ত্রিথেশ নন্দন, নয়াদিল্লি: নদীমাতৃক দেশ ভারত। একাধিক রাজ্যে জীবনযাত্রার মূল ভিত্তিই নদী। কৃষিপ্রধান দেশ ভারতের (India) দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে নদী। কিন্তু প্রতিবছরই বিভিন্ন সময় ভয়াবহ বন্যা হয় আমাদের দেশে। কখনও সমতলে, কখনও আবার পাহাড়ি এলাকা বানভাসি হয়। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধাক্কায় প্রতি বছরই দেশের কোনও না কোনও জায়গা, সেখানকার জনজীবন প্রবলভাবে বিপর্যস্ত হয়। তার সঙ্গেই বিপুল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে, নষ্ট হয় ফসল, নানা স্তরের পরিকাঠামো, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি। যার ধাক্কা লাগে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতেও। শুধু গ্রামীণ এলাকাই নয়, ভারতের বিপুল পরিমাণ শহর-মফস্বল এলাকাও বন্যাপ্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে। চলতি বছরেই বিধ্বংসী বন্যা হয়েছে অসমে। বন্যায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মেঘালয়েও। একই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেছে দেশের আরও কিছু রাজ্যে।
কতটা ক্ষতি করে বন্যা?
বন্যার ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে একটি তথ্য দিয়েছে নীতি আয়োগ (Niti Aayog 2021)। তাদের তথ্যে বলা হয়েছে, বন্যার ১ শতাংশ বৃদ্ধি হলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ২.৭ শতাংশ।
কিন্তু এত সমস্যার পরেও, ভারতে কি বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ হয়েছে? তথ্য বলছে হয়েছে। কিন্তু সেটা কি প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত? তার উত্তর মিলবে সেই তথ্যেই।
বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাজেট কত?
গত তিন-চার বছর ধরে, প্রতি বছর বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য় ৫০০ কোটি থেকে ৬০০ কোটি টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হচ্ছে। এই পরিমাণ টাকায় রাজ্যগুলিকে শুধুমাত্র টেকনিক্যাল সহায়তা (Technical Support) করা যাবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রকল্প তৈরির জন্যই এই টাকা খরচ হয়ে যাবে। সেই প্রকল্পগুলি রূপায়নের জন্য় এর চেয়ে বহুগুণ বেশি অর্থ প্রয়োজন।
সূত্র: Standing Committee on Water Resources (August 2021)
জাতীয় স্তরে পদক্ষেপ:
ভারতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজের জন্য জাতীয় স্তরে কোনও কমিটি বা পর্ষদ নেই। কোনও রাজ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সেই রাজ্য সরকারের অধীনে থাকে। অনেক সময় বন্যার কারণে একই সঙ্গে একাধিক রাজ্যে প্রভাব পড়ে। ভারতে অনেক নদী একাধিক রাজ্যের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে। এই কারণেই বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও একটি রাজ্য যদি কোনও পদক্ষেপ করে, তাহলে তার প্রভাবে পাশের কোনও রাজ্যে সমস্যা হতে পারে। এই কারণেই বন্যা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনা তৈরি করতে যথেষ্ট সমস্যা হয়।
সূত্র: Standing Committee on Water Resources (August 2021)
ফ্লাডপ্লেইন জ়োনিং (FloodPlain Zoning) এখনও হয়নি?
FloodPlain Zoning কী? ফ্লাডপ্লেইন বলতে বোঝায় নদী অববাহিকার এমন জায়গা যেখানে বন্যা হতে পারে। কোনওসময় বৃষ্টি বেশি হলে অতিরিক্ত জল অববাহিকার বিশেষ কোনও এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায়। FloodPlain Zoning-এর মাধ্যমে নদী অববাহিকার সেই এলাকা চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু ভারতের মতো বন্যাপ্রবণ দেশে সেটা করা হয়নি। যদিও কেন্দ্রের তরফে একটি মডেল ড্রাফট বিল রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি রাজ্যের ক্ষেত্রে কাজ শুরু হলেও এলাকা চিহ্নিতকরণ এখনও কোথাও হয়নি। এই কাজটির মাধ্যমে বন্যা হতে পারে এমন এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে আর্থ-সামাজিক কাজে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অথবা বন্যায় প্রাণহানি বা সম্পত্তিহানি রুখতে নানা পদক্ষেপ করা হয়। কিন্তু বন্যা সবচেয়ে বেশি যেখানে হয়, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ওড়িশায় এখনও Floodplain Zoning নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
সূত্র: Standing Committee on Water Resources (August 2021)
কবে কী সরকারি পদক্ষেপ?
বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারি স্তরে প্রথম কোনও পদক্ষেপ শুরু হয়েছিল ৬৮ বছর আগে, ১৯৫৪ সালে। তারপর একাধিক সময়ে একাধিক কমিশন করা হয়েছে। ১৯৮৭, ২০০২ এবং ২০২১ সালে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য, বন্যার আভাস পাওয়ার মতো বিষয়ে আরও আধুনিক হতে ন্যাশনাল ওয়াটার পলিসিও (National water Policy) আনা হয়েছিল।
কোন এলাকায় বন্যা?
ভারতে কোথায় বন্যা হয়, দেশের কোন এলাকা বন্যা কবলিত তার একটি তথ্য়পঞ্জি অবশ্য তৈরি করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বর্গ আয়োগ (Rashtriya Barh Ayog বা RBA)-এর তথ্য অনুসারে।
ভারতে ৪ কোটি হেক্টর বন্যা এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ এলাকাতেই বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পদক্ষেপ করা যাবে। দেশের ১২ শতাংশ জমি বন্যাপ্রবণ। শহর এলাকাতেও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ৫ হাজার ১৬১টি Urban Local Body বন্যাপ্রবণ বলে সেই তথ্যে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কর্মীদের ঘুষ দিয়ে জেলেই 'বিলাসবহুল' থাকাখাওয়া, অভিযুক্ত সুকেশ চন্দ্রশেখর