ভদ্রক (ওড়িশা): নির্ধারিত সময়ের আগেই ওড়িশার বালেশ্বরে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সকাল সোয়া ৯টা নাগাদ ভদ্রক জেলার ধামরা বন্দরের গা ঘেঁষে হয় ইয়াসের ল্যান্ডফল। 


ওড়িশা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, ল্যান্ডফলটি ঘটে বালেশ্বর থেকে ৫০ কিমি দূরে ভদ্রক জেলার অন্তর্গত ধামরার উত্তরে এবং বহনাগার দক্ষিণের মধ্যবর্তী অঞ্চলে।  


আবহাওয়া দফতরের সূত্রে জানানো হয়েছে, ডপলার রেডার ডেটা অনুযায়ী, ল্যান্ডফলের সময় ঝড়ের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩০-১৪০ কিমি। সেইসঙ্গে ঝোড়ো বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ কিমি। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ৩ ঘণ্টা ধরে এই ল্যান্ডফল চলবে। 


ল্যান্ডফলের সময় সাইক্লোনের 'আই' অংশটি ঢুকতে শুরু করে স্থলভাগে। এই মাঝের অংশটি ঢোকার সময় ঝড়ের বেগ ও বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। 


টেল অংশটি অতিক্রম করে যাওয়ার সময় ফের ঝড়ের দাপট বাড়বে। বাড়বে বৃষ্টির পরিমাণও। আজ সকালে সাইক্লোনের ক্লাউড ওয়াল ঢুকতে শুরু করায় ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডব শুরু হয়। সঙ্গে চলে তুমুল বৃষ্টি।


ওড়িুশার বিশেষ ত্রাণ-বিষয়ক কমিশনার পিকে জেনা বলেন, ইয়াসের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বালেশ্বর ও ভদ্রক জেলায়। উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে প্রায় ৫.৮ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ শেল্টারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। 


ল্যান্ডফলের সময় ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫৫-১৬৫ কিমি হতে পারে। পাশাপাশি ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি হতে পারে বলে গতকাল পূর্বাভাসে জানিয়েছিল মৌসম ভবন। 


কিন্তু, গতকাল রাত থেকে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টে যায়। রাত ২টোর পর ঝড়র শক্তি বাড়েনি। উপরন্তু, তার গতি কিছুটা স্লথ হয়ে পড়েছিল। ফলে, ঘণ্টায় ১৫-১৬ কিমি গতিতে স্থলভূমির দিকে এগনোর কথা থাকলেও, ইয়াস এগোয় ঘণ্টায় ১২ কিমি গতিতে। 


জেনা জানান, যেহেতু সাইক্লোনের অগ্রগতি কমে যায়, তাই পূর্বাভাসের থেকে কম গতিতে তা আছড়ে পড়ে। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত, কোনও প্রাণহানির খবর মেলেনি। তবে, বহু গাছ উপড়ে গিয়েছে। ঘর-বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। মৎস্যজীবীদের নৌকা ভেঙে গিয়েছে। 


ভুবনেশ্বরে আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানী উমাশঙ্কর দাস বলেন, ওড়িশার বেশিরভাগ এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ভদ্রক জেলায়। সেখানে গত ২৪-ঘণ্টায় ২৭৩ মিমি বৃষ্টি হয়েছে বলে খবর। এছাড়া, পারাদ্বীপে ১৯৭ মিমি, বালেশ্বর ৫১ মিমি ও ভুবনেশ্বরে ৪৯ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। 


মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, ভদ্রক জেলার মোহনপুরে ভয়াবহ ঝড়ঝঞ্ঝা হবে। সমুদ্রের জল ৯ কিমি ঢুকতে পারে। দাস জানান, সমুদ্রের ঢেউ ১.৫ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। তিনি জানান, ভরা কোটালের জন্যই ঝড় এতটা শক্তি সঞ্চয় করেছে।