কলকাতা: চায়ের কাপে বিতর্কের ঝড় ওঠে মাঝে মধ্যে। কিছুদিন সেই নিয়ে টানাপোড়েন চলে। তার আবার আগের মতোই সব থিতিয়ে যায়। তাই আর অপেক্ষা করতে নারাজ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর (Netaji Subhash Chandra Bose) কন্যা অনিতা বসু পাফ (Anita Bose Pfaff)। জাপানের টোকিওর মন্দিরে (Renkō-ji Temple) রাখা চিতাভস্মের ডিএনএ পরীক্ষা করাতে তিনি শীঘ্রই আবেদন করতে চলেছেন বলে জানালেন। ভারত এবং জাপান, দুই দেশের সরকারের কাছেই এ নিয়ে আবেদন জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন।
ভারত এবং জাপান সরকারের কাছে আবেদন জানাতে চলেছেন অনিতা
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির রেশ এখনও কাটেনি। সেই আবহেই নতুন করে রহস্য উদ্ঘাটনে উদ্য়োগী হয়েছেন অনিতা। তাঁর মতে বছরের পর বছর ধরে যে রহস্য নিয়ে এত টানাপোড়েন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতেই তার উদ্ঘাটন হওয়া উচিত।সেটাই নেতাজিকে প্রকৃত অর্থে শ্রদ্ধা জানানো হবে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন অনিতা। তিনি বলেন, ‘‘নেতাজির কন্যা হিসেবে বেঁচে থাকতে এই রহস্যের অবসান দেখতে চাই আমি। আনুষ্ঠানিক ভাবে শীঘ্রই ভারত সরকারের কাছে আবেদন করব আমি। উত্তর আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করব কিছুদিন। প্রতিক্রিয়া সদর্থক হলে ভাল। তা না হলে জাপান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করব। সরকার যদি রাজি হয় অথবা যদি আমাকে এগিয়ে যেতে সায় দেয় এবং নিজে এর মধ্যে জড়াতে না চায়, তাহলে বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি আমি।’’
অনিতা জানিয়েছেন, কেন্দ্রের পূর্বতন কংগ্রেস সরকারকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সাড়া পাননি তাদের কাছ থেকে। এ বার আর বেশি দেরি করবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। অনিতা বলেন, ‘‘এ বার আর গড়িমসি হতে দেব না। কোভিডের জন্য বিষয়টি দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে এমনিতেই। তাই জাপান সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ করবে। শুরুতে জাপান সরকার ভেবেছিল, হয়ত কয়েক মাসের ব্যাপার। তাই চিতাভস্ম রাখতে রাজি হয়েছিল তারা। কিন্তু ৭৭ বছর কেটে গিয়েছে। কারও নাম করতে চাই না। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য, নেতাজির জীবন এবং তাকে ঘিরে তৈরি হওয়া রহস্য রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য তেমন নয়। অধিকাংশ মানুষ আজও তাঁকে শ্রদ্ধা করেন, ভালবাসেন। তাঁরা কেউ রাজনীতি করেন না।’’
কেন্দ্রের বর্তমান বিজেপি সরকার নেতাজিকে সম্মান জানাতে এগিয়ে এলেও, তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতেও পিছপা হবেন না বলে জানিয়েছেন অনিতা। তিনি বলেন, ‘‘চাপ সৃষ্টি না করার কোনও কারণ তো দেখছি না আমি। বিমান দুর্ঘটনায় যে ওঁর মৃত্যু হয়েছে, তার সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তাই আমার কাছে কোনও রহস্য নেই। কিন্তু আমি চাই নিজের মাতৃভূমিতে ওঁর চিতাভস্ম ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। বাবার জন্য এটা করতে চাই আমি।’’
নেতাজির মৃত্যু নিয়ে প্রায় আট দশক ধরে চলে আসা ধন্দ নিয়েও মুখ খোলেন অনিতা। তাঁর কথায়, ‘‘১৯৪৫ সালের ১৮ অগাস্ট আদৌ নেতাজির মৃত্যু হয়েছিল কিনা বলে যাঁদের সন্দেহ, তা দূর করতে রেনকোজি মন্দিরে রাখা চিতাভস্ম থেকে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সংগ্রহ করা প্রয়োজন।’’
৭৭ বছর পরেও নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা হয়নি আজও
নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের সমাধানে স্বাধীনতার পর এখনও পর্যন্ত তিনটি তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে। এর মধ্যে শাহ নওয়াজ কমিশন এবং খোসলা কমিশন দু’টি গঠন করে পূর্বতন কংগ্রেস সরকার। বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্য়ু হয়েছে বলেই রিপোর্ট দেয় ওই দুই কমিটি। কিন্তু বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার গঠিত মুখার্জি কমিশন দাবি করে, বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি বলে। ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নেতাজি সংক্রান্ত ৬৪টি ফাইল প্রকাশ করে। ২০১৬ সালে আরও ১০০টি ফাইল প্রকাশ করে কেন্দ্র। কিন্তু রহস্যের কিনারা হয়নি আজ পর্যন্ত।