নয়াদিল্লি: দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল (Grand Old Party)। স্বাধীনতা আন্দোলনের কাণ্ডারী। অথচ স্বাধীনতার ৭৫ বছরেই চরম অস্তিত্ব সঙ্কট। সেই আবহে এ বার দলের নেতা চয়ন করতে চলেছে দেশের ‘গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি’ কংগ্রেস (Congress)। সোমবার দলের সভাপতি নির্বাচন (Congress President Election)। আর দু’দশকেরও বেশি সময় পর এই প্রথম গাঁধী পরিবারের (Gandhi Family) কেউ সভাপতি হওয়ার দৌড়ে নেই।
সোমবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন
কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার দৌড়ে এ বার মুখোমুখি রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মল্লিকার্জুন খড়্গে (Mallikarjun Kharge) এবং তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ শশী তারুর (Shashi Tharoor)। এখনও পর্যন্ত দৌড়ে যদি খড়্গেই এগিয়ে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ গাঁধী পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তিনি। তার উপর দলিত পরিবার থেকে আসায় তাঁকে সামনে রেখে বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টাও চলছে।
তবে খড়্গেকে সামনে রেখে আসলে আড়াল থেকে গাঁধী পরিবারই সবকিছু পরিচালনা করবে বলেও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই তারুরকে নিয়ে আশার আলো দেখছে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ শিবির। কারণ বাকিদের মতো ঢক্কানিনাদ নেই তারুরের। মেধাদীপ্ত ভাষণ, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ক্ষমতার জন্যও পরিচিত। তাঁর নেতৃত্বে তরুণ ব্রিগেড উজ্জীবিত হবে বলে মনে করছেন দলের একাংশ। তবে খড়্গের পক্ষে যে ভাবে সমর্থন দেখা যাচ্ছে, তাতে কিছুটা হলেও যে তিনি পিছিয়ে, স্বীকার করছেন তারুর নিজেও।
খড়্গে এবং তারুরের প্রচারের কৌশলেও তাই ফারাক স্পষ্ট। একদিকে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর খড়্গে। সভাপতি হলে গাঁধীদের পরামর্শ নিয়েও কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। তাই সনাতনী কংগ্রেসিদের মনজয়ই তাঁর লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে। সেই তুলনায় তারুরের প্রচার সচেতন ভাবেই অনেক বেশি আশানির্ভর। পরাজয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। তার পরও শেষ চেষ্টার তাগিদ রয়েছে।
সোমবার সভাপতি নির্বাচনে ভোটদান করবেন কংগ্রেসের ৯ হাজার ৮৫০ জন প্রতিনিধি। তার আগে গত ১০ দিন ধরে দৌড়ঝাঁপ চলছে খড়্গে এবং তারুরের। মাঠে-ময়দানে তো বটেই, নেটমাধ্যমেও আবেদন-আর্জি জানিয়ে চলেছেন তাঁরা। নিজ নিজ ইস্তাহারও সামনে এনেছেন। সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দফায় দফায়। সেখানে নিজেদের লক্ষ্য, সঙ্কল্প নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন।
রাত পোহালেই নির্বাচন, তার আগে ট্য়ুইটারে ব্যালট পেপারের ছবি পোস্ট করেন তারুর। তাতে জানান, ১, ২ লেখার বদলে ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে টিক মার্ক দিতে পারবেন সকলে। তাঁর শিবিরই এ নিয়ে তদ্বির করেছিল কংগ্রেসের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের কাছে। তাতে খড়্গেকে ১ নম্বর প্রার্থী এবং তারুরকে ২ নম্বর প্রার্থী হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে নামের উল্লেখের দাবি জানান তাঁরা। তাতে সিলমোহর পড়েছে একরাত আগেই।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী দলের সভাপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা ঢের আগেই প্রকাশ করেন। ঘটনাচক্রে কংগ্রেসের অন্দরে বিক্ষুদ্ধ জি-২৩ শিবিরের অংশও ছিলেন তিনি, অভ্যন্তরীণ রদবদল, নয়া সভাপতি নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছিলেন যিনি। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের দায় স্বীকার করে সভাপতি পদ থেকে যখন সরে দাঁড়ান রাহুল, সেই সময় সনিয়াকে লেখা চিঠিতে সংগঠনে রদবদল ঘটানোর আর্জি জানিয়ে লেখা চিঠিতে স্বাক্ষর ছিল শশীরও।
অন্য দিকে, একেবারে অপ্রত্যাশিত ভাবেই সভাপতি হওয়ার দৌড়ে নাম লেখান খড়্গে। এক নেতা, এক পদ নীতির বিরুদ্ধে পেরে না উঠে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান রাজস্থানের মুখ্য়মন্ত্রী অশোক গহলৌত। তার পর দিগ্বিজয় সিংহের নাম উঠে আসে। কিন্তু সকলকে টপকে তারুরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শেষমেশ নাম লেখান খড়্গে। তার পর শুরু হয় প্রচার অভিযান। গাঁধী পরিবারের সমর্থন থাকায় এখনও পর্যন্ত খড়্গের পাল্লাই ভারী বলে মনে করছেন দলের একাংশ। তবে গাঁধীরা নিরপেক্ষ থাকবেন বলেই আশাবাদী তারুর। তবে কারচুপির সম্ভাবনা নিয়েও উদ্বিগ্ন তাঁর শিবির।
তবে প্রথম দলিত হিসেবে কংগ্রেসের রাশ খড়্গের হাতে উঠুক বা দলের নীতি-নিয়মের সমালোচক তারুর বসুন নেতৃত্বে, কংগ্রেসে গাঁধী পরিবার বরাবরের মতো অভিভাবকের ভূমিকাতেই থাকবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রায় আড়াই দশক পর এই প্রথম কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে গাঁধী পরিবারের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন না।
দীর্ঘ ১৭ বছর কংগ্রেস সভাপতি থাকার পর ২০১৭ সালে রাহুলের হাতে দায়িত্ব তুলে দেন সনিয়া।। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের দায় স্বীকার করে সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন রাহুল। তার পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে কংগ্রেসের কাজকর্ম দেখছেন সনিয়া। কিন্তু তার পরও নির্বাচনী রাজনীতিতে সঙ্কটমুক্ত হয়নি কংগ্রেস। বরং একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া হয়েছে তাদের। একের পর এক হেভিওয়েট নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে দল ছেড়েছেন।
দু'দশক পর সভাপতি হওয়ার দৌড়ে নেই গাঁধী পরিবারের কেউ
বিগত কয়েক বছর ধরেই রাহুলকে ফের সভাপতি পদে ফিরিয়ে আনার দাবি তুলছিলেন কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। কিন্তু সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দেন রাহুল নিজেই। তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বাদ দিয়ে নেতাদের ভাবতে হবে বলে জানিয়ে দেন। এর আগে, ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন সনিয়া। তার আগে সীতারাম কেশরীই কংগ্রেসের গাঁধী পরিবার বহির্ভূত শেষ সভাপতি। এ বার খড়্গে এবং তারুরের মধ্যে যে-ই নির্বাচিত হন না কেন, প্রায় আড়াই দশক পর গাঁধী পরিবারের বাইরের কারও হাতে কংগ্রেসের নেতৃত্ব উঠতে চলেছে।