নয়াদিল্লি: কার্যকালের মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র কয়েক দিন, তার আগে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক। রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলা নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। জানান, ওই মামলার রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ঈশ্বরের দ্বারস্থ হন বলে জানান। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে রাজনৈতিক মহল থেকে। (CJI DY Chandrachud)
মহারাষ্ট্রের একটি গ্রামে আয়োজিত সভায় রবিবার ওই মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তিনি বলেন, "অনেক সময় এমন কিছু মামলা আমাদের হাতে এসে পৌঁছয়, যার কোনও সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় না। অযোধ্যা (রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলা) নিয়েও একই পরিস্থিতি দেখা দেয়। তিন মাস ওই মামলা নিয়ে কাজ করছিলাম আমি।" (Ram Janmabhoomi-Babri Masjid Case)
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় আরও বলেন, "কী করে সমাধান বেরোবে, মাথায় আসছিল না। ঈশ্বরের সামনে হাতজোড় করে বলেছিলাম, সমাধান ওঁকেই বের করে দিতে হবে। আমি রোজ পুজো করি। ওই দিনও (রায় ঘোষণার দিন) পুজোয় বসে ভগবানের কাছে সমাধান চাই। ঈশ্বরে আস্থা থাকলে, তিনিই রাস্তা বের করে দেবেন বলে বিশ্বাস করি আমি।"
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষণা হয়। তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের যে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রায় শোনায়, তাতে শামিল ছিলেন অধুনা প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ও। অযোধ্যার বিতর্কিত ওই জায়গায় আদালতই রামমন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেয়। অন্যত্র মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ করতে বলা হয়।
ওই মামলা নিয়ে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের এমন মন্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাজনৈতিক মহল। কংগ্রেস নেতা উদিত রাজের বক্তব্য, 'প্রধান বিচারপতি বলছে, অযোধ্যা মামলা নিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন উনি। উনি অন্য কিছু নিয়ে প্রার্থনা করলে, তারও সমাধান বেরিয়ে আসত নিশ্চয়ই, যেমন টাকা না থাকলেও সাধারণ মানুষ যাতে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিচার পেতে পারেন, ED, CBI, IT-র অপব্যবহার বন্ধ হোক'।
সরাসরি নাম না নিলেও, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'কখনও কখনও বেঞ্চ এমন কিছু মন্তব্য করে, যা আদালত অবমাননার ঊর্ধ্বে। সাধারণ আদালত অবমাননার নীতে সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। বিচারপতিরা ভগবান নন, আমাদের সকলেরই তাঁদের বোধবুদ্ধি এবং তার অভাব নিয়ে আলোচনার অধিকার রয়েছে'।
সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব বলেন, "মরা মানুষকে বাঁচিয়ে তুলতে গেলে, ভূত তাড়া করে বেড়ায়। এই ধরনের মন্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। লোকজন যা ইচ্ছে বলে বেড়ান। সবকিছুকেই গুরুত্ব দিতে হবে না কি?" তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে রামগোপাল যদিও দাবি করেন, প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়কে নিয়ে ওই মন্তব্য করেননি তিনি। বাহরাইচের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
তবে কোনও রাখঢাক করেননি রাষ্ট্রীয় জনতা দলের আনজার নইমি। তিনি বলেন, "প্রধান বিচারপতির কাছে জানতে চাই, এটা কী? আপনার তো সংবিধানের সামনে বসা উচিত ছিল, দেশের আইনের বইগুলি থেকে সাহায্য নেওয়া উচিত ছিল। সংবিধানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল আপনার। আপনি মস্ত ভুল করেছেন। সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেননি আপনি।"
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন দলের নেতা ওয়ারিস পাঠান বলেন, "প্রধান বিচারপতির পদ অলঙ্কৃত করে রয়েছেন উনি। আমার মনে হয়, এই ধরনের কথা বলা উচিত নয়। দেশ ধর্মবিশ্বাসের উপর নির্ভর করে চলবে, না সংবিধানের উপর নির্ভর করে চলবে? যদি ধর্মবিশ্বাসের উপর নির্ভর করে চলে, তাহলে আমাদের আস্থার কী হবে? সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলা উচিত। আপনি যে রায় দিয়েছেন, তা নিয়ে কী ভাবা উচিত আমাদের? কী চলছে, কে কার পক্ষে, দেখতে পাচ্ছি আমরা।"
এর আগে, চলতি বছরের জুলাই মাসে অযোধ্যায় রামমন্দির দর্শনে যান প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। সেখানে প্রার্থনা সারেন তিনি। এ বছর ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রামমন্দির উদ্বোধন করেন। সেই অনুষ্ঠানে বলিউডের লোকজনও আমন্ত্রিত ছিলেন।