির অমর জওয়ান শিখা, কী কারণ!


ব্রিটিশ নির্মিত ইন্ডিয়া গেট প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত তৎকালীন ব্রিটিশ বাহিনীর অংশ সেনাদের উল্লেখ ঔপনিবেশিক শাসনেরই ধারক বাহক বলেও দাবি করেছে কেন্দ্র। তাদের যুক্তি, ‘ইন্ডিয়া গেটে যে মুষ্টিমেয় শহিদের নাম খোদাই করা রয়েছে, তাঁরা প্রথম বিশ্বয়ুদ্ধে এবং ইন্দো-আফগান যুদ্ধে ব্রিটিশদের হয়ে লড়াই করতে গিয়ে শহিদ হন। তাই ইন্ডিয়া গেট ঔপনিবেশিক শাসনেরই প্রতীক। জাতীয় যুদ্ধ স্মারকে ১৯৭১ এবং তার আগের এবং পরের ভারতীয় শহিদদের উল্লেখ রয়েছে। তাই জাতীয় যুদ্ধ স্মারকে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখাই প্রকৃত অর্থে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।’



শহিদ স্মৃতির দোহাই দিয়ে বিরোধীরা আসলে জওয়ানদের বিদ্রূপ করছেন বলেও অভিযোগ কেন্দ্রের। তাদের দাবি, ‘দীর্ঘ সাত দশকে যাঁরা একটিও যুদ্ধ স্মারক তৈরি করেনি, শহিদ স্মৃতি নিয়ে আজ তাঁদের কুম্ভীরাশ্রু বিদ্রুপ ছাড়া কিছু নয়।’ কেন্দ্রের এই বিবৃতি টুইটারে তুলে ধরেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্রও।



‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও মুখ খোলেন। কংগ্রেকে নিশানা করে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দিল্লিতে শুধুমাত্র কয়েকটি পরিবারের জন্যই নতুন নির্মাণ হয়েছে। দেশ আজ সেই সংকীর্ণতা কাটিয়ে, নতুন গৌরবস্থলের নির্মাণ করছে। আমাদের সরকার দিল্লিত বাবাসাহেবের সৌধ নির্মাণ করেছে। রামেশ্বরমে তৈরি করা হয়েছে এপিজে আবদুল কালামের স্মারক। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মার স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলিকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। আদিবাসী সমাজের গৌরবময় ইতিহাসকে তুলে ধরতে দেশে জুড়ে আদিবাসী মিউজিয়াম তৈরি করা হচ্ছে।’’


প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১৯১৪ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে নিহত সেনার সম্মানে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ইন্ডিয়া গেট তৈরি করে। ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান (1971 Indo-Pak War) যুদ্ধে শহিদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে ১৯৭২ সালে রাজধানীর বুকে, ইন্ডিয়া গেটের (India Gate) পাদদেশে ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ শিখার প্রতিষ্ঠা হয়। উল্টো করে বসানো রাইফেলের মাথায় সেনাবাহিনী পরিহিত হেলমেট বসানো হয় একটি স্তম্ভের উপর। তার পাশে রাখা হয় আগুনের শিখা। সেই থেকে বিগত ৫০ বছর ধরে ওই শিখা বহ্নিমান, সচক্ষে যা দেখতে ভিড় করেন দেশ-বিদেশের মানুষ।







স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে এক বছর ধরে যেখানে ‘অমৃত মহোৎসব’ পালনের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী, সেখানে চিরন্তন অগ্নিশিখার স্থানান্তরণ ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা বই অন্য কিছু নয় বলে অভিযোগ বিরোধীদের।



তাই কেন্দ্রের যুক্তি ধর্তব্যের মধ্যে আনতে নারাজ সিবসেনা সাংসদ স্বাতী চতুর্বেদি। তাঁর কথায়, ‘চিরন্তন শিখা নিভতে চলেছে। নতুন ভারতে আর কত ভাবনা, সৌধের পুনর্নির্মাণ হবে? খুব কষ্ট হচ্ছে, আবার রাগও হচ্ছে। দয়া করে জ্ঞান দিতে আসবেন না যে, শিখা নেভানো হচ্ছে না, যুদ্ধ স্মারকের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দু’টি একসঙ্গে প্রজ্জ্বলিত রাখতে সমস্যা কোথায়?’