নয়াদিল্লি: ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় (National Herald Case) এ বার ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান’-এর (Young Indian) দফতর সিল করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (Enforcement Directorate/ED)। এই সংস্থা কংগ্রেস মালিকানাধীন। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলার তদন্তে ওই সংস্থার দফতর সিল করে দিয়েছে ইডি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সাময়িক ভাবে ওই দফতর সিল করা হয়েছে। সংস্থার কোনও কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি, যাঁর উপস্থিতিতে তল্লাশি চালানো যায়। তাই দফতর সিল করে দেওয়া হয়েছে। প্রবীণ কংগ্রেস (Congress) নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেকে এই নিয়ে সমন পাঠানো হয়েছে। সংস্থার তরফে কেউ এগিয়ে এলে, তল্লাশি চালানো হবে এবং দফতর খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইডি। 


দিল্লিতে সনিয়ার বাড়ির বাইরে পুলিশ


এই ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সম্প্রতি কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে (Sonia Gandhi) জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। বুধবার দিল্লিতে তাঁর বাড়ির বাইরে মোতায়েন করা হয়েছে বিরাট পুলিশ বাহিনী।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ নম্বর জনপথে সনিয়ার বাড়ির বাইরে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কংগ্রেসের সদর দফতর যাওয়ার যে রাস্তা, সেটিও আপাতত ব্যারিকেড করে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। 


এই মুহূর্তে দিল্লিতে জরুরি বৈঠকে বসেছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেখানে উপস্থিত রয়েছেন খড়্গে, সলমন খুরশিদ, পবন বনসল, পি চিদম্বরমরা। তাঁদের কার্যত ‘পণবন্দি’ করে রাখা হয়েছে বলে দাবি কংগ্রেস নেতৃত্বের। এ নিয়ে সরব হয়েছেন দলের নেতা জয়রাম রমেশ। ট্যুইটারে তিনি লেখেন, ‘দিল্লি পুলিশ আমাদের সদর দফতর ঘিরে ফেলেছে। ঘিরে ফেলা হয়েছে কংগ্রেস সভানেত্রী এবং প্রাক্তন সভাপতির বাড়িও ঘিরে ফেলা হয়েছে। প্রতিহিংসার রাজনীতির চরম নিদর্শন এটি। এ ভাপে চুপ করানো যাবে না আমাদের। অবিচার এবং মোদি সরকারের ব্যর্থতার নিয়ে প্রতিবাদ চালিয়ে যাব আমরা’।



কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী এ নিয়ে বলেন, ‘‘জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই পটেলরা ন্যাশনাল হেরাল্ডের সূচনা করেন, যাতে দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রানমে শামিল করা যায়। আজ তদন্তকারী সংস্থা ইজিকে কংগ্রেসের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু আমাদের বিরুদ্ধেই নয়, দেশের সমস্ত বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ইডি-কে ব্যবহার করা হচ্ছে।’’


ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রটি অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড (AJL) থেকে প্রকাশিত হত, যার মালিক সংস্থা ছিল ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড। জওহরলাল নেহরু প্রতিষ্ঠিত ওই সংবাদপত্র নিয়ে আগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও,  ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে জলঘোলা শুরু হয়, যার মূল হোতা ছিলেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। আদালতে তিনি জানান, যে এজেএল সংস্থার হাতে সংবাদপত্রটির মালিকানা ছিল, বাজারে ৯০ কোটি টাকা দেনা ছিল তাদের, যার বেশিরভাগটাই কংগ্রেসের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল।





আরও পড়ুন: Partha Chatterjee : পার্থ একা নন দেশ থেকে বিদেশ, জুতোর নিশানায় একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব


আদালতে স্বামী জানান, ২০০৮ সালে সংবাদপত্রটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। সেই অবস্থাতেই মাত্র ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সংস্থাটি অধিগ্রহণ করে কংগ্রেস মালিকানাধীন  ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থা, যার পর ন্যাশনাল হেরাল্ডের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ইয়ং ইন্ডিয়ানের দখলে চলে আসে। আবার ৯০ কোটি টাকা উদ্ধারের বাড়তি সুবিধাও।


ন্য়াশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া-রাহুলকে বার বার জিজ্ঞাসাবাদ


স্বামীর অভিযোগ, ইয়ং ইন্ডিয়ান সংস্থাটিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া এবং রাহুলের ৮৬ শতাংশ টাকার শেয়ার রয়েছে। তা নিয়ে আদালতে স্বামী জানান, নামমাত্র মূল্যে এজেএল তথা ন্যাশনাল হেরাল্ডকে কিনে নিয়ে বিপুল অঙ্কের সম্পত্তির অধিকারী হয়েছে সনিয়া-রাহুলদের সংস্থা ইয়ং ইন্ডিয়ান। দলের টাকাকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে রূপান্তর করা হয়েছে।  শুধু সনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে শুধু নয়, এই মামলায় মতিলাল বোহরা, অস্কার ফার্নান্ডেজ, সুমন দুবে এবং স্যাম পিত্রোদার বিরুদ্ধেও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিপুল টাকার করফঁকির অভিযোগও রয়েছে। এই মামলায় এর আগে সনিয়া এবং তাঁর ছেলে রাহুল গাঁধীকে একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা।