মুম্বই: লাগাতার প্রাণনাশের হুমকির পর ৫ কোটি টাকা দাবি করা হয়। অভিনেতা সলমন খানকে খুনের হুমকি দেওয়া নিয়ে এবার ক্ষমা চাওয়া হল। লরেন্স বিশ্নোই গ্যাংয়ের সঙ্গে সলমনের শত্রুতায় ইতি টানতে সম্প্রতিই ৫ কোটি টাকা দাবি করে মেসেজ ঢুকেছিল মুম্বই পুলিশের ফোনে। মেসেজ পাঠিয়ে ওই টাকার অঙ্কের কথা জানানো হয়। অন্যথায় সলমনকে খুন হতে হবে বলে দেওয়া হয় হুমকি। আর এবার ওই হুমকি দেওয়ার জন্য ক্ষমা চাওয়া হল। (Salman Khan)


বাবা সিদ্দিকি খুন হওয়ার পর তাই সলমনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল। বান্দ্রায় তাঁর আবাসন থেকে পানভেলের ফার্মহাউজ মুড়ে ফেলা হয়েছিল কড়া নিরাপত্তায়। আর সেই আবহেই সোমবার মুম্বই পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কাছে হোয়াটসঅ্যাপ মারফত মেসেজ ঢুকেছে। পুলিশ জানিয়েছে, যে নম্বর থেকে এর আগে হুমকি এসেছিল, ৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল, সেই নম্বর থেকেই এবার ক্ষমাপ্রার্থনা করে মেসেজ এসেছে। সলমনকে হুমকি দেওয়া ভুল হয়েছে বলে লেখা হয়েছে মেসেজে। (Lawrence Bishnoi)


এর আগে, মুম্বই পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কাছেই হোয়াটসঅ্যাপে হুমকির মেসেজ ঢোকে। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকি খুন হওয়ার পর, গত ১৮ অক্টোবর প্রথম যে মেসেজ ঢোকে, তাতে ৫ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বাবা সিদ্দিকির মতোই পরিণতি হবে সলমনের। বাঁচতে চাইলে ৫ কোটি টাকা দিয়ে বিশ্নোই গ্যাংয়ের সঙ্গে শত্রুতা মিটিয়ে নিন তিনি। 


তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ঝাড়খণ্ড থেকে মেসেজটি পাঠানো হয়। সেই মতো মুম্বই থেকে ঝাড়খণ্ড রওনা দেয় পুলিশের একটি দল। আর তার পরই দ্বিতীয় মেসেজটি ঢুকল। তবে এতে সত্যি সত্যি সলমনের ফাঁড়া কেটে গেল বলে মনে করছেন না তদন্তকারীরা। তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে ওই মেসেজ পাঠানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।


বাবা সিদ্দিকিকে খুনের দায় স্বীকার করেছে বিশ্নোই গ্যাং। সলমনকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, 'বিষয়টিকে মোটেই হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। প্রাণে বাঁচতে চাইলে, লরেন্স বিশ্নোইয়ের সঙ্গে শত্রুতায় ইতি টানতে চাইলে ৫ কোটি টাকা দিতে হবে সলমনকে। টাকা না দিলে বাবা সিদ্দিকির মতোই পরিণতি হবে সলমনের'।


গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্নোই গ্যাংয়ের নিশানায় রয়েছেন সলমন। তবে সাম্প্রতিক কালে তাদের গতিবিধি উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। গত ১২ অক্টোবর সলমনের ঘনিষ্ঠ বাবা সিদ্দিকি খুন হন। সেই খুনের দায় স্বীকার করে বিশ্নোই গ্যাং। সলমনের বাড়ির বাইরে গুলি চলার ঘটনায় ধৃত অনুজ থাপান পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন রহস্যজনক ভাবে মারা যায়। সেই খুনের বদলা নিতে এবং সলমনের ঘনিষ্ঠ হওয়াতেই বাবা সিদ্দিকিকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করে বিশ্নোই গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত শুভম রামেশ্বর লোঙ্কার।


বাবা সিদ্দিকিকে গুলি করে খুনের ঘটনায় দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তৃতীয়জন এবং তাদের হ্যান্ডলারের খোঁজ চলছে এখনও। তবে গোটা ঘটনায় পুলিশ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গুজরাতের জেলে বন্দি লরেন্স কীভাবে নিজের গ্যাংকে নির্দেশ দিয়ে চলেছে, জেল থেকে একের পর এক তার ভিডিও সামনে আসছে কী করে, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। পাশাপাশি, সম্প্রতি কানাডা সরকারের তরফেও মারাত্মক অভিযোগ তোলা হয়। বিশ্নোই গ্যাংয়ের কাজকর্মে ভারত সরকারের, গোয়েন্দাদের মদত রয়েছে বলে দাবি করে তারা। সেই নিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কও তলানিতে এসে ঠেকেছে।


বিশ্নোই সম্প্রদায়ের আরাধ্য কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার ঘটনাতেই সলমনের উপর লরেন্স এবং তাঁর গ্যাং খাপ্পা বলে জানা যায়। তাই লাগাতার হুমকি নিয়ে সলমনকে ক্ষমা চেয়ে নিতেও অনুরোধ করেন কেউ কেউ। কিন্তু সলমনের বাবা সেলিম খান সাফ জানিয়ে দেন, যে অপরাধ করেনইনি সলমন, তার জন্য ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।