সিমলা : মহামারীর নাগপাশে যেন উধাও মানবিকতা। কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় এক মহিলাকে বাড়িতে ঢোকার অনুমতিটুকু দিলেন না তাঁর বাড়িওয়ালা। বাধ্য হয়ে আড়াই বছরের ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে সেই মহিলাকে আইসোলেশনের জন্য স্থান নিতে হল ট্যাক্সিতে! অমানবিকতার চরম এই নজির হিমাচল প্রদেশের। 


পাহাড়ি রাজ্য হিমাচলের মান্ডি জেলা কারসোগ উপত্যকায় ট্যাক্সি চালান পরশরাম। তিনি ও তাঁর স্ত্রী সিমলায় গিয়েছিলেন কোভিড পরীক্ষা করাতে। যেখানে দেখা যায় পরশরামের স্ত্রী কোভিড পজিটিভ। যদিও কোনও উপসর্গ নেই তাঁর। শারীরিক অবস্থা স্থিতীশীল হওয়ায় তাঁকে হোমে আইসোলেশনে তাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।


কিন্তু বাড়ি ফিরে এসেই বিপত্তি। বাড়িওয়ালাকে গোটা ঘটনা জানাতেই তিনি পরশরাম ও তাঁর পরিবারের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেন। জানিয়ে দেন আপাতত সেখানে ঠাঁই হবে না তাদের। সেই অসহায় অবস্থায় আড়াই বছরের ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বাধ্য হয়ে স্বামীর ট্যাক্সিতেই আইসোলেশনে থাকতে বাধ্য হন মহিলা।


ট্যাক্সিতে আইসোলেশনের প্রায় ৪৮ ঘণ্টা কাটার পর কোনওভাবে স্থানীয় ডিএসপি-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন পরশরাম। ডিএসপি গীতাঞ্জলি ঠাকুর গোটা ঘটনার খবর পেয়েই দ্রুত সেখানে ছুটে যান। যারপর তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে বাড়িওয়ালাকে বোঝানোর পরই ফের তাঁদের নিজেদের ভাড়াবাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হয়। বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবে পরশরামের পরিবারের জন্য ফ্রি-তে রেশন পাওয়ার ব্যবস্থাও করে তিনি।


করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই মুহূর্তে লন্ডভন্ড গোটা দেশ। রোজই সংক্রমিত, মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গোটা দেশে। এই অবস্থায় দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে চলছে লকডাউন। যে তালিকাতে রয়েছে হিমাচল প্রদেশও।


কোভিডের শৃঙ্খল ভাঙার কাজে লকডাউন যথেষ্ট প্রভাবশালী হলেও তা প্রকোপ ফেলেছে অনেকের রুজি-রোজগারে। পরশরামের মতো ট্যাক্সিচালকদের উপার্জনের রাস্তাও বন্ধ। এই অবস্থায় রোগের প্রকোপের মাঝে যেভাবে হেনস্থার মুখে পড়তে হল তাদের, তা আরও ভয়াবহ।


গোটা দেশের একাধিক জায়গাতেই এই কঠিন সময়ে অমানবিকতার খণ্ডচিত্র দেখা গিয়েছে। যদিও উল্টো ছবিটাও স্পষ্ট। কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মনুষত্বের নতুন সংজ্ঞাও গড়ে দেওয়াও দৃষ্টান্তও প্রচুর।